বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থায় দরিদ্র ও অদরিদ্রদের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য

বাংলাদেশে প্রাথমিক স্তরের ক্ষেত্রে অর্জন কিছুটা ইতিবাচক হলেও মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় দরিদ্র ও অদরিদ্রদের মধ্যে ব্যাপক ফারাক রয়েছে। যেখানে মাধ্যমিক শিক্ষায় দরিদ্রদের অবস্থান অদরিদ্রদের চেয়ে ৩১ শতাংশ নিচে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মূল্যায়ন ও বিশ্বব্যাংকের শিক্ষাবিষয়ক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সেখানে শিক্ষার সঙ্গে দেশের শ্রমশক্তির সম্পর্ক এবং অর্থনীতিতে এর প্রভাব বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

বিশ্বব্যাংক বলছে, স্কুলে যাওয়ার উপযুক্ত শিক্ষার্থী মূলত দারিদ্র্যের কারণেই স্কুলের বাইরে থেকে যাচ্ছে। এ কারণে শিশুদের ঝরে পড়ার হারও বেশি। দারিদ্র্য দূর করা বাংলাদেশের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মনে করে সংস্থাটি। শিক্ষা ক্ষেত্রে যে ক’টি চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তা অতিক্রম না করলে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হতে পারবে না বাংলাদেশ।

বিশ্বব্যাংক উদ্বেগজনক খবর দিয়ে বলেছে, বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে বাজেট বরং কমছে। বিগত চার অর্থবছরেই শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ কমছে। উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন মিলিয়ে ২০১০-১১ অর্থবছরে বাজেটের মোট ব্যয়ের ১৩ দশমিক ৯ শতাংশই বরাদ্দ ছিল শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে। এরপর ক্রমান্বয়ে তা কমতে কমতে চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১১ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে। এর মধ্যে ২০১২-১৩ ও ২০১১-১২ অর্থবছরে যথাক্রমে ১১ দশমিক ৫ এবং ১২ দশমিক ৪ শতাংশ বরাদ্দ ছিল। ‘উন্নয়নশীল দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বা বরাদ্দ যথেষ্ট পিছিয়ে’ রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

সংস্থাটির হিসাবে, ২০০৮ সালে উন্নয়নশীল দেশগুলো শিক্ষা খাতে গড়ে বাজেটের ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দ রেখেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের একই শ্রেণীতে থাকা কিংবা ঝরে পড়ার হার আগের চেয়ে তুলনামূলক কমলেও এ হার এখনও অনেক বেশি। নিচের শ্রেণীগুলোতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার প্রস্তুতি বাড়িয়ে একই শ্রেণীতে পুনারাবৃত্তির হার কমানোর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। সংস্থাটি মনে করে প্রথম শ্রেণীতেই কেবল ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী পুনরাবৃত্তির শিকার হয়ে থাকে। আর পঞ্চম শ্রেণীতে এ হার ১০ শতাংশ।

প্রাক-প্রাথমিক স্তরে ভর্তির হার বাড়ানোকে একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি মনে করে, প্রাক-প্রাথমিক স্তরে ভর্তির হার বাড়িয়ে শিখনের অসমতা কমিয়ে আনা দ্রুত প্রয়োজন। যদিও এ স্তরে শিশুদের হার বাড়ছে, তারপরও তাদের ভর্তির হার অনেক কম। এ হার মাত্র ২৩ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ১৩ লাখ শ্রমিক নতুন করে যুক্ত হচ্ছেন। মোট শ্রমশক্তির সাড়ে ৮৮ শতাংশই অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। এরা মূলত জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি), মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীরাই এ শ্রমশক্তির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। আর গ্রামের প্রায় অর্ধেক বা ৪৫ শতাংশ শ্রমিকের কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই। এ চিত্র শহরে কিছুটা ভালো; শহরে এই হার ২৮ শতাংশ।



মন্তব্য চালু নেই