বাংলাদেশীদের গড় আয়ু ৭০ বছর ১ মাস

দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ বছর ১ মাসে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস অব বাংলাদেশ (এসভিআরএস) ১৩ সালের জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে, যা ২০১২ সালের জরিপের প্রতিবেদনে ছিল ৬৯ বছর ৪ মাস। তার আগে ২০১১ সালে ছিল ৬৯ বছর, ২০১০ সালে ৬৭ বছর ৭ মাস এবং ২০০৯ সালে ছিল ৬৬ বছর ১ মাস। সর্বশেষ এ জরিপের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে। পর্যালোচনা করলে দেখা যায় মানুষের গড় আয়ু দিন দিন বাড়ছে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম  বলেন, ‘দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। শিক্ষার হার বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। তাছাড়া এখন সুপেয় বিশুদ্ধ পানি প্রাপ্তির হার বেড়েছে। এ সব কারণে আগে যেসব প্রাণঘাতি রোগ-বালাই দেখা দিত। বিভিন্ন রোগে মহামারি হয়ে মানুষ মারা যেত, এখন সেসব আর নেই বললেই চলে। ফলে মানুষের গড় আয়ু ৪৩ বছর থেকে বেড়ে এখন ৭০ বছর ১ মাস হয়েছে।’

প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পুরুষের চেয়ে নারীদের গড় আয়ু বেশি। পুরুষের গড় আয়ু হচ্ছে ৬৮ বছর ৮ মাস, যা ২০১২ সালে ছিল ৬৮ বছর ২ মাস, ২০১১ সালে ৬৭ বছর ৯ মাস, ২০১০ সালে ৬৬ বছর ৬ মাস এবং ২০০৯ সালে ছিল ৬৬ বছর ১ মাস।

অন্যদিকে নারীদের গড় আয়ু হচ্ছে ৭০ বছর ৪ মাস, যা ২০১২ সালে ছিল ৬৯ বছর ৪ মাস, ২০১১ সালে ৬৯ বছর, ২০১০ সালে ৬৭ বছর ৭ মাস এবং ২০০৯ সালে ৬৭ বছর ২ মাস।

প্রতিবেদন ফলাফলে দেখা যায়, পাঁচ বছরের নিচে শিশুমৃত্যর হার কমেছে। এ সূচক দাঁড়িয়েছে মোট (পুরুষ ও মহিলা মিলে) ৪১-এ, যা ২০১২ সালে ছিল ৪২, ২০১১ সালে ৪৪, ২০১০ সালে ৪৭ এবং ২০০৯ সালে ছিল ৫০-এ। এক্ষেত্রে পুরুষ শিশুমৃত্যুর হারের সূচক দাঁড়িয়েছে ৪২, ২০১২ সালে সূচক ছিল ৪৩, ২০১১ সালে ৪৫, ২০১০ সালে ৫০ এবং ২০০৯ সালে সূচক ছিল ৫২। অন্যদিকে মেয়ে শিশুর ক্ষেত্রে দেখা যায়, মৃত্যুর হারের সূচক হচ্ছে ৪০, ২০১২ সালে ছিল ৪১, ২০১১ সালে ৪৩, ২০১০ সালে ৪৩ এবং ২০০৯ সালে সূচক ছিল ৪৮।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতি হলেও জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২০১২ সালের তুলনায় ২০১৩ সালে কিছুটা বেড়েছে। এ হার দাঁড়িয়েছে বার্ষিক এক দশমিক ৩৭ শতাংশ, যা ২০১২ সালে ছিল এক দশমিক ৩৬ শতাংশ, ২০১১ সালে ছিল এক দশমিক ৩৭ শতাংশ, ২০১০ সালে ছিল এক দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং ২০০৯ সালে ছিল এক দশমিক ৩৬ শতাংশ।

বেড়েছে দেশের সাক্ষরতার হার। প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে সাক্ষরতার হার (১৫ বছর বা তদুর্ধ মানুষ) মোট ৬১ শতাংশ, যা ২০১২ সালে ছিল ৬০ দশমিক ৭ শতাংশ, ২০১১ সালে ৫৮ দশমিক ৮ শতাংশ, ২০১০ সালে ৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ২০০৯ সালে ছিল ৫৮ দশমিক ৪ শতাংশ।

পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পুরুষের ক্ষেত্রে সাক্ষরতার হার দাঁড়িয়েছে ৬৫ দশমিক ১ শতাংশ এবং মহিলার ক্ষেত্রে সাক্ষরতার হার ৫৬ দশমিক ৯ শতাংশ। এক্ষেত্রে এখনো মহিলারা পিছিয়ে রয়েছেন।

প্রতিবেদন বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক একেএম আশরাফুল হক  বলেন, ‘সারাদেশ থেকে প্রতিনিয়ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। কেননা এই সূচকগুলোর ওপর ভিত্তি করে এমডিজির (মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল) লক্ষ্য অর্জনের চিত্র উঠে আসে।’

তিনি জানান, বর্তমান পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কানিজ ফাতেমা দায়িত্ব নেওয়ার পরই এ প্রকল্পের মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম পরিদর্শন শুরু করেছেন। ইতোমধ্যেই তিনি রাজধানীর ইস্কাটন এবং পুরান ঢাকায় কার্যক্রম পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ফলে এ প্রকল্পের কার্যক্রমে গতিশীলতা বেড়েছে।



মন্তব্য চালু নেই