বাইসাইকেল স্টান্টিং নিয়ে কিছু কথা…

আর.আর.জেড আজহার চৌধুরী: আজকাল সাইকেলকে অনেকেই দৈনন্দিন যানবাহন হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। কারণ, সাইকেল গাড়ির তুলনায় অর্থসাশ্রয়ী। সাইকেল পরিবেশ দূষণ করে না। এছাড়া আমাদের দেশের যানজটের জন্য অনেকেই সাইকেল ব্যাবহার করেন কমসময়ে গন্তব্য স্থানে পৌঁছাবার জন্য। এই সাইক্লিস্টদের কেন্দ্র করেই চার বছর আগে সাইক্লিস্টদের একটি গ্রুপ, বিডিসাইক্লিস্টস গড়ে উঠেছিলো। আজ তারা দেশের সবচেয়ে বড় সাইকেল প্লাটফর্ম। গ্রুপটির মেম্বারের সংখ্যা ৫৫০০০ ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিমাসে তারা বিভিন্ন সাইকেলকেন্দ্রিক বিভিন্ন ইভেন্ট আয়োজন করে, যাতে নানাবয়সি মানুষ যোগ দেয়।

তরুন প্রজন্মও আজকাল মটরসাইকেলের বদলে সাইকেল বেছে নিচ্ছে যানবাহন হিসেবে। তাদের মধ্যে একটা অংশ শুধু সাইকেল চালিয়েই সন্তুষ্ট থাকছে না, সাইকেল বিশেষ কায়দায় চালানো শিখছে যা স্টান্টিং নামে পরিচিত। যারা স্টান্ট করে তাদের স্টান্টার বলা হয়। স্টান্টারদের সাইকেলের ওপর কনট্রোল সাধারণ সাইকেল আরোহীর থেকে বেশি থাকে। বিদেশেও, বিশেষ করে পোল্যান্ড ও ভারতেও সাইকেলে স্টান্ট করা হয়। তবে ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের স্টান্টিং অনেক বেশি অরগানাইজড। কিন্তু বাংলাদেশে এখনও সাধারণ মানুষ স্টান্ট করাটা ভালভাবে গ্রহণ করতে পারেনি। কারণ, স্টান্টারদের মধ্যে অনেকে উচ্ছৃঙ্খল স্বভাবের হয়। তারা ব্যস্ত রাস্তার মধ্যে বিপ্পজ্জনক গতিতে স্টান্ট করে থাকে। তাদের দেখে সাধারণ মানুষ ধরে নেয়, সব স্টান্টার একই স্বভাবের। কিন্তু স্টান্টারদের মধ্যে অধিকাংশই খালি রাস্তায় নিরাপদ পরিবেশে স্টান্ট করে। তবে এ নিয়েও সাধারণ মানুষ অভিযোগ করে। তাদের অভিযোগ, এতে নাকি এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয়। এবং তাদের পরামর্শ, স্টান্ট নাকি মাঠে করা উচিত। কিন্তু, মাঠে ঘাস ও উঁচুনিচু মাটিতে সাইকেল চালানোই কঠিন, স্টান্ট করা অসম্ভব।

আপনি নিশ্চয়ই জানেন, বাংলাদেশে যেসব এলাকায় মাঠ নেই, সেখানে রাস্তার মধ্যে ছেলেরা ক্রিকেট,ফুটবল খেলে। আর গোটা বাংলাদেশে স্টান্ট করার জন্য নির্দিষ্ট কোনও জায়গা নেই। তাই স্টান্টাররা রাস্তায়ই স্টান্ট করে। বিদেশে বাইক এবং সাইকেল স্টান্টারদের স্পন্সর করা হয়, তাদের জন্য আলাদা জায়গা দেয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশে স্টান্টাররা স্পন্সরতো দুরের কথা, স্টান্ট করার জন্য স্থায়ী একটা জায়গাও পায়না। আর, এলাকার পরিবেশ যদি নষ্ট হয় স্টান্ট করার জন্য, তাহলে, এলাকাবাসীরা যেখানে সেখানে কফ-থুতু ফেলে, সিগারেট ধরিয়ে এলাকার পরিবেশ কম দূষণ করে না। অনেকে বলে, “কি দরকার এসব করার, হাত পা ভাংবে।এসব ছেড়ে ফুটবল ক্রিকেট খেলো”।

ফুটবল- ক্রিকেট খেলতে গিয়েও হাত পা ভাংতে পারে। কেউ যদি এসব খেলায় পারদর্শী না হয়, কিংবা আনন্দ না পায়, তাহলে তাকে বাসায় বসে থাকতে হবে। কিংবা বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডা দিয়ে সময় নষ্ট করতে হবে। এর ফলে সে খারাপ বন্ধুর পাল্লায় পড়ে বিনোদনের জন্য ড্রাগ নেয়া শুরু করতে পারে। অন্যদিকে, সে যদি বাইসাইকেলে স্টান্ট করে, তাহলে তার অন্য কোনও ধরণের বিনোদনের দরকার হবে। স্টান্টই হবে তার নির্মল বিনোদনের উৎস। এর ফলে শরীরও ফিট থাকবে।

স্টান্টারদের আরেকটা কথা প্রায়ই শুনতে হয়, “বড় হয়ে কি সার্কাসে চাকরি করবে?”

সার্কাসের চাকরি যথেষ্ট সম্মানজনক চাকরি। তাছাড়া সার্কাসে চাকরি করা ছাড়াও স্টান্ট করে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হওয়া যায়। ভারতে এখন থেকে ৭ বছর আগে ৫জন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার চাকরি ছেড়ে প্রফেশনালি স্টান্ট করা শুরু করেছিলো। আজ তারা ভারতের সবচেয়ে বড় বাইক স্টান্টার গ্রুপ- গোস্ট রাইডারজ। বিখ্যাত কোমল পানীয় প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মাউন্টেন ডিউ তাদের স্পন্সর করে। সবচেয়ে বড় কথা, ভারতে স্টান্টকে পেশা হিসেবে নেয়া গ্রহণযোগ্য করার জন্য তাদের অবদান অপরিসীম।

সাইকেল স্টান্টারদের বিরুদ্ধে আরেকটা অভিযোগ আছে, তারা সেফটি গিয়ার পড়ে স্টান্ট করে না। দেশের সবচেয়ে বড় সাইক্লিস্ট গ্রুপ বিডিসাইক্লিস্টসও প্রথম দিকে হেলমেট পড়তো না? তাদের গ্রুপে একটা এক্সিডেন্টে একজন মারা যাওয়ার পর থেকে তারা রাইডে হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক করেছে। তাছাড়া বিডিসি গ্রুপে তখন সেফটি সম্পর্কে সচেতন, অরগানাইজড মানুষেরা গ্রুপটা চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো (এখনও যাচ্ছে)। সেজন্যই বিডিসি(বিডিসাইক্লিস্টস) দেশের সবচেয়ে বড় গ্রুপ এখন।

অন্যদিকে, স্টান্টারদের বেশীরভাগই প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়ায় তাদের কেউ হেলমেট পড়তে উৎসাহিত করেনি, কেউ তাদের সঠিক পথে গাইড করেনি। তাই তারা সেফটি গিয়ার পড়তে উৎসাহ পায়না। লম্বা পোস্টের জন্য দুঃখিত। এতক্ষন ধরে যারা ধৈর্য ধরে লেখাটা পড়েছেন, তাদের ধন্যবাদ। এই পোস্টের মাধ্যমে ১জনের দৃষ্টিভঙ্গিও যদি বদলাতে পারি, সেটাই আমার অর্জন।



মন্তব্য চালু নেই