বছর পার, রহস্যের জট খোলেনি ফারুকী হত্যার

বহুল আলোচিত ইসলামী ফ্রন্ট নেতা ও টিভি উপস্থাপক মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যকাণ্ডের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। এই দীর্ঘ সময়ে খুনিদের গ্রেপ্তার করতে না পারায় তার পরিবারে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। খুনের রহস্য উন্মোচন করতে না পারায় মামলার তদন্তের ভার সিআইডির ওপর দেয়া হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পর পরই মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে। এই এক বছরে শুধু মোবাইল ট্র্যাকিং ছাড়া কোনো অগ্রগতি হয়নি।

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যার পেছনে ধর্মীয় মতবাদের ভিন্নতাকেই মূল কারণ হিসেবে বিবেচনা করে তদন্তে নেমেছিল গোয়েন্দারা। এ ঘটনার সঙ্গে আগের আরও কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের সাদৃশ্য রয়েছে। বিশেষ করে গোপীবাগের সিক্স মার্ডারের সঙ্গে এ হত্যাকাণ্ডের সাদৃশ্য থাকলেও এখন পর্যন্ত সম্পৃক্তদের শনাক্ত করতে পারেনি ডিবি। গোপীবাগ হত্যাকাণ্ডের জটও খোলেনি। নুরুল ইসলাম ফারুকীকে গত বছরের ২৭ আগস্ট রাত সোয়া ৯টার দিকে ১৭৪ নম্বর পূর্ব রাজাবাজারের ভাড়া বাড়ির দোতলায় গলা কেটে (জবাই) ও কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ওই রাতেই নিহতের ছেলে ফয়সাল ফারুকী রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

ঘটনার সময় বাড়িতে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। ঘটনার তদন্ত পুলিশের কাছ থেকে ডিবিতে হস্তান্তরের পর- ফারুকী ইসলামিক ফ্রন্টের নেতা, তার একটি হজ এজেন্সির ব্যবসা ছিল এবং পারিবারিক জীবনে তার দুই স্ত্রী রয়েছেন-সম্ভাব্য এ তিন কারণকে সামনে নিয়ে ডিবি তদন্ত শুরু করে।

ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া রক্তমাখা ছুরিটি সিআইডির ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। ইস্পাতের মজবুত ও ধারালো ছুরিটির এক পাশে কয়েক সেন্টিমিটার পর পর খাঁজকাটা কারুকাজ রয়েছে। পার্টিক্যাল বোর্ড দিয়ে তৈরি করা হয় এর বাট। তবে ওই সময় ফারুকীর ছেলে ফয়সাল ফারুকী জানান, এ ছুরিটি হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়নি। ছুরিটি তাদের বাসাতেই ছিল। হত্যাকাণ্ডের পর অন্য কোনোভাবে ছুরিতে রক্ত লেগে থাকতে পারে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পশ্চিম বিভাগের উপ-কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান  বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। পেশাদার ও প্রশিক্ষিত খুনিরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তা আমরা অনেকটা নিশ্চিত। তবে খুনিরা সব ধরনের আলামত নষ্ট করায় মামলার তদন্তে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে তবে চেষ্টা চলছে।

তিনি জানান, এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে অনেক অগ্রগতিও হয়েছে। তবে অধিকতর তদন্তের জন্য এটি সিআইডিতে নেওয়া হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ফারুকী হত্যাকাণ্ড, গোপীবাগ সিক্স মার্ডার ও ব্লগার হত্যাকাণ্ড একই সুতায় গাঁথা। এই প্রতিটি ঘটনায় প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী বা সংগঠনের হাত রয়েছে। এ সব হত্যাকাণ্ডই পরিকল্পিতভাবে ও ঠাণ্ডা মাথায় করা হয়েছে। এরা সবাই প্রশিক্ষিত ও পেশাদার। খুনের পর তারা তেমন কোনো আলামতই রেখে যায়নি। বরং গোয়েন্দাদের ধোঁকা দেওয়ার জন্য বেশিরভাগ আলামত নষ্ট করেছে খুনিরা।

এ ঘটনার তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের তিনজন, জেএমবির সাতজন ও হরকাতুল জিহাদের তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা এ ঘটনা সম্পর্কে জানার কথা বললেও হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না জানান। তবে কারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সে ব্যাপারেও কোনো বক্তব্য দিচ্ছে না।

তারা জানায়, টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ফারুকীর বক্তব্যের কারণে মানুষ মাজারপন্থী হয়ে শিরকের দিকে ঝুঁকছিল বলে তাকে খুন করা হয়েছে।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, এ হত্যাকাণ্ডে সন্দেহজনকভাবে বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তারা কেউই এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত না বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে হুমকিসহ বেশকিছু ফোনকলের কথা জানা গেলেও সেগুলো কোন নম্বর থেকে এসেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সম্ভবত কলগুলো ভাইবার, স্কাইপি অথবা অন্য কোনো ইন্টারনেট সার্ভিসের মাধ্যমে এসেছে। প্রযুক্তিগত দুর্বলতার জন্য এ তথ্যগুলো জানা যাচ্ছে না।

মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী জনপ্রিয় ধর্মীয় অনুষ্ঠান “শান্তির পথে” ও “কাফেলা”র উপস্থাপক ছিলেন। সুন্নি মতবাদে বিশ্বাসী এই উপস্থাপক বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত বাংলাদেশের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন। এছাড়া মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি হাইকোর্ট মাজার মসজিদের খতিব ছিলেন।



মন্তব্য চালু নেই