বন্ধু নয়নের গুলিতে টুকুর মৃত্যু!

নিজের নয়, বন্ধু নয়নের গুলিতে নিহত হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা ও রাজশাহী চেম্বার অব কমার্সের সাবেক প্রশাসক জিয়াউল হক টুকু। টুকুর ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ রোববার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, হাসপাতালে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই টুকু মারা যান। মারা যাবার পরেই টুকুর বন্ধু নয়ন হাসপাতাল ছেড়ে তার গাড়ি নিয়ে চলে যান। যাওয়ার পরে তিনি ফোন করে আওয়ামী লীগ নেতা আসাদকে বলেন, ‘টুকু নিজের গুলিতে নিহত হননি। আমার হাতে থাকা টুকুর পিস্তলের ট্রিগারে চাপ লেগে গুলি বের হয়ে গেলে তিনি মারা যান। এখন যা বলার তিনি আদালতে গিয়েই বলবেন।’

এরপর থেকে নয়নের মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে পুলিশকে বিষয়টি জানানোর পর নয়নকে ধরতে এরই মধ্যে পুলিশ পিছু নিয়েছে বলেও দাবি করেন আসাদ।

তিনি আরো জানান, নয়নের বাড়ি ঢাকার মতিঝিলে বলে সে জানিয়েছে। নিহত টুকু একজন প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার ছিলেন। তার বাসা রাজশাহী নগরীর ষষ্ঠীতলায়।

টুকুর চেম্বারের আশপাশের দোকানের কয়েকজন কর্মচারী জানান, রোববার বিকেলে ‘সিটি চেম্বার’ নামের নিজ ব্যবসায়িক কার্যালয়ে ছিলেন জিয়াউল হক টুকু। এ সময় তার চেম্বারে ছিলেন আরো তিন থেকে চারজন ব্যবসায়ী। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চেম্বারের ভেতর থেকে হঠাৎ গুলির শব্দ পাওয়া যায়। এরপর চেম্বারের ভেতরে থাকা ব্যক্তিরা টুকুকে রক্তাক্ত অবস্থায় বের করে একটি মাইক্রোবাসে করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

সন্ধ্যার পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, চেম্বারের বাইরে পুলিশের কয়েকটি ভ্যান দাঁড়ানো। চেম্বারের ভেতরে সিআইডি ও পিবিআই’র কর্মকর্তারা আলামত সংগ্রহ করছেন।

পিবিআই’র একজন কর্মকর্তা জানান, ঘটনাস্থলে একটি পিস্তল পাওয়া গেছে। পিস্তলের ম্যাগাজিনে পাঁচটি গুলি রয়েছে। যে গুলিতে টুকু নিহত হয়েছেন, সে গুলিটিও সেখানে পড়ে আছে। ওই গুলির পাশে আছে গুলির খোসা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, টুকুকে উদ্ধারকারী ব্যবসায়ীরা আশপাশের লোকজনকে বলেছেন, নিজস্ব চেম্বারে বসে পিস্তল পরিষ্কার করছিলেন টুকু। এ সময় অসাবধানতাবশত তার নিজের পিস্তল থেকে গুলি বেরিয়ে যায়। এতে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। পরে তাকে দ্রুত রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর তাকে হাসপাতালের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে নেওয়া হলে কিছুক্ষণ পরেই তিনি মারা যান।

টুকুর ভাই আমিনুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, টুকু নিজের গুলিতে আহত হয়েছে বলে তারা খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে যান। হাসপাতালে গিয়ে তার লাশ দেখতে পান তিনি।

হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, টুকুর ডান পাশের বগলের নিচে গুলি লেগে পিঠ দিয়ে বের হয়ে যায়। এতে তিনি মারা যান।

নগরীর বোয়ালিয়া থানার এসআই মহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তিনি নিজের গুলিতে নিহত হয়েছেন নাকি অন্য কেউ তাকে হত্যা করেছে, সেটি তদন্ত করা হচ্ছে।

ব্যক্তিগত জীবনে টুকু ছিলেন দুই ছেলের জনক। তার স্ত্রী নাম লতা বেগম। তার দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে রওনক এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। আর ছোট ছেলে রনু রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড স্কুলের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র। রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন টুকু। পাশাপাশি রেলওয়ের প্রথম শ্র্রেণির ঠিকাদারও ছিলেন তিনি।



মন্তব্য চালু নেই