বাংলাদেশকে পানি দিতে গিয়ে ভারতে বিদ্যুৎ সঙ্কট

পানির অভাবে কারণে বন্ধ হয়ে গেছে এনটিপিসি-র ফারাক্কা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন। আর চুক্তি মেনে বাংলাদেশকে পানি দিতে হচ্ছে বলে এ সংকট বলে মনে করছেন ভারতের কর্তাব্যক্তিরা। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি দেয়া হয়।

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, শুক্রবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত পাঁচটি ইউনিট বন্ধ করা হয়। বাকি একটি চালু থাকলেও শনিবার দুপুর থেকে আর সেটিও চালানো যায়নি। এর ফলে, খানিকটা হলেও রাজ্যে বিদ্যুৎ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কবে ফের উৎপাদন চালু করা যাবে, তা-ও অনিশ্চিত।

জানা গেছে, বিহারে বৃষ্টির অভাবে গঙ্গার জলপ্রবাহে ঘাটতি এবং বাংলাদেশকে চুক্তি মতো বাড়তি জল দিতে গিয়েই পানিসঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে ফিডার ক্যানালে জলস্তর অস্বাভাবিক রকম কমে গিয়েছে। ফারাক্কায় ২১০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার ছটি ইউনিট শীতল রাখতে ফিডার ক্যানাল থেকে প্রতি ঘণ্টায় দুই লাখ ২৫ হাজার কিউব মিটার পানি লাগে। আর তা পেতে গেলে ক্যানালে কমপক্ষে ২০ মিটার গভীর পানির স্তর থাকা দরকার।

ফারাক্কা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (মানবসম্পদ) মিলন কুমার বলেছেন, শুক্রবার থেকে ফিডার ক্যানালে পানি নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করেছে ফরাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ। এর কারণেই অস্বাভাবিক হারে কমতে শুরু করে পানির স্তর।

তিনি জানিয়েছেন, পরপর পাঁচটি ইউনিট বন্ধ হওয়ার পরেও ৫০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার ছ’নম্বর ইউনিট তারা কোনো রকমে চালিয়ে যাচ্ছিলেন। উৎপাদন নামিয়ে আনা হয়েছিল ২০০ মেগাওয়াটে। কিন্তু পানির অভাবে বিপদের আশঙ্কা থাকায় দুপুর ১টা নাগাদ সেটিও বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন তারা।

ফারাক্কা কেন্দ্র থেকে সবচেয়ে বেশি, উৎপাদনের ৩৩ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৭৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনে নেয় এ পশ্চিমবঙ্গ। ২০ শতাংশ পায় বিহার। বাকি বিদ্যুৎ ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা ও সিকিম কেনে। উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় বিদ্যুৎ সঙ্কটের কথা জানিয়ে এনটিপিসি সব ক’টি রাজ্যকে সতর্ক করে দিয়েছে।

তবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার চেয়ারম্যান রাজেশ পাণ্ডে দাবি করেছেন, ফারাক্কার বিদ্যুৎ না এলেও কোনো ঘাটতি হবে না। যতটা প্রয়োজন, তা জাতীয় গ্রিড থেকে কিনে নেয়া হচ্ছে। গ্রাহকদের সমস্যায় পড়তে হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

তবে এই সঙ্কটের একমাত্র স্থায়ী সমাধান পানির স্তর স্বাভাবিক হওয়া। কবে তা হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। ফলে ফরাক্কায় কবে ফের উৎপাদন স্বাভাবিক হবে, তা-ও বলা যাচ্ছে না।

ফারাক্কা ব্যারেজের জেনারেল ম্যানেজার সৌমিত্র কুমার হালদার বলেছেন, একে ফারাক্কার গঙ্গায় জলপ্রবাহ নেই, তার উপরে এই শুকনো মৌসুমে বাংলাদেশকে চুক্তি মেনে নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি দিতে হচ্ছে। ফলে এই সঙ্কট।

২০১৪ সালের ২৮ আগস্ট এনটিপিসি-র ফরাক্কা–মালদহ ট্রান্সমিশন লাইনের গোলযোগে ফরাক্কার সব ক’টি ইউনিট অচল হয়ে পড়ে। ঘণ্টা পাঁচেকের মধ্যে অবশ্য তা সারিয়ে ফেলা হয়। ২০১২ সালের ৩১ জুলাই ও উত্তরাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিডে গোলযোগের ফলে সমস্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ হয়ে দেশ জুড়ে অন্ধকার নেমেছিল। কিন্তু পানিসঙ্কটে এভাবে সমস্ত ইউনিট বন্ধ হয়ে যাওয়ার কোনো ঘটনা অতীতে কখনও ঘটেনি।

ফারাক্কার বিধায়ক মইনুল হক বলেছেন, পানির অভাবে চাষিরা সেচ করতে পারছেন না। আশপাশের শহর-গ্রামেও নদী থেকে পানি সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ফারাক্কা চুক্তি পর্যালোচনা করে দেখা উচিত বলে মনে করছেন তিনি।



মন্তব্য চালু নেই