বইমেলার স্টল ও প্যাভিলিয়ন হস্তান্তর কাল

আর মাত্র ১২ দিন পরই শুরু হতে যাচ্ছে বাঙালির প্রাণের উৎসব অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৬। ভাষা আন্দোলনের চেতনায় ঋদ্ধ এ মেলা গতবারের মতো এবারও অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে। দুই প্রাঙ্গণেই এখন চলছে মেলার মঞ্চ ও স্টল নির্মাণের জোর প্রস্তুতি। আগামীকাল (২০ জানুয়ারি) মেলায় যারা স্টল ও প্যাভিলিয়ন পেয়েছেন তাদের সেগুলো হস্তান্তর করা হবে।

সরেজমিনে দুই প্রাঙ্গণ ঘুরেই দেখা গেছে, মেলার মঞ্চ ও ইউনিট নির্মাণের কাজ বেশ দ্রুত গতিতেই এগোচ্ছে। চলছে নির্মাণশিল্পীদের হাতুড়ি-কাঠের ঠুকঠাক আওয়াজ।

মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি জানিয়েছে, স্টল ও প্যাভিলিয়ন হস্তান্তরের পাঁচদিন পর অর্থাৎ ২৫ জানুয়ারির মধ্যেই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে স্টল নির্মাণের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করতে হবে। নির্মাণ করতে কেউ ব্যর্থ হলে স্টল বাতিল করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে একাডেমি।

শুরু থেকেই পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুত ও জমজমাট বইমেলা উপহার দিতেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। আজ (১৯ জানুয়ারি) লটারির মাধ্যমে প্রকাশক ও প্রতিষ্ঠানগুলো কোথায় স্টল পাচ্ছে সেটি নির্ধারণ করা হবে।

এবারের বইমেলার আরেকটি বিশেষ দিক হচ্ছে এবার সোহারাওয়ার্দী উদ্যানে ১৫টি গুচ্ছ আকারে সাজানো হচ্ছে মেলা প্রাঙ্গণ। প্রতিটি গুচ্ছে থাকবে ১টি প্যাভিলিয়ন, চার ইউনিটের একটি স্টল, তিন ইউনিটের ২টি স্টল, দুই ইউনিটের ৭টি স্টল এবং ১ ইউনিটের ৮টি স্টল। প্রতিটি গুচ্ছের প্রবেশমুখে থাকবে প্রকাশনা সংস্থাগুলোর নাম।

মেলার মোট প্রবেশদ্বার যেমন থাকছে ৪টি, তেমনিভাবে বের হওয়ার পথও থাকছে ৪টি। ভিড় হলেও মেলায় ঢুকতে বা বের হতে যেন ভোগান্তিতে না পড়তে হয় সে জন্যই এ ব্যবস্থা। মেলায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হবে স্ট্যান্ড পুলের মাধ্যমে। থাকবে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

এবারের বইমেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরিসর বাড়ানো হয়েছে। গতবার যেটি ছিল দেড় লাখ বর্গফুট, সেটি এবার পরিণত হচ্ছে চার লাখ বর্গফুটে। প্রকাশকদের অনুরোধে শিশু কর্নারটিও থাকবে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশেই।

এবারের মেলায় সর্বমোট ৩৭৮টি প্রকাশনা সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান ৬১৮টি ইউনিট এবং ১৫টি প্যাভিলিয়ন নিয়ে বইয়ের পসরা সাজাবে। তবে প্রকাশনা সংস্থা ৩৭৮ থেকে আরো কিছু বেড়ে ৩৯০ হতে পারে বলে জানিয়েছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ।

এবার প্যাভিলিয়ন থাকবে ১৫টি, চার ইউনিটের স্টল ১৮টি, তিন ইউনিটের স্টল ৩৮টি, দুই ইউনিটের স্টল ১২৭টি এবং এক ইউনিটের স্টল ১৮০টি। বইয়ের সব স্টল থাকবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।

বাংলা একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়াটিক সোসাইটি, জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, শিশু একাডেমি, জাতীয় গণগ্রন্থাগার, নজরুল ইনস্টিটিউট প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের স্টল থাকবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। তবে বাংলা একাডেমির একটি প্যাভিলিয়ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও থাকবে। এ ছাড়াও তাদের অভিধান, পত্রিকা ও শিশুদের বই নিয়ে থাকবে আলাদা স্টল।

বইমেলার আয়োজন নিয়ে বাংলা একডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, ‘মেলাকে সর্বাঙ্গসুন্দর করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা।’ একটি ভালো মেলা উপহার দিতে পারবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

তবে প্রকাশনার মান নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেন শামসুজ্জামান খান। বলেন, ‘আমাদের বইয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। প্রকাশনা, ছাপা, মুদ্রণ, বাঁধাই আরো মানসম্পন্ন হওয়া দরকার। অনেক প্রকাশনারই গ্রন্থ সম্পাদক নেই, ভালো প্রুফ রিডার নেই।’

সাম্প্রতিক দেশব্যাপী জঙ্গি কর্মকাণ্ডের বিষয়টি মাথায় রেখে বইমেলায় এবার থাকছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা। এ জন্য পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরাসহ মেলাপ্রাঙ্গণকে ঘিরে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আর নির্বিঘ্নে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বইমেলায় আসবেন বইপ্রেমিরা, এমনটাই আশা করছেন আয়োজন সংশ্লিষ্টরা।



মন্তব্য চালু নেই