ফাইট ফর চিলড্রেন কার্যক্রম ও কিছু কথা

হামিদা আক্তার স্মৃতি : মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে, একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না ? ও বন্ধু! কে ধরিবে হাল, কে তুলিবে পাল, কে করিবে কাজ আর কে জাগিবে আজ ? আসুন শিশুদের পাঁশে দাঁড়াই দেখিয়ে দেই আমরাও পারি দেশ ও এই বিশ্বের হাল ধরতে। শিশুরাই হবে এদেশের দেশ ও জাতীর কর্ণধার। তারাই ধরবে ভবিষৎ এ জাতীর হাল। তাই আসুন অসহায় পথ শিশুদের মুখে হাসি ফুটাই। উক্তিগুলোকে বুকে ধারন করে বিভিন্ন শ্লোগানে কিংবা ব্রত নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয় ”ফাইট ফর টিলড্রেন” নামের একটি অরাজনৈতিক শিশু সহযোগিতা মূলক সংস্থা। সংস্থাটি ছোট্ট পরিশরে হলেও এর ব্যাপ্তি অনেক।

২০১৬ সালে ২১ ফ্রেব্রুয়ারী নীলফামারীর ডিমলা আরবিআর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হানিফ সরকারের নেতৃত্বে বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণী ছাত্র মোতাওক্কিল বিল্লাহ শাহ্কে প্রধান করে একটি কমিটি করে এ সংস্থার যাত্রা শুরু হয়। এ সংস্থার অন্যান্য উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্যরা হলেন-আহসান হাবিব আশিক,রনি ইসলাম,আহসান হাবিবুল্লাহ শাহ। কমিটির কার্যকরী সদস্যরা হলেন-সৌম্য, সম্পদ, সৈকত, পিযুষ ও বারি প্রমূখ। সংস্থাটি কার্যক্রম শুরু করে পথ শিশু অসহায় ও গরীব দুস্থ শিশুদের পাশে দাঁড়াতেই হাতে নেয় বিভিন্ন কর্মসুচী। এসব অসহায় শিশুদের খুঁজে বের করে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে তাদের পাঁশে দাঁড়িয়ে যায় সংস্থাটি। সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা সালেই জেএসসি ও এসএসসি দুস্থ পরীক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ কলম, পেন্সিলসহ পরীক্ষা সামগ্রী তুলে দেয়ার মাধ্যমে সংস্থাটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। একজন গরীব অসহায় আইসক্রীম বিক্রেতার জন্মগত লিভার সমস্যা নিয়ে দরিদ্র ঘরে ঘরে জন্ম নেওয়া একটি নবজাতকের সুস্থ্যতার দায়িত্ব নেয় সংস্থাটি। পরিবারটি গরীব ও অসহায় হওয়ায় টাকা সংগ্রহ করে নবজাতবটিকে বাঁচানো সম্ভব নয় পরিবারের পক্ষে। খবর পেয়ে সংস্থাটি ছুটে যায় শিশুটির পাশে দাঁড়াতে। শিশুটিকে বাঁচাতে সংস্থাটির সদস্যরা শুরু করে অর্থ সংগ্রহের কাজ। এ জন্য তারা রোড শো, পথে মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে শিশুটির জন্য সাহায্যে চেয়ে শ্রমিক শুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও বিভিন্ন জনের কাছে হাত পেতে অর্থ নিয়ে এবং তা সংগ্রহ করে অর্থ সংগ্রহের সমুদয় টাকা তুলে দেয় দরিদ্র পরিবারের হাতে। একটি পর্যায়ে এসে তারা ঐ শিশুটিকে বাঁচাতে শিশুটির পরিবাবের হাতে তুলে দেয় সংগ্রহকৃত ৫০ হাজার টাকা। মা বাবা হারানো ৬ষ্ট শ্রের্ণীতে পড়–য়া শোভা রানী রায় স্কুল ড্রেসের অভাবে স্কুলে যেতে পারছিলো না। এ খবর পৌঁছে যায় ফাইট ফর চিলড্রেন সংস্থাটির কাছে। সংস্থাটি ব্যবস্থা করে ঐ অসহায় শিশু শোভা রানীর জন্য স্কুল ড্রেসের। সংস্থাটির পক্ষ থেকে তুলে দেওয়া হয় নতুন স্কুল ড্রেস, শিক্ষা উপকরন ও নিশ্চয়তা দেয়া হয় তার ১ বছরের ফ্রি লেখাপড়া ও প্রাইভেট পড়ানোর ব্যবস্থা। তিস্তানদীর কবলে পড়ে বন্যা কবলিত এলাকার দুর্গম চরাঞ্চলে অসহায় শিক্ষার্থীদের পাঁশে দাঁড়াতে সংস্থাটি মেধাবী ছাত্রীদের মাঝে বিতরণ করে নতুন কাপড়। তাদের হাতে তুলে দেয়া হয় নগত অর্থ ও বস্ত্র। বে-সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হোয়াইট বোর্ডের অভাবে লেখাপড়া শিখতে কষ্ট হচ্ছিলো ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের। ফলে সংস্থাটি ৫টি এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করে হোয়াইট বোর্ড। ফাইট ফর চিলড্রেন সংস্থাটির সদস্যরা মনে করেন একটি শিশুর মুখে হাসি ফুটানোই যেন একমাত্র ব্রত তাদের। সংস্থার সদস্যরা আরো বলেন, আসুন অসহায় পথ শিশুদের পাশে দাড়াই, তাদের মুখে হাসি ফিরিয়ে দেই। আমরা একটি শিশুর মুখের হাসির জন্য লড়াই করি।

প্রসঙ্গত, জাতিসংঘ শিশু অধিকার কনভেনশন বা সনদে (সিআরসি) স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। ১৯৯০ সালের আগষ্ট মাসে স্বাক্ষর করলেও মুলত ১৯৮৯ সালের ২০ নভেম্বর সাধারণ পরিষদে গৃহীত হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশ এই সনদ গ্রহণ করে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, বাংলাদেশ সরকার সনদটিতে স্বাক্ষর করে শিশু অধিকার রক্ষায় অনেক প্রশংসণীয় উদ্যোগ নিয়েছে। জাতীয় শিশু নীতিমালা ২০১১,শিশু আইন ২০১৩, জাতীয় শিক্ষা নীতিমালা ২০১০ এবং জাতীয় শিশু শ্রম নিরোধ নীতিমালা ২০১০ প্রনয়ন উল্লেখযোগ্য। সরকারের পাশাপাশি উন্নয়ন সংস্থাগুলো তাঁদের কর্মকৌশল গ্রহণ ও বাস্তবায়নে শিশু অধিকার সনদে অর্ন্তভুক্ত অনুচ্ছেদগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। যার ফলে দেশে শিশু শিক্ষার হার বেড়েছে, শিশু মৃর্ত্যুহার কমেছে, স্কুলে শারীরিক শাস্তি অবৈধ করা হয়েছে এবং শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজের তালিকা প্রণয়ন করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এতো সাফল্যের পরেও প্রশ্ন রয়েই গেছে। দেশের শিশুরা তাদের সকল অধিকার পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করতে পারছে কি ?

ফাইট ফর চিলড্রেন এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান মোতাওয়াক্কীল বিল্লাহ শাহ বলেন,আমরা জানি যে, আমাদের মোট জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ শিশু। তাদেরকে এক জায়গা থেকে দেখভালের জন্য সরকারের আলাদা কোন বিভাগ বা অধিদপ্তর নেই। মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি ডেস্ক বাংলাদেশের সবশিশুর ব্যাপারগুলো দেখাশুনা করছে। আর দেশের ৪৫ শতাংশ জনগোষ্ঠীর (শিশুদের) বিষয়গুলো যদি একজন লোক দেখে তাহলে কিভাবে শিশু উন্নয়ন হবে ? শিশুদের জন্য পৃথক কমিশন গঠন করতে হবে। তিনি আরো বলেন, শিক্ষার জন্য অনেক অর্থ দিচ্ছেন সরকার, কিন্তু এর কোন ট্রেকিং ব্যবস্থা নেই। বর্তমানে এখনও পথশিশু বাড়ছে, শিশুশ্রম বাড়ছে, স্কুল থেকে ঝড়ে পড়ার হার বাড়ছে। এদের জন্য কিছু করতে বাজেটে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। পাশিপাশি সমাজের অগ্রজ মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে এসব শিশুদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে। সমাজকে ভাবতে হবে যেন আর কোন পথ শিশু কিংবা অসহায় দরিদ্র পরিবারের শিশুরা কোন কারনেই ঝড়ে পরে না যায়। বন্ধ হয়ে না যায় তাদের চলার গতিপথ। তাই বলছি আসুন আমরা সবাই যার যা অবস্থান থেকে শিশুদের পাশে দাঁড়াই। লেখক : সাংবাদিক



মন্তব্য চালু নেই