‘বড় ব্যাটের’ বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন এ যুগের ক্রিকেটাররা?

অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান ডেভিড ওয়ার্নার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিডনি টেস্টে লাঞ্চের আগেই সেঞ্চুরি করেছেন।

টেস্ট ক্রিকেটে এর আগে এই রেকর্ড হয়েছে মাত্র চারবার। এর আগে লাঞ্চের আগে সেঞ্চুরি করেছেন এর আগে ভিক্টর ট্রাম্পার, ডন ব্র্যাডম্যান, চার্লি ম্যাককার্টনি, আর মাজিদ খান। আর ডেভ ওয়ার্নার সিডনি টেস্টে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতে নেমে লাঞ্চের আগে সেঞ্চুরি করেছেন মাত্র ৭৮ বলে, ১৭টি চার মেরে।

তবে এ নিয়ে যখন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করেছেন – তখন তারা আধুনিক ক্রিকেটের একটি বিশেষ দিকের ওপর আলোকপাত করেছেন, যা নিয়ে খুব বেশি কথা হয় না। সেটা হলো ব্যাটের আকৃতি।

কিন্তু অনেকে বলছেন, এখনকার ব্যাটসম্যানরা যে রকম ‘বড়’ ব্যাট দিয়ে খেলেন – তাতে এসব রেকর্ড আগামিতে আরো অনেকেই করবেন।

প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ৯ বার লাঞ্চের আগে সেঞ্চুরি করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যারি রিচার্ডস। তাকে সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন মানা হয়, যদিও তিনি বর্ণবাদী শাসনের সময়কার নিষেধাজ্ঞার কারণে ৪টির বেশি টেস্ট খেলতে পারেন নি।

ব্যারি রিচার্ডস বলছেন, আজকাল যেভাবে ব্যাটিংএর নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে তার একটা কারণ এই বড় ব্যাট।

ব্যারি রিচার্ডস বলছেন, ওয়ার্নারের রেকর্ডে আমি খুব অবাক হইনি। এটা হয়তো আগামি ১০ বছরে আরো কয়েকবার ঘটবে। কারণ এখন ক্রিকেটারদের ব্যাটের আকৃতি বড় হয়েছে । মাঠ ছোট হয়ে গেছে। নিয়মকানুন বদলে গেছে।

“টুয়েন্টি টুয়েন্টির কারণে এখনকার খেলোয়াড়রাও অনেক বেশি আক্রমণাত্মক। গত পাচ বছরে আপনি দেখবেন কত নতুন ব্যাটিং রেকর্ড হয়েছে। সে তুলনায় বোলিং রেকর্ড হয়েছে খুবই কম। জিম লেকারের ১৯৫৬ সালের রেকর্ড এখনো টিকে আছে। কিন্তু ৫০, ৬০ বা ৭০ এর দশকের যেসব ব্যাটিং রেকর্ডের কথা আমার মনে আছে সেগুলোর প্রায় সবই ভেঙে গেছে।”

ক্রিকেট ভাষ্যকার জিম ম্যাক্সওয়েল অবশ্য পুরোপুরি একমত নন। তিনি বলছেন, “আজকালকার বড় ব্যাট একটা তফাত হয় নিশ্চয়ই। আজকাল একটা বল ব্যাটে ঠিকমত না লাগলেও, বা ব্যাটের কানায় লাগলেও বাউন্ডারি হয়। এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে আমার মনে হয় – টেস্ট ম্যাচের প্রথম দিনে লাঞ্চের আগে নতুন বলের বিরুদ্ধে একটা সেঞ্চুরি করা – এটা খুবই কঠিন একটা কাজ। এটা আবার হতে দেখতে আপনাকে আরো বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।”

বাস্তবিক, ক্রিকেট খেলার ব্যাটের আকৃতিতে গত চার দশকের মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে ।

উনিশশ’ সত্তর বা আশি’র দশকেও ব্যাটের কিনারা ১৫-১৬ মিলিমিটার চওড়া হতো। কিন্তু এখন ব্যাটের আকৃতিতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে, কোন কোন ব্যাটের কিনারা এখন মাঝ বরাবর ৫০-৫৫ মিলিমিটার পর্যন্ত চওড়া হয়। বলা হয়, এসব আধুনিক ব্যাটের ওজন পুরোনো ব্যাটের প্রায় সমান, কিন্তু নির্মাণ কৌশলের কারণে তা বলকে অনেক বেশি শক্তি দিয়ে আঘাত করতে পারে এবং চার ছক্কা মারা অনেক সহজ হয়ে যায়।

এসব ব্যাট নিয়ে অনেক দিন ধরেই কথাবার্তা চলছে, যে এই আধুনিক ব্যাট কতটা বড় হতে পারবে তার একটা সীমা বেঁধে দেয়া উচিত কিনা। এমসিসির ক্রিকেট কমিটি এ ব্যাপারে ২০১৪ সালে খোঁজখবর নেয়। এমসিসি শেষ পর্যন্ত কোন সীমা বেঁধে দেয় নি। তবে আগামীতে নতুন একটি আইনের খসড়া প্রস্তাব আনা হবে বলে জানা যাচ্ছে।

কমিটির খোঁজখবরে বেরিয়ে এসেছে যে আগের চাইতে ব্যাটের কিনারা ৩ গুণ চওড়া হয়েছে – প্রায় ২২ মিলিমিটার পর্যন্ত বেশি চওড়া হচ্ছে। ব্যাটের মাঝখানের ‘সুইট স্পট’ ও আগের চাইতে আড়াই গুণ বড়।

তবে ব্যাটের ওজন প্রায় একই থাকছে, কারণ ব্যাটের পেছন দিকটা অনেক বেশি উঁচু হলেও দু পাশ থেকে অনেকখানি কাঠ চেঁছে ফেলে খাঁজ বানিয়ে দেয়া হচ্ছে। ফলে আগের চাইতে আধুনিক ব্যাট হচ্ছে আকারে বড়, কিন্তু ওজনে প্রায় একই ।

এতে কতটা সুবিধা একজন ব্যাটসম্যান পান? এ নিয়ে কথা বলেছেন সাবেক বাংলাদেশের ক্রিকেট অধিনায়ক ও উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান খালেদ মাসুদ পাইলট।

তার কথা যে আধুনিক ব্যাটে কিছু সুবিধা পাওয়া যায় এটা সত্যি। কিন্তু পাশাপাশি উইকেট এবং অন্যান্য কিছু বিষয়ও এ যুগে ব্যাটসম্যানদের অনুকুলে কাজ করে।

জানা যাচ্ছে যে নতুন আইনে এমসিসি প্রস্তাব করতে যাচ্ছে যে ব্যাটের কিনারা সর্বোচ্চ ৪০ মিলিমিটার পর্যন্ত পুরু হতে পারবে। আর ব্যাটের সবচেয়ে পুরু জায়গাটার গভীরতা হবে ৬৫ মিলিমিটার।

এ নিয়ে এমসিসি ব্যাট নির্মাতা এবং বিজ্ঞানীদের সাথে কথা বলবে আগামীতে – আর এ আইন কার্যকর হবে এ বছর অক্টোবর মাসে।-বিবিসি



মন্তব্য চালু নেই