ফের বেড়েছে ইয়াবার আগ্রাসন

নেশার মধ্যে হিরোইনকে মরণ নেশা হিসেবে অ্যাখা দেয়া হতো। সব নেশাকে পিছনে ফেলে এখন ইয়াবায় প্রথম স্থান দখল করে নিয়েছে। লাভ ও বেশি, তাই টেকনাফ সীমান্ত কেন্দ্রিক ইয়াবা পাচারের আগ্রাসন ফের বেড়ে গেছে।
জেলার বিভিন্ন এলাকার চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ীদেরও তৎপতার দেখা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক বড় চালানসহ বেশ কয়েকটি ইয়াবা চালান ধরা পড়ায় বিষয়টি আবার আলোচনায় উঠে আসছে। গোয়েন্দা সংস্থা ও বিজিবিসহ দায়িত্বশীল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও বিষয়টি সেভাবে দেখছেন।
এ প্রসঙ্গে টেকনাফ ৪২ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ানের (বিজিবি) অধিনায়ক কর্নেল লে. আবুজার আল জাহিদ বলেন, ‘ইয়াবা পাচার রোধ করা যাচ্ছে না কোনোভাবেই। যৌথ অভিযানের পর কিছুটা কমলেও বিগত মাসের বেশি সময় ফের বেড়ে গেছে।’
টেকনাফ বিজিবির তথ্যমতে, গত ২০ দিনে ৯টি অভিযানে ১ লাখ ৯১ হাজার ২৫২ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে। যার আনুমানিক মূল্য ৬ কোটি টাকা। এসব চালানের সঙ্গে আটক করা হয়েছে ১১ ইয়াবা ব্যবসায়ীকে।
জেলা পুলিশ জানায়, টেকনাফ থানা পুলিশসহ পুলিশ বিভাগ ২২ হাজার ৬৫০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে। এর মূল্য ৬৮ লাখ টাকা। একই সঙ্গে ২১ জনকে আটক করেছে পুলিশ। সর্বশেষ টেকনাফ থানা পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এক তালিকাভুক্ত ইয়াবা গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এ সময় ইয়াবা ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন বলছেন, তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীরা কৌশল অবলম্বন করে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ইয়াবা পাচার অব্যাহত রেখেছে। এলাকায় ফিরেই সব ঠিকঠাক করে ফের ইয়াবা পাচারে নেমে পড়েছে ওইসব ইয়াবা ব্যবসায়ীরা।
টেকনাফে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীরা এখন প্রকাশ্যে চলাফেরা করছে। পুলিশের নাকের ডগায় ঘুরলেও পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছে না।
সাংসদ বদির আস্থাভাজন ইয়াবা সম্রাট জাকু সহযোগী ফরিদসহ ক্রসফায়ারে নিহত হন। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের নির্দেশে যৌথ অভিযান শুরু হলে সব ইয়াবা ব্যবসায়ী এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। এরপর প্রায় ৩/৪ মাস এলাকায় কাউকে দেখা যায়নি। এর মধ্যে অনেকে মায়ানমার, দুবাইসহ দেশের বিভিন্ন গোপন জায়গায় পালিয়ে যায় বলে জানা যায়। কিন্তু এরপরই রহস্যজনকভাবে তারা আস্তে আস্তে এলাকায় ফিরতে শুরু করে। বর্তমানে সব চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী এলাকায় অবস্থান করছেন বলে স্থানীয়রা নিশ্চিত করেছেন। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশের সঙ্গে তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীর গভীর সখ্যতারও অভিযোগ উঠছে।
খোদ টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তার হোসেনের বিরুদ্ধেই ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ার অভিযোগ উঠছে। তবে অভিযোগ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখান করেছেন তিনি।
স্থানীয় সচেতন লোকজনের দাবি, থানায় যোগ দেয়ার কিছু দিনের মধ্যেই ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেন ওসি মোক্তার হোসেন। তার ইন্ধনেই অনেক তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী ফের ইয়াবা ব্যবসায় নেমে পড়েছেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে ওসি মোক্তার হোসেন বলেন, ‘ইয়াবা ব্যবসায়ীরাই আমার বিরুদ্ধে অপবাদ ছড়াচ্ছে। সাধারণ লোকজনের কাছে জানতে চাইলে প্রকৃত তথ্য পাবেন।’
তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছেনা কেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তালিকাভুক্ত কিছু ইয়াবা ব্যবসায়ী এলাকায় ফিরলেও গোপনে চলাফেরা করছে। আমি যোগ দেয়ার পর ২০ জন তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
প্রকাশ্যে চলাফেরা করা তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, তারা ‘উপর মহল’ এর ইশারায় প্রকাশ্যে চলাফেরা করছে। তারা ‘বিশেষ পাস’ নিয়েই এলাকায় ফিরেছেন।
তবে তাদের দাবি নাকচ করে দিয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘এ রকম প্রশ্নই আসে না। এ সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র আমাদের হাতে নেই। এটা বলে তারা প্রতারণার চেষ্টার করছেন।’
গত মঙ্গলবারও ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধ’র প্রসঙ্গ টেনে অতিরিক্তি পুলিশ সুপার বলেন, ‘ইয়াবা পাচার রোধ ও ব্যবসায়ীদের দমনে পুলিশের অবস্থান আগের মতোই কঠোর রয়েছে এবং তা বজায় থাকবে।’
টেকনাফ ৪২ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ানের (বিজিবি) অধিনায়ক কর্নেল লে. আবুজার আল জাহিদ বলেন, ‘ইয়াবা ব্যবসায়ী ও ইয়াবা সেবনকারীদের ঠেকাতে না পারলে কখনো ইয়াবা পাচার রোধ করা যাবে না। এ লক্ষ্যে বিজিবির অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
কক্সবাজারে নতুন যোগ দেয়া পুলিশ সুপার শ্যামল কান্তি নাথ সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইয়াবা পাচার জিরো টলারেন্সে দেখানোর জন্য টেকনাফ থানাসহ সব থানা পুলিশকে নিদের্শ দেয়া হয়েছে। সেভাবে কাজও হচ্ছে।’



মন্তব্য চালু নেই