প্রোটিয়াদের ‘চোকার্স’ বানিয়ে

ফাইনালে নিউজিল্যান্ড

নাটকের চেয়েও চরম নাটকীয়। সিনেমার চেয়েও সিনেম্যাটিক। অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে দক্ষিণ আফ্রিকা আর নিউজিল্যান্ডের প্রথম সেমিফাইনাল ম্যাচটিকে এর চেয়েও কী বিশেষ কোন বিশেষনে বিশেষায়িত করা যায়! অভিধানবীদদের হয়তো নতুন কোন শব্দ খুঁজতে হবে। তার আগে আপাতত খেলার ফল দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৪ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের ফাইনালে নিউজিল্যান্ড।

ফিল্ডিংয়ের জন্য বিশ্বজোড়া খ্যাতি যাদের, সেই দক্ষিণ আফ্রিকাই কি না অকল্যান্ডে আজ পরতে পরতে মিস ফিল্ডিংয়ের নমুনা দিল! শুরু থেকে ক্যাচ মিসের মহড়া। মাঝে পেন্ডুলামের মত যখন ম্যাচ দুলছিল, তখন গ্র্যান্ট ইলিয়টকে সহজ রান আউটের সুযোগ পেয়েও ডি ভিলিয়ার্সের অমার্জনীয় ভুলের খেসারত শেষ পর্যন্ত দিতে হলো দক্ষিণ আফ্রিকাকে। এরপরও অন্ততঃ ৪বার জীবন পেলেন তিনি প্রোটিয়া ফিল্ডারদের ভুলের কারণে। সেই ইলিয়টই শেষ করে দিলেন দক্ষিণ আফ্রিকাকে এবং শেষ পর্যন্ত ৭৩ বলে ৮৪ রান করে জিতিয়ে দিল নিউজিল্যান্ডকে।

আবার লুক রনকি যখন বিপজ্জনক হয়ে উঠছিলেন তখন নিশ্চিত রানআউট করতে পারলেন না উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি কক। এরপর আরও একটি ভুল করলেন ডি কক। ইলিয়ট রান আউটের সুযোগ দিয়েছিলেন আরও একবার। কিন্তু স্ট্যাম্পে বলই লাগাতে পারেননি তিনি। এরপর আরও একবার ক্যাচ তুলেছিলেন ইলিয়ট। দু’জনের কে ক্যাচ ধরবে করতে করতে বল পড়ল মাটিতে।

সবচেয়ে বড় ভুলটি হলো ৪২তম ওভারের শেষ বলে। মরকেলের বলে ইলিয়ট ক্যাচ তুলেছিলেন। বাউন্ডারি লাইনে ফারহান বেহার্ডিয়েন ক্যাচটি ধরেই পেলেছিলেন প্রায়। কিন্তু জেপি ডুমিনি এসে ধাক্কা দিয়ে ক্যাচটি ফেলে দিলেন হাত থেকে। এমনই নানা ঘটনায় ম্যাচটি হাত থেকে ফেলে দিল প্রোটিয়ারা। আবারও তারা প্রমান করলো তারা যে কত বড় চোকার্স।

লক্ষ্য ৪৩ ওভারে ২৯৮। বিশালই বলা চলে। কিন্তু কিভাবে এই লক্ষ্য তাড়া করতে হয় সেটা যেন খুব ভালোভাবেই জানেন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। টার্গেট তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই স্টেইন-ফিল্যান্ডারদের পরিণত করেছেন গলির বোলারে।

একের পর এক বল আছড়ে ফেলছেন বাউন্ডারির বাইরে। মাত্র ৫ ওভারেই স্কোর বোর্ডে দলীয় রান তুলে ফেলেছেন ৭১। উইকেট হারায়নি একটিও। এরই মধ্যে ২২ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করে ফেললেন কিউই অধিনায়ক।

তবে ষষ্ঠ ওভারে এসে রান চেক দেন ইমরান তাহির। ঝড়ের মধ্যে মেডেন নেন তিনি। সপ্তম ওভারে এসে প্রথম বলেই ম্যাককালামের উইকেট তুলে নেন মরনে মর্কেল। তার ক্যাচটি ধরেন ডেল স্টেইন।

দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা যদি হয় ম্যাককালাম ঝড়ে, তাহলে পরের অংশ বলতে হবে মর্কেল তোপে। কিউই অধিনায়কের উইকেট নিয়ে কেবল থামেননি, ইনফর্ম ব্যাটসম্যান কেনে উইলিয়ামসনকেও বোল্ড করে দিলেন মর্র্কেল। ১১ বলে মাত্র ৬ রান করে সাজঘরে ফিরলেন উইলিয়ামসন।

পর পর দুই উইকেট পড়ে গেলেও কিউইদের প্রত্যাশার পারদ একটুও কমেনি। কারণ, তখনও উইকেটে মার্টিন গাপটিল। যিনি কি না কোয়ার্টার ফাইনালে একাই করেছিলেন অপরাজিত ২৩৭ রান। অসাধারণ এই ইনিংসটি যদি আবারও খেলা যায় তাহলে তো জয় নিশ্চিত।

গাপটিল চেষ্টাও করছিলেন। ধীরে সুস্থে রস টেলরকে নিয়ে একটি জুটি গড়ার লক্ষ্যে ব্যাট করে যাচ্ছিলেন তিনি। ৩৮ বলে ৩৪ রান এসে গেছে তার ব্যাট থেকে। কিন্তু পয়েন্টে টেলে দিয়েই দ্রুত একটি রান নিতে যান রস টেলর। তাতে টেলরের কোন ক্ষতি না হলেও উইকেট পড়েছে গাপটিলের। ক্রিজে পৌঁছার আগেই আমলার থ্রোতে তার স্ট্যাম্প ভেঙে দিলেন কুইন্টন ডি কক। সম্ভাবনা অনেকটা ফিকে হয়ে গেলো নিউজিল্যান্ডেরও।

নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট পড়ছে বলা যায়। গ্র্যান্ট ইলিয়টকে নিয়ে রস টেলরের চেষ্টা ছিল একটি কার্যকরি জুটি গড়ার জন্য। কিন্তু প্রোটিয়া স্পিনার জেপি ডুমিনির ঘুর্ণিতে পারলেন না টিকে থাকতে। ২১ রানের জুটি গড়ার পর ব্যাক্তিগত ৩০ রানে থাকতেই ২২তম ওভারের ৪র্থ বলে গ্লাভসে বল লাগিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন ডি ককের হাতে। পড়লো চতুর্থ উইকেট।

208489পঞ্চম উইকেট জুটিগে গ্র্যান্ট ইলিয়ট আর কোরি এন্ডারসন মিলে নিউজিল্যান্ডকে নিয়ে যাচ্ছিলেন স্বপ্ন সম্ভবের সীমানায়। দু’জন মিলে গড়েন ১০৩ রানের জুটি। দলকেও নিয়ে আসেন জয়ের একেবারে কাছাকাছি। একই সঙ্গে দু’জন হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করে ফেলেন। এরই ফাঁকে গ্র্যান্ট ইলিয়টকে রান আউট করার সুযোগ পেয়ে উত্তেজনা বশতই সেটা নষ্ট করেন ডি ভিলিয়ার্স।

তবে ৩৮তম ওভারের শেষ বলে মরনে মর্কেলকে খেলতে গিয়ে আকাশে বল তুলে দেন কোরি এন্ডারসন। ৫৭ বলে ৫৮ রান নিয়ে ব্যাট করছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফ্যাফ ডু প্লেসিস বলা যায় একেবারে মাটিতে শুয়ে পড়ে ক্যাচটি তালুবন্দী করে নেন। এরপর ৭ বলে ৮ রান করে ফিরে যান লুক রনকি।



মন্তব্য চালু নেই