বাঁকাপথে নেতারাও সচল ফেসবুকে

আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে ফেসবুক বন্ধ।কিন্ত বাঁকাপথে অনেকেই ফেসবুকে সক্রিয়। আর এই অনেকের মধ্যে মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে রথী-মহারথীরাও রয়েছেন।অথচ গত দুই সপ্তাহ ধরে ফেসবুক বন্ধের বদনাম সরকারের উপর গিয়ে বর্তাচ্ছে।এ নিয়ে নানা হৈচৈ শুরু হয়েছে। আর এর কৈফিয়ত দিতে দিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের একরকম দফারফা হওয়ার যোগার হয়েছে।

গত দুই সপ্তাহে ফেসবুক ঘেটে দেখা গেছে, সরকারি দলের সাংসদ ও মন্ত্রীগণ ফেসবুকে তাদের নিত্যদিনের কাজ সারছেন। ছবি আপলোড করছেন। স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। অথচ সরকার থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, যে বা যারা বাঁকাপথে ফেসবুক ব্যবহার করছেন, তারা নিরাপদ নয়।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক গত ১৮ নভেম্বর তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে একটি ছবি শেয়ার করেন। ওই সময় সরকারিভাবে ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ এবং ভাইবার বন্ধ ছিল। শুক্রবার বিকাল তিনটা ৪০ মিনিটে শেয়ার করা ওই ছবিতে পলক লেখেন, ‘আমি এখন চলনবিল, সিংড়া।’

তবে পলক ফেসবুক ব্যবহার করার বিষয়টি অস্বীকার করে দাবি করেন, ‘তার ফেসবুকটি টুইটারের সঙ্গে সংযুক্ত (সিঙ্ক)। টুইটারে কিছু আপলোড করলেই সেটা ফেসবুকে চলে যায়।’

সাধারণ একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী বলেন, ‘আমরা সাধারণ মানুষ ফেসবুকে ঢুকতে এখন ভয় পাই। অথচ নেতারা দিব্যি সেটা ব্যবহার করছেন। আমরাও কখনো কখনো অন্য উপায়ে ব্যবহার করছি। এখন প্রশ্ন হল, যারা অপরাধ করে, তারা কী এই অন্য উপায় জানে না?’

২০০৬ সালের মাঝামাঝি বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহার শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগের এই মাধ্যমটি বর্তমানে প্রায় দুই কোটি লোক ব্যবহার করে। সরকার থেকে এটি সাময়িক বন্ধ করা হলেও ইউসি ব্রাউজার, প্রক্সি সার্ভারসহ বেশ কয়েকটি অ্যাপস দিয়ে অবাধে ফেসবুক ব্যবহার করা যাচ্ছে। তাই অনেকেই সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে হাস্যকর বলে মনে করছেন।

তবে এ কথা ঠিক, ফেসবুকের মূল সার্ভারটি বন্ধ করে দেয়ায় ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশ কমেছে। আর তাতে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে ইন্টারনেট নির্ভর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। যারা ফেসবুক পেজ ব্যবহার করে তাদের ব্যবসা চালায়। তাদের বিক্রি কমে গেছে অর্ধেকেরও বেশি।

বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সাবেক সভাপতি মুস্তফা জব্বার বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ফেসবুক বন্ধ করতে হলে অবশ্যই কিছু কারণ থাকতে হবে। কিন্তু আমি এর পেছনে কোনো কারণ দেখছি না। এটা বন্ধ করে কোনোভাবেই অপরাধ ঠেকানো যাবে না।’

পরিকল্পনা মন্ত্রী আহম মুস্তফা কামালও ফেসবুক থেকে দূরে নন। বিপিএলের দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের লোগো প্রোফাইল পিকচার বানিয়েছেন তিনি। আর সেটা করেছেন ২৯ নভেম্বর। সরকার থেকে ফেসবুক বন্ধ করার পর। গাজীপুরের সাংসদ জাহিদ আহসান রাসেলও একই দিন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। জানতে চাইলে জাহিদ বলেন, ‘কী বলার আছে আমি জানি না। আসলে এর কোনো উত্তরও আমার কাছে নেই। অভ্যাসের কারণে হয়তো ফেসবুক থেকে দূরে থাকতে পারিনি।’

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকনও এই তালিকা থেকে বাদ যাননি। তিনি অনবরত প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন করছেন। ফেসবুকে তার সর্বশেষ আপডেট মঙ্গলবার। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজও সচল রয়েছে। মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির নির্বাচনের পর বিজয়ীদের ওই পেজ থেকে শুভেচ্ছা জানানো হয়। বসে নেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও। বিপিএলের নিয়মিত আপডেট তারা ফেসবুকে দিচ্ছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লিগের অফিসিয়াল ফেসবুকেও ২০ নভেম্বর আপডেট দেখা গেছে। তারপর থেকে অবশ্য ওই পেজে কোনো আপডেট নেই। এখানেই শেষ নয়, দূতাবাস ও হাইকমিশনেও ফেসবুক ব্যবহৃত হচ্ছে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, কারা এটা ব্যবহার করছেন না? আর কাদের জন্য এটা বন্ধ রাখা হয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর সম্ভবত সবচেয়ে ভাল জানেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। গতকাল রাতে তার সঙ্গে কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।ঢাকাটাইমস



মন্তব্য চালু নেই