‘বাঁশের ফালিগুলো গেল কোথায়?’

বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্তবর্তী শহর দর্শনায় একটি সরকারি ভবন নির্মাণে রডের বদলে বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে, এমন অভিযোগ ওঠার দুদিন পর একটি তদন্ত কমিটি বলছে, তারা অনুসন্ধান করে এই দাবির কোনও সত্যতা পাননি।

যদিও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা ও তাদের তোলা ছবি পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, গত বুধবার দর্শনায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একটি নির্মীয়মান দ্বিতল ভবনের সৌন্দর্যবর্ধক পিলারে রডের সঙ্গে বাঁশের ফালি মিশ্রিত ছিল।

ভারত সীমান্তবর্তী দর্শনায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কোয়ারেন্টাইন উইংয়ের জন্য প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে দ্বিতল এই ভবন নির্মাণের কাজ চলছে গত ডিসেম্বর থেকে।

নির্মাণ কাজ এরই মধ্যে প্রায় শেষের দিকে, শেষ ধাপের কাজ হিসেবে চলছিলো ভবনের বহিরাংশে ছত্রিশটি সৌন্দর্য বর্ধনকারী স্তম্ভ বা শো পিলারের কাজ।

গত বুধবার এলাকাবাসী গিয়ে দেখতে পায় ওই স্তম্ভগুলো নির্মাণের জন্য রডের সাথে বাঁশের ফালি ব্যবহার করা হচ্ছে, এবং সেগুলোকে স্থানীয়রা বলছেন বাঁশের কাবারি।

প্রতক্ষদর্শীদের একজন তানভির আহমেদের বাড়ি ওই ভবনটির নিকটেই, তিনি বলছিলেন, “শুরুতে শুনে বিশ্বাস করিনি, কিন্তু কাছে গিয়ে যখন দেখি তখন আর অবিশ্বাস করবার কোন কারণ ছিল না। সত্যি সত্যিই সেখানে রডের সাথে বাঁশের কাবারি (বাঁশের ফালির টুকরো) বাঁধা ছিল।”

এই ঘটনার ছবি ওইদিন রাতেই ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে এবং ভাইরাল হয়ে যায়।

পরদিনই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি গতকাল শুক্রবার এবং আজ দুদিন ধরে তদন্ত শেষে বলছে, তারা ওই ভবনের কোথাও নির্মাণ উপকরণ হিসেবে বাঁশের ফালির উপস্থিতি পায়নি।

তদন্ত কমিটির একজন সদস্য ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নির্মল কুমার দে বলছেন, “আমরা যে তদন্ত করলাম ওখানে তেমন কিছু পেলাম না।”

ভেতরে কোথাও বাঁশের ফালি ছিল না? – এমন প্রশ্নের জবাবে এককথায় মি: দে বলেন, “না”।

কিন্তু তানভীর আহমেদসহ বুধবারের প্রত্যক্ষদর্শীরা যেমনটি বলছেন তারা বাঁশের ফালি দেখেছেন, তেমনটি বলছেন স্থানীয় সাংবাদিকেরাও।

স্থানীয় সাংবাদিক ও দর্শনা প্রেসক্লাবের সভাপতি হানিফ মন্ডলও বলছেন, তিনিসহ ছ-সাতজন সাংবাদিক স্বচক্ষে ওই ভবনের পিলারে রডের সাথে বাঁশের ফালি বাঁধা দেখেছেন।

“একটা ঢালাই ভাঙা হইল, তার ভিতরেও কাবারি পাওয়া গেল।”

“যেদিন ঘটনা সেদিন রাতেই সরিয়ে ফেলছে। মনে হয় বলেছে যে এটা সরিয়ে ফেলা হোক যাতে প্রমাণ না পায়। কিন্তু আমাদের কাছে ছবি আছে।”

কিন্তু যে পিলারগুলোতে এর মধ্যে ঢালাই হয়ে গেছে তার মধ্যে থেকে রাতারাতি কীভাবে বাঁশের ফালি বা কাবারি সরিয়ে ফেলা গেল?

মি. মন্ডলের কাছে তার সদুত্তর পাওয়া গেলো না।

তদন্তকারীদের একজন নির্মল কুমার দের কাছে জানতে চাইলে তিনিও আর বিস্তারিত জানাতে অনীহা প্রকাশ করলেন।

তবে তিনি জানাচ্ছেন, যে শো পিলারগুলো নিয়ে অভিযোগ উঠেছে সেগুলো ভেঙে নতুন করে নির্মাণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে। – বিবিসি বাংলা



মন্তব্য চালু নেই