বন্ধ হয়ে যাচ্ছে রূপসী বাংলা

আগামী আগস্ট মাস থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন দেশের প্রথম পাঁচ তারকা হোটেল রূপসী বাংলা। সংস্কারের অজুহাত দেখিয়ে ইতোমধ্যে কয়েকটি ক্লায়েন্ট ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। আর এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ায় চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছে হোটেলের প্রায় ছয় শতাধিক কর্মচারী।

তাদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের সীমাহীন উদাসীনতায় একটি অসম চুক্তির ফলে এখন এত বড় খেসারত দিতে হচ্ছে। হোটেলের অপারেশন বন্ধ রেখে সংস্কার কাজ চালানোর ফলে, শুধু বড় ধরনের লোকসানই হবে না, এতে চাকরি হারানোর উপক্রম হবে শ্রমিক-কর্মচারীদের।

দেশের প্রথম পাঁচ তারকা এই হোটেলটির প্রথম অপারেশন ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে ছিল আন্তর্জাতিক চেন হোটেল কন্টিনেন্টাল। তখন এটা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল নামে পরিচিত ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই হোটেলটি ছিল আন্তর্জাতিক রেড ক্রিসেন্ট ঘোষিত সেফ জোন। দেশ-বিদেশের সাংবাদিক পর্যবেক্ষক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নিরাপদ ঘাঁটি হিসেবে তখন এটা বিবেচিত হতো। মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতি বিজড়িত এ হোটেলটির অপারেশনের দায়িত্ব একপর্যায়ে ছেড়ে দেয় ইন্টারকন্টিনেন্টাল। তারপর আসে আরেক চেন হোটেল শেরাটন। দেশের অভিজাত হোটেলের ব্র্যান্ড ইমেজ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বরাবরই লাভজনক ছিল সরকারের শতভাগ মালিকাধীন এ প্রতিষ্ঠানটি। দীর্ঘ ২৭ বছর পর চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় ২০১১ সালে চলে যায় শেরাটন। তারপর এক বছর সরকারের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় হোটেলটি চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই হোটেলটির নামকরণ করেন রূপসী বাংলা।

কোন প্রকার বিদেশী বিশেষজ্ঞ ছাড়াই হোটেলটির নিজস্ব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর দিয়ে বেশভালই ব্যবসা সফল সময় পার করে হোটেলটি। মহাব্যবস্থাপক মাহফুজুর রহমানের আমলে হোটেলটি রেকর্ড সংখ্যক ১৩৪ কোটি টাকার ব্যবসা করে। এর মধ্যে প্রকৃত মুনাফা হয় ৩৪ কোটি টাকা।

এ অবস্থায় হোটেলের মালিকাধীন প্রতিষ্ঠান ও সরকার নিয়ন্ত্রিত বিএসএল সিদ্ধান্ত নেয় ফের আন্তর্জাতিক কোন চেন দিয়ে হোটেল চালানোর। এ জন্য হোটেলটির সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়। দরপত্রে টিকে যায় ইন্টারকন্টিনেন্টাল। ২০১২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে বিএসএল ও ইন্টারকন্টিনেন্টাল। সংস্কারের পর ইন্টারকন্টিনেন্টাল নিজেই এর অপারেশনের দায়িত্ব বুঝে নেয়াটাই ছিল চুক্তির প্রধান শর্ত। শর্ত অনুযায়ী তারপর ইন্টারকন্টিনেন্টাল সংস্কার কাজ তদারকির জন্য তাদের পক্ষ থেকে ওই বছরের ৬ এপ্রিল বর্তমান মহাব্যবস্থাপক ম্যাকডোনাল্ডকে নিয়োগ দেয়। তারপর থেকেই দেখা দিতে থাকে জটিলতা। ম্যাকডোনাল্ড প্রথমেই শ্রমিক স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে তৎপর হওয়ায় শ্রমিকদের মধ্যে দেখা দেয় চরম অসন্তোষ।

চুক্তিতে দেখা যায় ইন্টারকন্টিনেন্টালের শর্ত মেনে বর্তমানের ২৭২ রুম ভেঙ্গে ২২৫ রুম তৈরি করা হবে। এ জন্য ব্যয় ধরা হয় ৫০০ কোটি টাকা। ১৬ মাসের মধ্যেই বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থ ব্যয়ে সংস্কার সম্পন্ন করার চুক্তি হয়। সে অনুযায়ী ৮ মাস আগে এগারো তলায় ৫ রুম ভেঙ্গেও ফেলা হয়। কি ধরনের সংস্কার হবে সেটার মডেল দেখানোর জন্য এ ৫টি রুম ভাঙ্গা (মকআপ রুম) হয়। আর তখন হোটেলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে দেখা দেয় মতবিরোধ। মাত্র ২২৫ রুম সংস্কার করতেই পাঁচ শ’ কোটি টাকা ব্যয়কে অস্বাভাবিক হিসেবে উল্লেখ করে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি দেয়া হয় প্রধানমন্ত্রীর দফতরে। হোটেল কর্মকর্তারা এ নিয়ে ভিন্ন মত প্রকাশ করলে তাদের চাকরিচ্যুতির হুমকি দেন মহাব্যবস্থাপক ম্যাকডোনাল্ড।

জানা যায়, ২ মাসের মধ্যে মকআপ রুম শেষ করার কথা থাকলেও এটা এখন ৮ মাসেও শেষ করতে পারছে না। ওই পাঁচটি রুম গত ৮ মাস ধরে অর্ধেক ভেঙ্গে ফেলে রাখায় রাজস্ব হারিয়েছে কমপক্ষে ১২ কোটি টাকা। তারপর বলা হচ্ছে ১৬ মাসে মূল সংস্কার করা হবে। সবচেয়ে বড় আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হচ্ছে হোটেলের অপারেশন বন্ধ রেখে সংস্কার কাজ করা।



মন্তব্য চালু নেই