বাঘেরও মন আছে

বাঘেরও তো আছে মন। পুরোনো প্রেম হারিয়ে তাই কাতর তার বিশাল-হৃদয়। ভারতের আলিপুর চিড়িয়াখানার বিশাল হৃদয়ের এই বাঘপুরুষের নামও ‘বিশাল’। আলিপুর চিড়িয়াখানায় তার সঙ্গী বাঘিনীর নাম ‘রূপা’। ছোট থেকে একসঙ্গেই বড় হয়েছে ‘বিশাল’ ও ‘রূপা’। এখন রূপার বয়স ১১, আর বিশাল এক বছরের ছোট।

বাবা-মা এক হওয়ায় তাদের মেলামেশা ভালো চোখে দেখেনি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। তাই আলিপুর চিড়িয়াখানার এই সাদা বাঘ দুটি যৌবনপ্রাপ্ত হওয়ার পরই প্রেমে নেমে আসে নিষেধাজ্ঞা। দুটি আলাদা খাঁচায় পাশাপাশি তাদের রাখা হয়। বিশাল আর রূপার মেলামেশা বহুদিন বন্ধ হয়ে গেলেও দেখা-সাক্ষাৎ হতো। এবার সেটুকুও বন্ধ হয়ে যাবে। কিছুদিনেই ওডিশার নন্দনকানন থেকে পাত্র আসবে। তার পরেই ‘রূপা’ আর তার নতুন সঙ্গীর জন্য বরাদ্দ হবে নতুন খাঁচা। প্রিয় সঙ্গিনীকে অন্যের সঙ্গে দেখে হয়তোবা বেদনায় আরো ভারী হয়ে উঠবে ‘বিশাল’ এর বুক।

ডিরেক্টর আশিস কুমার সামন্ত জানান, ভবিষ্যতের কথা ভেবেই ওদের আলাদা রাখা হয়েছে। বিশাল ও রূপা একই মা-বাবার সন্তান হওয়ায় তাদের মিলনে যে সন্তান জন্মাবে, তার জিনগত সমস্যা হতে পারে। তাই একটু বড় হওয়ার পরে রূপার প্রতি বিশাল আকৃষ্ট হচ্ছে দেখে আলাদা খাঁচায় রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এক সমস্যা এড়াতে গিয়ে অন্য সমস্যায় চিড়িয়াখানার কর্তারা। আলাদা হওয়ার পরে অন্য কোনো বাঘিনীর দিকে ফিরেও দেখেনি ‘বিশাল’। বেশ কয়েকবার চিড়িয়াখানার কয়েকটি সাধারণ বাঘিনীর সঙ্গে বিশালের মেলামেশার সুযোগ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু প্রতিবারই ‘বিশাল’ প্রত্যাখ্যান করেছে সঙ্গিনীদের। কিন্তু চিড়িয়াখানায় বিশালের সঙ্গিনী হওয়ার মতো সাদা বাঘিনী নেই। অনন্যা নামে একটি সাদা বাঘিনী থাকলেও সে দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ। চিড়িয়াখানার এক কর্মীর সহাস্য মন্তব্য, ‘একেবারে সাহেব বাঘ “বিশাল”। সাদা চামড়া ছাড়া কিছুই মনে ধরে না।’

আশিস কুমার সামন্ত বলেন, ‘বিশালটা আরো একা হয়ে যাবে। কিন্তু কিছু করার নেই। আমরা সাদা বাঘিনী পাচ্ছি না।’

রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্য বনপাল অতনু রাহা জানান, জঙ্গলেও বাঘেরা অনেক ক্ষেত্রে ভাই-বোনে মেলামেশা করে। তবে বাঘেরা যেহেতু বড় হয়ে আলাদা জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে, তাই যৌনসঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাদের অনেক বিকল্প থাকে। একই পরিবারের মধ্যে প্রজননের সম্ভাবনাও কমে যায়। তিনি জানান, চিড়িয়াখানায় জীবজন্তু রাখার কিছু নিয়ম বেঁধে দিয়েছে ‘সেন্ট্রাল জু অথরিটি’। সাদা বাঘ জাতীয় বিরল প্রাণীদের প্রজননেও কিছু কড়াকড়ি আছে। তিনি বলেন, ‘প্রজননের জন্য যখন যথেষ্ট বাঘ রয়েছে, তখন ভাই-বোনে প্রজনন ঘটিয়ে জিনগত বৈচিত্র্য কমানোর কী দরকার?’

তথ্যসূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা



মন্তব্য চালু নেই