বাংলাদেশের চার কোটি মানুষ এখনো খাদ্য সংকটে : জাতিসংঘ

বাংলাদেশের এক-চতুর্থাংশ অর্থাৎ প্রায় চার কোটি মানুষ এখনো খাদ্য সংকটে রয়েছে। এমনকি তিনবেলা পেটপুরে খাওয়া তাদের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। ইচ্ছেমতো বৈচিত্র্যময় খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। এজন্য তারা অপুষ্টিরও শিকার।

একইসঙ্গে, বাংলাদেশ এগিয়ে গেলেও এখনো প্রতি তিনজনে একটি শিশু নিপীড়নের শিকার। নানা পদক্ষেপের পরও গত কয়েকবছরে দেশের অতি অপুষ্টিহীনতার হার সন্তোষজনক পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। দেশের গ্রামাঞ্চল ও বস্তিতে এ প্রবণতার হার বেশি।

জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচির এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে একটি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় খাদ্য সংকট ও অপুষ্টিকে প্রধান অন্তরায় বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সম্মেলন কক্ষে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

প্রতিবেদনে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশসহ সমসাময়িক দেশের অপুষ্টি দূরীকরণ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন করতে হবে। অপুষ্টির হার কমাতে গণসচেতনতাসহ সংশ্লিষ্ট সব ক্ষেত্রের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে। এসব ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত বরাদ্দ, দায়িত্ব সচেতনতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। সমাজের প্রতিটি নাগরিককে এ কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। নারীদের বিশেষ অগ্রাধিকার দিতে হবে। কৃষি ক্ষেত্রে চাষাবাদে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও চাষাবাদের পদ্ধতিতে বৈচিত্র্যতা আনতে হবে। জোরদার করতে হবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি।

২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনের লক্ষ্যে বাংলাদেশসহ সমসাময়িক দেশসমুহের বাস্তব অগ্রগতি তুলে ধরতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

‘স্ট্র্যাটেজিক রিভিউ অব ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড নিউট্রিশন ইন বাংলাদেশ’শীর্ষক প্রতিবেদনটি জাতিসংঘের খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) তৈরি করেছে।

এ সংক্রান্ত গবেষণা দলের প্রধান ছিলেন নর্দান আয়ারল্যান্ডের আলস্টার ইউনিভার্সিটির ডেভেলপমেন্ট ইকোনোমিক্স বিভাগের প্রফেসর সিদ্দিকুর রহমান ওসমানী। এ দলের অন্য সদস্যরা হলেন- আকতার আহমেদ, তাহমিদ আহমেদ, নায়োমি হোসেন, সালিমুল হক ও আসিফ শাহান। এ দলটি ১০ মাস সময় ধরে গুণগত ও পরিমাণগতসহ নানা মেথোডলজির মাধ্যমে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দারিদ্র্য, ক্ষুধা, অপুষ্টি জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষি, সামাজিক নিরাপত্তা প্রভৃতি ইস্যু নিয়ে গবেষণার পর এ প্রতিবেদন তৈরি করেন।

প্রতিবেদন তৈরিতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ, দেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, গবেষক ও নানা উন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতা নেওয়া হয়।

এদিকে সেমিনারে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বাল্যবিবাহ বন্ধে সচেতনতা সৃষ্টিতে আগামী বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া হবে। ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সি মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাওয়া দেশের সার্বিক উন্নতির জন্য প্রতিবন্ধক। এছাড়া অপুষ্টিও আমাদের অন্যতম সমস্যা। এ দুটি সমস্যা মোকাবিলায় সামাজিকভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে এবং দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামালের সভাপতিত্বে সেমিনারে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শহিদুল ইসলাম, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের যুগ্ম প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম, জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচির প্রতিনিধি ক্রিসটা রাদের, চিফ অব স্টাফ জেমস হার্ভে বক্তব্য দেন।



মন্তব্য চালু নেই