বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার আপসহীন পথচলা

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দায়িত্ব আরও একবারের জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ওপরই অর্পণ করেছেন দলের কাউন্সিলররা। অষ্টমবারের মতো দলের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।

রোববার আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের অধিবেশনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর ৭০তম জন্মদিন পার করেন প্রধানমন্ত্রী। ১৯৪৭ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

শেখ হাসিনা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের প্রথম সন্তান। তৃতীয়বারের মতো তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে আবির্ভূত করেছেন তিনি।

বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে ব্যক্তিজীবনে প্রয়াত পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন। তাদের দুই সন্তান- তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সজীব ওয়াজেদ জয় এবং আন্তর্জাতিক অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।

রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হাসিনা ওয়াজেদ ছাত্রজীবন থেকে প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে গ্রাজুয়েট ডিগ্রি লাভকারী শেখ হাসিনা তৎকালীন ছাত্রলীগের অন্যতম নেত্রী ছিলেন।

এরপর ১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তনের পর ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে দলীয় প্রধানের দায়িত্ব নেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এরপর থেকে বিগত ৩৪ বছর ধরে নিজ রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও আপসহীন নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশের অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক রাজনীতির মূল স্রোতধারার প্রধান নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এবং অন্য রাজনৈতিক জোট ও দলগুলো ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে বিজয়ী হয়। ১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বেই তৎকালীন বিএনপি সরকারের পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিজয় অর্জন করে আওয়ামী লীগ।

গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় প্রধান বিরোধী দলের নেতা হিসেবে তার নেতৃত্বে অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে প্রথমে ১৪ দলীয় জোট এবং পরে মহাজোট গড়ে ওঠে।

এরপর ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারি করে ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে ওই বছরের ১৬ জুলাই চাঁদাবাজিসহ দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার হন শেখ হাসিনা। ওই সময় সংসদ ভবন চত্বরের বিশেষ কারাগারে দীর্ঘ প্রায় ১১ মাস বন্দি ছিলেন। গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে গিয়ে এর আগেও কয়েক দফা গৃহবন্দি হন তিনি।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এ পর্যন্ত তিন মেয়াদে ক্ষমতাসীন হয়েছে। ১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বে দীর্ঘ ২১ বছর পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটি। ওই বছরের ১২ জুনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২৩ জুন সরকার গঠন করে দলটি।

এরপর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের ঐতিহাসিক নির্বাচনে চার-তৃতীয়াংশ আসনে বিশাল বিজয় অর্জনের মাধ্যমে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠিত হয়। দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা।

সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিজয়ের পর ১২ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরপর দ্বিতীয় মেয়াদের মহাজোট সরকার গঠিত হয়েছে।

এছাড়া ১৯৮৬ সালের তৃতীয়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম এবং ২০০১ সালের অষ্টম সংসদে অর্থাৎ মোট তিন দফা বিরোধী দলের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে।

গণতন্ত্র এবং দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামে অসামান্য অবদান রাখার পাশাপাশি রাষ্ট্র পরিচালনায়ও ব্যাপক সাফল্যের পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

১৯৯৬-০১ সালে তার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি ও গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি তার সরকারের অন্যতম সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

বর্তমানে তার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত ও মধ্যম আয়ের আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য পূরণে নিয়োজিত আছে। এ সময়ে অর্জিত সমুদ্র বিজয় এবং ৪১ বছর পর ছিটমহল সমস্যার সমাধান ঐতিহাসিক সফলতা হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।

এমডিজি ও এসডিজি অর্জনে আন্তর্জাতিক সফলতা, নারী ও শিশু স্বাস্থ্যসহ স্বাস্থ্যসেবা, দারিদ্র্য নিরসন, শিক্ষা বিস্তার ও সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেল হিসেবে আখ্যায়িত।

এই অঞ্চলে গণতন্ত্র, শান্তি ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নারী শিক্ষার বিস্তার, শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস ও দারিদ্র্য বিমোচনের সংগ্রামে অসামান্য ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে দেশী-বিদেশী বেশ কিছু পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন শেখ হাসিনা। এর মধ্যে সাউথ-সাউথ ভিশনারি পুরস্কার-২০১৪, শান্তি বৃক্ষ-২০১৪, জাতিসংঘ পুরস্কার-২০১৩ ও ২০১০, রোটারি শান্তি পুরস্কার-২০১৩, গোভি পুরস্কার-২০১২, সাউথ-সাউথ পুরস্কার-২০১১, ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার-২০১০, পার্ল এস. বার্ক পুরস্কার-২০০০, সিইআরইএস মেডাল-১৯৯৯, এমকে গান্ধী পুরস্কার-১৯৯৮, মাদার তেরেসা শান্তি পুরস্কার-১৯৯৮, ইউনেস্কোর ফেলিক্স হোফুয়েট-বোয়েগনি শান্তি পুরস্কার-১৯৯৮ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

এছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণে অসামান্য অবদানের জন্য জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ’ পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন শেখ হাসিনা। সর্বশেষ ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ ও ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।



মন্তব্য চালু নেই