বাংলাদেশে সার্ভার বসাতে সম্মতি জানিয়েছে ফেসবুক

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংগঠিত সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশে সার্ভার বসাতে প্রাথমিক সম্মতি জানিয়েছে ফেসবুক। সোমবার বিটিআরসির নতুন চেয়ারম্যানের সাথে সাংবাদিকদের মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানিয়েছেন সংস্থাটির লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম শহীদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি ফেসবুকের মতো সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে অনেক ধরনের অপকর্ম হচ্ছে। এসব বন্ধ করতে এরই মধ্যে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। তাদেরকে বলা হয়েছে বাংলাদেশে একটি সার্ভার বসাতে। ফেসবুক এতে প্রাথমিকভাবে সম্মতি জানিয়েছে। এটা সম্ভব হলে অনেক অভিযোগের সমাধান হবে’।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হয়রানি বা একাউন্ট হ্যাক নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসার মুখে পড়েন বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ। সাইবার নিরাপত্তায় কী উদ্যোগ নেওয়া হবে- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “ইউএসএতে হ্যাকিং সংখ্যা অসংখ্য, সেখানে টেলিফোনে তেমন ঝামেলা নেই আড়িপাতা ছাড়া, তবে এখানে (দেশে) সিকিউরিটি বিষয়টি মোবাইল ফোনে বেশি। এখানে এমটিএসসি রয়েছে, তাদের সাথে যোগাযোগ করে কীভাবে সহযোগিতা করা যায়, তা দেখা হবে।”

একই বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন বিটিআরসি সচিব সরওয়ার আলমও। সাংবাদিকদের সাথে আলোচনা সভায় সচিব বলেন, বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এ বিষয়ে সরকারি পর্যায়ে ‘মিউচুয়াল এগ্রিমেন্ট’ নিয়ে আলোচনা করছে। এই চুক্তির ফলে সমস্যা অনেকাংশে কমার আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যম যুক্তরাষ্ট্রতে রয়েছে, তাই চুক্তি হবে এ বিষয়ে সুবিধা হবে।”

এর আগে গত বছর ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশে ফেসবুক ও গুগলের অ্যাডমিন প্যানেল বসাতে উভয় প্রতিষ্ঠানের কাছে আবেদন করে বিটিআরসি। তৎকালীন সারওয়ার আলম জানিয়েছিলেন, গুগল ও ফেসবুকে অ্যাডমিন প্যানেল বসাতে সমঝোতা স্মারক সইয়ের জন্য আবেদন করা হয়েছে। এখন তাদের উত্তরের অপেক্ষা করা হচ্ছে। এই স্মারক সই হলে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও ফেসবুক ও গুগলের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য পাবে এবং ক্ষতিকর উপাদান বন্ধে সহজে ব্যবস্থা নিতে পারবে।

গত বছর ডিসেম্বরে বিটিআরসির কমিশন বৈঠকে ফেসবুক ও গুগলের অ্যাডমিন প্যানেল স্থাপনে আবেদনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভার প্রতিবেদনে বলা হয়, কোনো ওয়েবসাইট কিংবা ব্লগে সাইবার অপরাধের ঘটনা ঘটলে কিংবা ক্ষতিকর কোনো উপাদান সংযুক্ত করা হলে, তার বিরুদ্ধে সহজেই ব্যবস্থা নেওয়া যায়। ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ের মাধ্যমে সহজেই ওই ওয়েবসাইট কিংবা ব্লগের লিঙ্ক বন্ধ করা যায়। এ ধরনের প্রায় এক হাজার লিঙ্ক বন্ধ করা হয়েছে। তবে ফেসবুক কিংবা গুগল পরিচালিত ইউটিউবের কোন লিঙ্ক এককভাবে বন্ধ করা যায় না। এক লিঙ্ক বন্ধ করতে গেলে পুরো ডোমেইন বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সাধারণ ব্যবহারকারীরা ফেসবুক ব্যবহার থেকে বঞ্চিত হন। বাংলাদেশের সঙ্গে সরকারি পর্যায়ে ফেসবুক কিংবা গুগলের কোনো সমঝোতা স্মারক বা চুক্তি না থাকায় ফেসবুকের কাছে তথ্য চাওয়া হলেও তা তারা দেয় না। গুগলের কাছে কোন ইউটিউব লিঙ্ক বন্ধের আবেদন জানানো হলে তারা আমলেই নেয় না। এ কারণে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ফেসবুক এবং গুগলের অ্যাডমিন প্যানেল স্থাপনের জন্য আবেদনের সিদ্ধান্ত হয়। সেই অনুযায়ী আবেদন পাঠানো হয় এবং আবেদনে টেলিযোগাযোগ আইন অনুযায়ী বিটিআরসি যে রাষ্ট্রীয় স্বাধীন সংস্থা তাও উল্লেখ করা হয়।

এদিকে গত বছর ১৭ মে ফেসবুকের সদর দফতর পরিদর্শন শেষে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ফেসবুক পরিচালকদের বাংলাদেশ সফর করার আমন্ত্রণ জানান। পরিদর্শন শেষে ফেসবুকের হেড অব পলিসি প্রোগাম লিসা ফস্টার ও ফেসবুকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাদের সাথে বৈঠক করেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল। সে সময় জানা যায়, ফেসবুক বাংলাদেশে তাদের আঞ্চলিক অফিস করবে। এ দেশে মূলত সেলস অফিস খোলার মাধ্যমে ফেসবুক বিভিন্ন বিজ্ঞাপন সেবা বিক্রি করবে। ফেসবুকের সাথে ওই বৈঠকে বাংলা ভাষায় ফেসবুক, বাংলাদেশে আঞ্চলিক অফিস স্থাপন ও স্থানীয়ভাবে গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে লোকাল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করে দেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য জনপ্রিয় অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক ফেসবুক-এ শিক্ষা সহায়ক টুলস প্রচলনের আহ্বান জানান বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল।

বৈঠকে বাংলাদেশের ফেসবুক ব্যবহারকারী সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ, আউটসোর্সিংকে ফেসবুক মিডিয়ার সাথে ট্যাগ করা এবং ফেসবুকের মাধ্যমে ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের সম্পৃক্ত করে বিকিকিনির পদ্ধতি সংযুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়। সভায় ফেসবুক বাংলাদেশে তার কার্যক্রম শুরু করলে বাংলাদেশ সরকার অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে চালু করে দেয়া হবে বলে জানান আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। ফেসবুকে বাংলাদেশের তরুণদের আগ্রহ এবং বহুমুখী ব্যবহারে বাংলাদেশে কিভাবে ফেসবুক জনপ্রিয় হচ্ছে তা তুলে ধরেন তিনি। পলক বলেন, আগামী ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ কোটিতে পৌঁছাবে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ৫ কোটি ইন্টারনেট গ্রাহকের মধ্যে শুধু ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১ কোটি ৭০ লাখ। বাংলাদেশে ফেসবুকে ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সী ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৭ শতাংশ এবং ১৮ থেকে ২২ বছর বয়সীদের হার ৪২ শতাংশ। দেশে গত বছর একই সময়ে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১ কোটি। এর মধ্যে ৮২ লাখ পুরুষ এবং ২২ লাখ নারী ছিল। শুধু ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সীর সংখ্যা ছিল ৭৪ লাখ। এর আগে গত বছর ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশে ফেসবুক ব্যবহারকারী ছিল ৭০ লাখ। এর মধ্যে ৫৬ লাখ অর্থাৎ প্রায় ৮০% পুরুষ। অন্যদিকে ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারিতে বাংলাদেশে ফেসবুকের ব্যবহারকারী ছিল ৩৩ লাখ ৫২ হাজার ৬৮০ জন। ১৩ আগস্ট ২০১৩ ফেসবুকে বাংলাদেশের ব্যবহারকারীর সংখ্যা হয় ৫৪ লাখ। এর মধ্যে ৪২ লাখ পুরুষ এবং ১২ লাখ মহিলা। জুন মাসের ৫ তারিখে এই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৩০ লাখ ও ৮ লাখ। সেই সময় মাত্র ৬৮ দিনের ব্যবধানে প্রায় ১৬ লাখ ব্যবহারকারী বৃদ্ধি পায়। সেই সময়ে মূল মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে ফেসবুকের নাম এসেছে।



মন্তব্য চালু নেই