সেতুমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এমপিকে মারধর

ফেনী-৩ আসনের ২ উপজেলায় হরতাল চলছে, আ.লীগের প্রত্যাখান

ফেনী-৩ আসনের সংসদ সদস্য (স্বতন্ত্র) ও জেদ্দা আওয়ামী লীগ সভাপতি হাজী রহিম উল্ল্যাহকে মারধরের ঘটনায় রোববার সোনাগাজী ও দাগনভূঞায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলছে। হরতালে সকাল ১০টা পর্যন্ত কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। পুলিশ বিভিন্ন স্থান থেকে এমপি সমর্থিত ৭জনকে আটক করেছে।
এদিকে হরতাল প্রত্যাখান করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। শনিবার রাত সাড়ে ১২টায় উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রহুল আমিন উপজেলা শহরে এমপির বিরুদ্ধে জুতা মিছিল করে হরতাল প্রত্যাখানের ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মাঠে থেকে হরতাল প্রতিহত করবে। এর কিছুক্ষণ পর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রহুল আমিনের কলেজ রোডস্থ বাসভবনে বোমা হামলা করে এমপি সমর্থকরা। রাতে শহরের বিভিন্ন স্থানে মুর্হুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় আওয়ামী লীগ।
এমপির ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস) জুলফিকার দিদার হোসেন জানান, রাতে এমপি সমর্থিত নেতাকর্মীর বাড়িতে হামলা করেছে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা।
সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জাফর মো.সালেহ ৭ জন আটকের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
প্রসঙ্গত শনিবার সন্ধ্যায় ফেনী সার্কিট হাউজে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের উপস্থিতিতে জেলা যুবলীগের যুগ্ন-আহ্বায়ক শুসেন চন্দ্র শীল, যুগ্নআহ্বায়ক স্বপন মিয়াজী ও যুবলীগ নেতা আপনের নেতৃত্বে ৪০-৫০ জন সশস্ত্র ক্যাডার সংসদ সদস্য হাজী রহিম উল্ল্যাহকে মারধর করে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এর প্রতিবাদে রোববার সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয়া হয়।
এমপির ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস) জুলফিকার দিদার হোসেন হরতালের সত্যতা নিশ্চিত করেছন।

সেতুমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এমপিকে মারধর:
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের উপস্থিতিতে ফেনী-৩ আসনের সংসদ সদস্য (স্বতন্ত্র) ও জেদ্দা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী রহিম উল্ল্যাহকে মারধর করেছে যুবলীগ নেতারা। এ সময় অস্ত্র উঁচিয়ে ফুলগাজী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান একরামের মতো মেরে আগুনে জ্বালিয়ে দেয়ারও হুমকি দেন তারা।
শনিবার সন্ধ্যায় ফেনী সার্কিট হাউজে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অবস্থান করার সময় এ ঘটনা ঘটে।
হাজী রহিম উল্ল্যাহএ ব্যাপারে হাজী রহিম উল্যাহ অভিযোগ করে জানান, যুবলীগ নেতারা তাকে ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর নেতৃত্ব বা তার নির্দেশ না মানলে ফুলগাজী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান একরামের মতো মেরে আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হবে বলে হুমকি দেন।
ঘটনার পর পুলিশ পাহারায় এমপি হাজী রহিম উল্যাহ ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এ ঘটনার জের ধরে ফেনী-সোনাগাজী সড়কের ডাকবাংলা ও মতিগঞ্জ এলাকায় এমপি সমর্থকরা গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে।
হাজী রহিম উল্যাহ আরো জানান, শনিবার সকালে তার নির্বাচনী এলাকা দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাসিক নিয়মিত বৈঠকে উপস্থিত হন তিনি। বৈঠক চলাকলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে একাধিক ককটেল বিস্ফোরিত হয়। বৈঠক শেষে উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নে একটি পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচিতে যাওয়ার পথে তার সৌজন্যে দেয়া তোরণে দুর্বৃত্তরা আগুন দেয়। পাশের ইউনিয়নে অপর একটি কর্মসূচি থাকলেও দাগনভূঞা উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক দিদারুল কবির রতন তাকে যেতে বাধা দেন। ওপরের নির্দেশ থাকায় বাধা দেয়া হয়েছে বলে চেয়ারম্যান তাকে জানান।
এদিকে, নোয়াখালীতে দলীয় সম্মেলন শেষে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিকেলে ফেনী সার্কিট হাউজে অবস্থান করছিলেন। এ সময় রহিম উল্ল্যাহ দাগনভূঞার ঘটনাটি মন্ত্রীকে অবগত করার জন্য সার্কিট হাউজে যান। মন্ত্রী তখন সার্কিট হাউজের দোতলার একটি কক্ষে মাগরিবের নামাজ পড়ছিলেন। এ সময় জেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক শুসেন চন্দ্র শীল, স্বপন মিয়াজী ও যুবলীগ নেতা আপনের নেতৃত্বে ৪০-৫০ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী এমপিকে মারধর করে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
এ সময় মন্ত্রী হট্টগোল শুনে পুলিশে খবর দিলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সাইফুল হক ও সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সামছুল আলম সরকার এমপিকে উদ্ধার করেন।
তবে জেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক শুসেন চন্দ্র শীল অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না এবং এরকম কিছুই দেখেননি।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বিকম জানান, এমপি রহিম উল্ল্যার সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। তবে তিনি বিস্তারিত কিছুই জানেন না।
এ ব্যাপারে ফেনীর সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি, সার্কেল) সামছুল আলম সরকার জানান, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি ফেনীতে উপস্থিত থাকায় তিনিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা ব্যস্ত ছিলেন। সার্কিট হাউজে হট্টগোলের খবর পেয়ে তিনি রহিম উল্ল্যাহকে তার ব্যক্তিগত গাড়িযোগে নিরাপদে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে সহায়তা করেন।
ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সাইফুল হক জানান, তিনি হট্টগোলের বিষয়টি শুনেছেন। তবে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছুই জানেন না।
এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, উত্তরণ নামে স্থানীয় একটি পত্রিকায় ‘হাজী রহিম উল্লাহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী হচ্ছেন’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ সংবাদের জের ধরে দলীয় নেতাকর্মীরা হাজি রহিম উল্ল্যাহর উপর ক্ষিপ্ত হয়েছেন।
অন্যদিকে, এমপিকে মারধরের ঘটনায় ফেনী-সোনাগাজী সড়কের ডাকবাংলা ও মতিগঞ্জ এলাকায় গাছের গুড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা।
তবে সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জাফর মো. সালেহ জানান, সড়ক অবরোধ ও ভাঙচুরের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
এদিকে, সংসদ সদস্যকে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে ফেনী-৩ (দাগনভুঁইয়া-সোনাগাছী) আসনের নির্বাচনী এলাকায় আগামীকাল রোববার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালনের ঘোষণা দিয়েছে এমপির সমর্থকরা।
শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে হরতাল ঘোষণার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এমপি হাজী রহিম উল্ল্যার এপিএস জুলফিকার ফিজার হোসেন মাসুদ।



মন্তব্য চালু নেই