বাংলাদেশে পুতুল সরকার চায় অ্যামনেস্টি : জয়

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ অভিযোগ করেছেন, ‘মানবাধিকার’ বিষয়ক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কিছু সরকারের অস্ত্র হিসেবে কাজ করে বাংলাদেশে একটি পুতুল সরকারকে ক্ষমতায় বসাতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে।

সম্প্রতি বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে বাংলাদেশের গণমাধ্যম পরিস্থিতি নিয়ে বিতর্কিত বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে সজীব ওয়াজেদ জয় শনিবার ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে এমন অভিযোগ করেছেন।

সজীব ওয়াজেদ জয় লিখেছেন, ‘সম্প্রতি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যেখানে দাবি করা হয়েছে যে আমাদের দেশে গণমাধ্যম স্বাধীনতায় বাধা দেয়া হচ্ছে এবং সাংবাদিকের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে নির্যাতিত সাংবাদিক হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি শফিক রেহমান এবং মাহফুজ আনামের উদাহরণ দিয়েছে। শফিক রেহমান একজন এফবিআই কর্মকর্তার সাথে দেখা করে তাকে ঘুষ দেয়ার অর্থ সরবরাহ করেছেন।’

সজীব ওয়াজেদ আরও লিখেছেন, উদ্দেশ্য ছিল প্রধানমন্ত্রীর ছেলে হিসেবে আমার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা। এই সাবেক এফবিআই এজেন্ট এবং তার দুই সহযোগী এখন কারাগারে বন্দী। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে তথ্য দেয়া আছে। যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে শফিক রেহমানের এক সহযোগী স্বীকার করেছেন যে, তাদের পরিকল্পনা ছিল আমাকে অপহরণ করে হত্যা করা। এ বিষয়টি যদি উহ্য রাখি, তাও আমরা দেখি যে, শফিক রেহমান একজন এফবিআই কর্মকর্তাকে ঘুষ দেয়ার কাজে জড়িত ছিলেন। শফিক রেহমান যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতেন তাও তাহলে কারাগারেই থাকতে হতো।

অন্যদিকে মাহফুজ আনাম জাতীয় টেলিভিশন চ্যানেলে স্বীকার করেছেন যে, আমার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘দুর্নীতি’ সম্পর্কে মিথ্যা প্রতিবেদন ছাপিয়েছেন। তিনি স্বীকার করেছেন যে, তিনি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে একটি অবৈধ সরকারকে ক্ষমতা গ্রহণ করতে সাহায্য করেছেন। এরপরেও আমাদের সরকার এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা করেনি। আমাদের দলের সদস্যরা কিছু সিভিল মামলা করেছেন মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে। মানহানিকর যেকোনো বিষয়ে মামলা করার অধিকার যেকোনো নাগরিকের আছে।

জয় বলেন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অপরাধীদের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানটি বলছে যে, নাগরিক হিসেবে নিজের সুনাম রক্ষা করার উদ্দেশ্যে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার অধিকার আমাদের নেই। তাদের এহেন অবস্থানের বিরুদ্ধে আমাদের তীব্র প্রতিবাদ জানানো উচিত।

একটু স্মরণ করলে দেখবেন, ২০০৭-২০০৮ সালের সামরিক স্বৈরতন্ত্র চলাকালীন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের বিবৃতি দেয়নি। অথচ তখন দেশের রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীদের নির্বিচারে কোনো অভিযোগ ছাড়াই গ্রেপ্তার করা হয়েছে, কোনো যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন না করেই তাদের সম্পত্তি আটক করা হয়েছে। সবধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। তখন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল চুপচাপ ছিল। অথচ এখন এই সংগঠন অপরাধীদের পক্ষ নিয়েছে।

সজীব ওয়াজেদ বলেন, আমার সন্দেহ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল রাজনৈতিক এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছে। বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় এমন কিছু সরকারের অস্ত্র হিসেবে কাজ করছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এই সরকারগুলো বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় একটি পুতুল সরকার বসাতে চায়। একটি বিষয় পরিষ্কার ১/১১ এর পর হতে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যশনালকে আর মানবাধিকার সংগঠন বলা যায়না’।

লন্ডনভিত্তিক ‘মানবাধিকার’ বিষয়ক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সাম্প্রতিককালে একের পর এক বিবৃতি দিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করছে। সর্বশেষটি দিয়েছে বাংলাদেশের গণমাধ্যম পরিস্থিতি নিয়ে। এর আগে এই প্রতিষ্ঠানটি জঙ্গি হান্নানকে ফাঁসি না দেয়ার দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছিল। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর না করতেও সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছিল পশ্চিমা এই সংগঠনটি। ২০১৫ সালে এই অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ‘অপরাধী’ বলে বিবৃতি দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে সাফাই গেয়েছে।

সংগঠনের গবেষক ওলফ ব্লমকভিস্ট তার প্রতিবেদনে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সরকার সাংবাদিকতাকে ক্রাইম হিসেবে বিবেচনা করে’। বাংলাদেশে গত তিন-চার বছরে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পুরোপুরি কণ্ঠরোধ করা হয়েছে। ভারতের নয়া দিল্লিতে এক বিশেষ প্রতিবদেন প্রকাশ করে তারা দাবি করেছে, আতঙ্ক আর দমন-পীড়নের চাপে পড়ে আজকের বাংলাদেশে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর পুরোপুরি স্তব্ধ। সরকার ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগারদের রক্ষা তো করতে পারেইনি বরং নতুন একগুচ্ছ আইন প্রণয়ন করে সাংবাদিক বা ব্লগারদের স্বাধীন কাজকর্মকে অপরাধের তকমা দিতে চেয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই