বানের পানির মতো আসছে ভারতীয় ইয়াবা ফেন্সিডিল

নওগাঁর পত্নীতলায় মাদকের নীল ছোবলে আসক্ত হয়ে পড়ছে স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিশু কিশোর ও যুবকেরা। মেধাবী শিক্ষার্থীরা স্কুল কলেজ বিরতী দিয়ে মাদকের আড্ডায় মেতে থাকছে তারা। রাস্তা ঘাটে মাদকাসক্ত শিশু কিশোরদের অবস্থা দেখে অভিভাবক রয়েছেন ব্যাপক দুচিন্তায়। হাজারো চেষ্টা করে তাদের মাদকাসক্ত শিশু কিশোরদের ফিরিয়ে আনতে পারছেন না। সমভ্রান্ত পরিবারের সন্তান হয়েও নেশা টাকা জোগাড় করতে চুরি ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে তারা।

অভিজ্ঞ অভিভাবক মহল জানায়, পত্নীতলার শত শত শিশু-কিশোর ও উঠতি বয়সী যুবক-যুবতীরা নেশায় জড়িয়ে পড়েছে। এর অন্যতম করণ মাদক দ্রব্যের সহজলভ্যতা। অজ্ঞাত কারণে মাদকের ভয়বহ ছোবল থেকে শিশু কিশোরদের সোনালি ভবিষ্যৎ বাঁচাতে প্রশাসনের কঠোর অভিযান নিয়মিত অব্যাহত থাকা জরুরি বলে মনে করছেন। সরকারি বেসরকারি বা কোন এনজিও সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানায়, অল্প বয়সী শিশু কিশোররা মাদকাসক্ত হওয়ার কারণে যে কোন সময় তারা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতে পারে। ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে লিভার, কিডনি ও পাকস্থলি। অপ্রাপ্ত বয়সে মাদকাসক্ত শিশুর ক্ষেত্রে বিষণতা দেখা দিতে পারে। সৃষ্টি হতে পারে সমাজ জীবনে নিজেকে আড়াল করার প্রবণতা। ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায় এতে আত্মহত্যার প্রবণতা।

একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, মাদকাসক্ত এসব শিশু কিশোররা অনায়াসে বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িয়ে পড়ছেন। এতে মনোযোগ হারাচ্ছেন পড়াশুনার প্রতি। কাজের প্রতি অনিহা আর চলাফেরায় অস্বাভিকতা দেখা দিচ্ছে।

অনসন্ধানে জানা যায়, এলাকায় মাদকের মধ্যে ভারতীয় ইয়াবা (বাবা), ফেন্সিডিল, গাঁজা, চোলাই মদসহ সিগারেট জাতীয় দ্রব্য সহজেই পাওয়া যাচ্ছে এই জনপদে। আইন আছে বাস্তবায়ন নেই, অভিভাবক আছে কিন্তু দেখার কেউই নেই। যার ফলে মাদক বিক্রেতারা ধরাছোঁয়ার বাহিরে আর নামে মাত্র প্রশাসনের অভিযানে ধরা পড়ছে মাদকসেবীরা।

একাধিক অভিজ্ঞ মহল জানিয়েছেন, থানা পুলিশের সাথে ব্যবসায়ীর সখ্যতা থাকায় দিদারছে কৌশলে স্থায়ী ও ভ্রাম্যমাণ ভাবে ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। এছাড়া অভিনব কায়দায় ব্যবসায়ীরা চায়ের স্টলে এনার্জি ডিংক ওয়াটার বোতলে পরিবহন ও ধারণ করে বিক্রয় করছেন। অধিকাংশ মাদক ব্যবসয়ী মাদক সেবীদের মুঠোফোনের ডাকে সাড়া দিয়ে নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে দিচ্ছেন বলেও একাধিক সুত্র নাম না করার সত্বে জানায় । বর্তমানে এলাকায় ফিন্সিডিল এর তুলনায় বেশি বিক্রয় হচ্ছে পরিবহন সহজলভ্য ইয়াবা। স্কুল কলেজ পড়ুয়া মাদকসেবী শিক্ষার্থীরা বাড়ির বাহিরে গভীর রাত পর্যন্ত অবস্থান ও আড্ডায় মেতে উঠছেন। এলাকায় ফেন্সিডিল প্রতি বোতল ৩০০-৩৮০ টাকা ও ইয়াবা প্রতি পিচ ২০০-২৬০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে।

৯ম শ্রেণির স্কুল ছাত্র অমৃত কুমার সাহা (অলখ) এর সঙ্গে কথা হয়, সে জানায়- দেড় বৎসর আগে সিগারেট পান শুরু করে পরবর্তিতে ফেন্সিডিল ইয়াবা গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরণের মাদক সেবন করেন। নেশার টাকা না পাওয়ায় চুরি করে, বর্তমানে অর্থ সাশ্রয়ের জন্য কোল্ড ড্রিংক ওয়াটার মধ্যে অতিরিক্ত পরিমাণ ঘুমের ট্যবলেটসহ কাশি জাতীয় সিরাপ মিশ্রণ করে পান করে থাকেন।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী অভিভাবক মহল তাদের সোনার সন্তানদের বাঁচাতে মাদকের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযানের ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
পত্নীতলা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রফিক বলেন, মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিদিন অভিযান অব্যাহত রয়েছে। থানা পুলিশ এ ব্যাপারে সতর্ক অবস্থানে ভূমিকা পালন করছেন।



মন্তব্য চালু নেই