বাঙালি পুরুষ যে “মিথ্যা” গুলো বলে থাকেন প্রেমিকার সাথে!

পুরুষ মাত্রই মিথ্যার ফুলঝুরি”… না, আমরা বলছি না। তবে বেশিরভাগ নারী তেমনটাই মনে করেন। নিজের একদম ঘনিষ্ঠ পুরুষটিকেও নারীরা কখনোই যেন পুরোপুরি বিশ্বাস করে উঠতে পারেন না। অবশ্য এজন্য নারীকে দোষারোপ করে লাভ নেই, দোষ আছে পুরুষেরও। প্রেমের সম্পর্কে কমবেশি মিথ্যা নারী-পুরুষ উভয়েই বলে থাকেন। লিঙ্গ ও পরিস্থিতি ভেদে বদলে যায় মিথ্যার ধরণ-ধারণ। আবার অনেক ক্ষেত্রে তারা বুঝতেও পারেন না যে কথাটা বলে হয়তো মিথ্যাচার করা হচ্ছে।

আজ রইলো সেই মিথ্যা গুলোর ব্যাপারে, যেগুলো কমবেশি সকল বাঙালি পুরুষই বলে থাকেন নিজের স্ত্রী বা প্রেমিকার সাথে। কখনো প্রেমিকার মন জয় করতে বলেন , কখনো বলেন নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ জাহির করতে, কখনো আবার সম্পর্ক ভাঙতেও। একেকটা মিথ্যার অন্তরালে কাজ করে একেক রকম জটিল চিন্তা ভাবনা।

তুমি ছাড়া কাউকে ভালো লাগেনি এর আগে-
বেশিরভাগ পুরুষ নারীর মন জয় করার জন্য এই মিথ্যা অবশ্যই বলে থাকেন। যখনই কোনো নারীর প্রেমে পড়ে যান, পটাবার কৌশল হিসাবে প্রথমেই বলেন যে “তোমাকে ছাড়া কাউকে ভালো লাগেনি” , কিংবা “তোমার মত কাউকে দেখিনি আগে”। যদিও সত্য এটাই যে নারীদের তুলনায় পুরুষেরা অনেক বেশিবার প্রেমে পড়েন ও বেশ ঘনঘন পড়েন। কিন্তু ব্যাপারটা কখনোই বর্তমান প্রেমিকা বা স্ত্রীর সামনে স্বীকার করেন না তারা। সম্ভবত প্রেমিকার অতিরিক্ত প্রশ্নবাণ হতে বাঁচার জন্যই।

আমার পরিবার তোমাকে মেনে নিচ্ছে না-
প্রেম করেছে, কিন্তু বিয়ে করতে চায় না… এসব ক্ষেত্রে সম্পর্ক ভাঙতে পুরুষের মোক্ষম অস্ত্র হচ্ছে পরিবারের বাহানা। পরিবার মেনে নিচ্ছে না প্রেমকে- এমনটা শোনার পর বেশিরভাগ মেয়েই সম্পর্ক ভেঙে ফেলে, ফলে ছেলেটিকে আগ বাড়িয়ে সম্পর্ক ভাঙার দায় নিতে হয় না। এতে ইমেজ যেমন পরিষ্কার থাকে, তেমনই বিয়ে করার দায় থেকেও মুক্তি মেলে। এই একবিংশ শতাব্দিতেও বাঙালি পুরুষ নারীকেই ছলনাময়ী সাজাতে ভালোবাসে, এমনকি তার নিজের দোষ থাকলেও। প্রেমিকাও সারা জীবন এটা ভেবে বসে থাকে যে প্রেমিক তাকে অনেক ভালোবাসতেন, শুধু পরিবারের কারণে পারলেন না বিয়ে করতে। যদিও সত্য এটাই যে, একজন পুরুষ যখন কোনো নারীকে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসেন, তখন যে করেই হোক তাকে নিজের জীবন সঙ্গিনী রূপে পাওয়ার সমস্ত চেষ্টা করে থাকেন।

আমার মা পৃথিবীর সবচাইতে সরল মহিলা-
এই কথাটা পৃথিবীর অন্তত ৮০ ভাগ বাঙালি পুরুষ নিজের প্রেমিকা বা স্ত্রীকে বলে থাকেন। পৃথিবীতে সকল মানুষ এক রকম হয় না, বা সকল মানুষই খুব ভালো হয় না। আবার মা মাত্রই সন্তানের চোখে ভালো, তাই সব সন্তানই মায়ের প্রশংসা করে থাকে। অদ্ভুত ব্যাপারটা হচ্ছে, পুত্র যদি জেনেও থাকে যে তার মা খুব রাগী ও কুটিল প্রকৃতির, তবুও তারা প্রেমিকার সামনে মা-কে সরল বলবেই। এমনকি তার নিজের সাথে মায়ের সম্পর্ক খারাপ হলেও ছেলেরা প্রেমিকা ও স্ত্রীর সামনে মাকে একজন সরল মহিলা হিসাবেই দাবী করে থাকে। তবে না, এটা কিন্তু মায়ের প্রতি ভালোবাসা থেকে নয়। বরং বাঙালি পুরুষ এটা বলে প্রেমিকার চোখে নিজেকে মাতৃভক্ত প্রমানের জন্য। কেননা আমাদের সমাজে প্রচলিত ধারণা এটাই যে মা ভক্ত ছেলে মানেই ভালো মানুষ।

বন্ধুরা আমাকে কী রকম সম্মান করে জানো?
যে ছেলেটি হয়তো বন্ধু মহলে মোটেও পাত্তা পায় না কিংবা সবার হাসি-তামাশার পাত্র, সেই ছেলেটিও প্রেমিকার সামনে এমন ভাব করবে যে বন্ধু মহলে সে-ই সবচাইতে জনপ্রিয়। এর পেছনে একটাই কারণ, নিজেকে জাহির করা। সমাজে মাথা উঁচু করে চলতে পারা ছেলেদেরকেই যে বেশি পছন্দ করে থাকে নারীরা।

অফিস আমাকে ছাড়া চলবেই না-
অফিসে একদম ছা পোষা কেরানীটিও স্ত্রী বা প্রেমিকার সামনে জাহির করে যে অফিস তাকে ছাড়া চলবে না , কিংবা বস তাকেই সবচাইতে বেশি পাত্তা দিয়ে থাকেন। আর এসব বলার পেছনে কারণ ওই একটাই, নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ একটা কিছু হিসাবে তুলে ধরা।

আমি মেয়েদের অত পাত্তা দেই না-
এই কথাটাও প্রায় সব ছেলেই মেয়েদেরকে বলে থাকে। আমি মেয়েদেরকে পাত্তা দেই না কিংবা মেয়েরা আমার পিছনে ঘোরে- এইসব বলে নিজেকে খুব চরিত্রবান ও ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন প্রমাণ করতে চায় ছেলেরা। কিন্তু সত্যটা হচ্ছে, পৃথিবীর সমস্ত পুরুষই কমবেশি নারীদের পেছনে ঘুরে থাকেন।

আমার কাছে মনটাই আসল, চেহারা নয়-
এটাও বাঙালি পুরুষের খুব গড়পড়তা একটি মিথ্যা। ছেলেরা নিজেরাও জানে যে এই কথাটি সত্য নয় মোটেই। কোনো মেয়ের মাঝে সর্ব প্রথম তারা কেবল চেহারা বা শারীরিক সৌন্দর্যটাই দেখে থাকে। কিন্তু পছন্দের নারীর কাছে অবশ্যই তারা এটা দাবী করে যে চেহারার কোনো মূল্য নেই তার কাছে। এই দাবী করে মূলত বাঙালি পুরুষেরা নিজেদেরকে অত্যন্ত রুচিশীল মনের অধিকারী প্রমাণ করতে চান।



মন্তব্য চালু নেই