ফ্রান্সকে হারিয়ে ইউরো চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল

ওই একটি মুহূর্তের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা পুরো ফুটবল বিশ্ব। ওই একটি মুহূর্ত দেখার অপেক্ষায় পুরো স্টেডিয়ামে পর্তুগাল। অবশেষে তার দেখা মিলল অনেক বিলম্বে। ১০৯তম মিনিটে। বাম উইং থেকে বলটা পেয়েছিলেন এডের। দু’তিনজন ফরাসি ডিফেন্ডারকে কাটালেন। এরপরই নিলেন মাটি কামড়ানো, অথচ দুর্দান্ত গতির শট। বাম কোন ঘেঁষে সোজা বলটি পৌঁছে গেলো ফ্রান্সের জালে। গোলরক্ষক হুলো লরিস ঝাঁপিয়ে পড়েও হাতের নাগাল পেলেন না। গোওওওল।

এই একটি গোলেই ফয়সালা হয়ে গেলো আগামী চার বছর ইউরোপের মুকুট উঠবে কার মাথায়। নিশ্চিত ফেভারিট হওয়ার পরও, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর মতো তারকা ফুটবলারকে মেরে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেয়ার পরও ফ্রান্স পারলো না পর্তুগালকে হারাতে। বরং তাদেরকে ১-০ গোলে হারিয়ে ইউরো চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলো ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল।

ম্যাচের ৭ম মিনিটেই রোনালদোকে কঠিন ট্যাকলের মাধ্যমে পঙ্গু করে দিলেন ফ্রান্স ফুটবলার পায়েত। এরপর ২০ মিনিটে মাঠ ছেড়েই বাইরে চলে যেতে বাধ্য হন রোনালদো। চোখের পানিতে রোনালদোর চলে যাওয়া দেখেই হয়তো বাকি পর্তুগিজ ফুটবলাররা শপথ নিয়েছিল, ট্রফিটা জিততেই হবে। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত সময় গোলশূন্য থাকার পর অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় খেলা এবং ১৯তম মিনিটে গিয়ে এডের দুর্দান্ত এক শটে গোলটি করেন।

২০০৪ ইউরোয় নিজ দেশের মাটিতে পর্তুগাল ফাইনালে উঠেছিলো প্রথমবারের মতো। কিন্তু সেবার গ্রিসের কাছে হেরে স্বপ্ন ভঙ্গ হয় পর্তুগিজদের। ১২ বছর পর আবারও ফাইনালে উঠলেন রোনালদো এবং তার দল। অবশেষে আর স্বপ্ন বিসর্জন দিতে হলো না। এবার আর রোনালদোকে শিরোপা বঞ্চিত হতে হলো না। নিজে মাঠে থাকতে না পারলেও তার সতীর্থরা তাকে হতাশ করলো না।

প্রথমবারের মতো ইউরো জিতে পর্তুগালের ইতিহাসে রোনালদো-ন্যানিরা নিজেদের সোনালি প্রজন্ম হিসেবেই প্রমাণ করলেন।

অথচ গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিচ্ছিল রোনালদোরা। তিন ম্যাচের কোনটিতেই জিততে পারেনি। তিনটিতেই ড্র। কোনমতে সেরা তৃতীয় দল হয়ে গ্রুপ পর্ব পার হয়েছিল। এরপর দ্বিতীয় রাউন্ডে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ের গোলে জয়, কোয়ার্টার ফাইনালে পোল্যান্ডের বিপক্ষে টাইব্রেকারে এবং সেমিফাইনালে গিয়ে নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করেছিল পর্তুগাল। বেলের ওয়েলসকে হারিয়েছিল দুর্দান্ত খেলে।

অথচ পুরো ম্যাচে কিন্তু আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছিল ফ্রান্সই। আন্তোনিও গ্রিজম্যান শুরুতে যেভাবে হেড আর শট নিয়ে পর্তুগালের গোলপোস্ট কাঁপিয়ে দিচ্ছিলেন, তাতে প্রমাদ গুনতে হচ্ছিল, কতক্ষণ এই সয়লাব ঠেকিয়ে রাখবে পর্তুগাল।

কিন্তু পর্তুগিজ গোলরক্ষক রুই প্যাট্রিসিও যেন আজ ফ্রান্সের সামনে সাক্ষাৎ হিমালয় পর্বত হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ফ্রান্সের সামনে। মাতুইদি, সিসোকো, জিরুড, গ্রিজম্যান, এভরা থেকে শুরু করে ফরাসি ফুটবলারদের অসংখ্য আক্রমণ জীবনবাজি রেখে ফিরিয়েছেন তিনি। নির্ধারিত সময়ের শেষ মুহূর্তে গিগন্যাকের একটি শট তিনি ফেরাতে পারেননি। তবে ভাগ্য ভালো, বল সাইডবারে লেগে ফিরে যায়।

পর্তুগালের রাফায়েলের নেয়া একটি ফ্রি কিক শটও ফিরে আসে গোলপোস্টে লেগে। এর একটু পরই অবশ্য গোলে শট নিয়ে জয়-পরাজয় নির্ধারণ করে ফেলেন এডের।

ফাইনাল শেষে অধিনায়ক হিসেবে ইউরো শিরোপাটা নিজের হাতেই তুলে নিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। ফুটবলার হিসেবে যেন এটাই তার সবচেয়ে বড় পূর্ণতা।



মন্তব্য চালু নেই