ফরাসি ওপেনের মুকুট জিতলেন সেরেনা

চেক প্রতিদ্বন্দ্বী লুসি সাফারোভার শটটা নেটের আগেই লাল সুড়কির মাটি ছুঁল। র‌্যাকেটটা ফেলে দিয়ে দু’টো হাত উপরে তুলতে দেখা গেল সেরেনা উইলিয়ামসকে। চ্যাম্পিয়নশিপের চেনা সেই চিৎকার নেই। কোর্ট জুড়ে লাফগুলোও দেখা গেল না। শারীরিক কষ্টটা স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছিল। পুরো ম্যাচেই যা কমবেশি ভুগিয়েছে মার্কিন তারকাকে। তবু আটকাল না সেরেনার ২০তম গ্র্যান্ড স্লাম জয়।

তৃতীয় ফরাসি ওপেন জয়ের স্কোর সেরেনার পক্ষে ৬-৩, ৬-৭, ৬-২ সেট। ১৯৯১ -৯২ সালে মনিকা সেলেস পরপর যুক্তরাষ্ট্র ওপেন, অস্ট্রেলিয়ান ওপেন এবং ফরাসি ওপেন জিতেছিলেন। ২০১৪ যুক্তরাষ্ট্র ওপেন থেকে এই ফরাসি ওপেন পর্যন্ত জিতে সেই কৃতিত্ব ছুঁয়ে নতুন নজির গড়তে চলেছেন সেরেনা। অবশ্য ২০০৩ সালে টানা চারটি গ্র্যান্ড স্লাম জয় করেছিলেন সেরেনা।

ম্যাচ পয়েন্ট পকেটে আসার পর কোচ ও প্রেমিক পাট্রিক মৌরাতোগ্লু এক হাতে দু’টো আঙুল দেখাচ্ছিলেন, অন্য হাত মুঠো করা। বোঝাতে চাইছিলেন ২০। সেরেনার বাকি রাখা উল্লাস দেখানোর দায়িত্বটা ছিল যেন এই ফরাসিরই। দু’হাত তুলে লাফালেন। অন্যদের শুভেচ্ছা বিনিময়। সেরেনার দিকে হাত নাড়া। শুধু কোচই বা কেন, সেরেনার জন্য শুভেচ্ছা জানাতে ব্যস্ত তখন টেনিস দুনিয়ার নতুন-পুরোনোরা।

ক্যারোলিন ওজনিয়াকি, কিম ক্লিস্টার্স, মারিয়ন বার্তোল্লিদের পাশাপাশি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোতে সেরেনার জন্য শুভেচ্ছা নিয়ে হাজির অন্য খেলার তারকারাও। বাস্কেটবলের কোবে ব্রায়ান্ট, যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলের ল্যান্ডন ডোনোভান বা মেয়েদের ফুটবলের হোপ সোলো। ৩৩-এর সেরেনার কুড়ি-তে মজে গেল সারা বিশ্ব। যদিও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের পর সচ চাপা পড়ে গিয়েছিল।

অথচ অসুস্থতার জন্য শনিবার ফাইনালে সেরেনার নামাই অনিশ্চিত ছিল। বৃহস্পতিবার সেমিফাইনালের সময়ই তাকে বারবার কাশতে দেখা যায়। ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপে তারপরের প্র্যাক্টিস ও সাংবাদিক সম্মেলন বাতিল করে দেন। এমনকি ফাইনালের কোর্টেও প্র্যাক্টিস করেননি। ফাইনালের আগে মাত্র দু’ঘণ্টা প্র্যাক্টিস করেছিলেন মার্কিন কৃষ্ণকলি।

শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হতে পেরে সেরেনার বক্তব্য, ‘ম্যাচটা খুব কঠিন ছিল। লুসি খুব ভালো খেলছিল। রোলাঁ গারোতেই নিজের ২০তম গ্র্যান্ড স্লাম সম্পূর্ণ করতে পারাটা আমার কাছে স্পেশাল। এটা আমার কাছে স্বপ্ন ছিল। এখানকার দর্শকও খুব সুন্দর।’

শনিবার ফাইনালে প্রথম সেট দখল করেন একবার সাফারোভার সার্ভিস ভেঙে। এবারের টুর্নামেন্টে প্রথম সেট খোয়ালেন সাফারোভা। এরপর দ্বিতীয় সেটে সেরেনা যখন ৪-১, ৪০-১৫-তে এগিয়ে, তখন মনে হচ্ছিল কোথায় শারীরিক অসুস্থতা? আর মাত্র কয়েক মিনিট পরই হয়তো তাঁর হাতে উঠবে ট্রফিটা। সেই সময় তিনটে ডাবল ফল্টে হঠাৎই ঘুরে যায় ম্যাচের চিত্র। পরপর জিতে সাফারোভা ৬-৬ করে ফেলেন। টাইব্রেকারে ৭-৬ জিতে যান চেক টেনিস তারকা।

‍তিন নম্বর সেটের শুরুতেই সেরেনার সার্ভিস ভেঙে ২-০ এগিয়ে যান সাপারোভা। চেক বিপ্লবের শেষ ওখানেই। ওই সময়ে সেরেনা নিজের উপর রাগে চেঁচামেচি করেন। নিজেকেই গালাগাল করে আম্পায়ারের সতর্কতার সামনেও পড়েন। সেরেনা এর পর টানা ছ’টি গেম জিতে ম্যাচ ছিনিয়ে নেন।

সামনে ২২টি গ্র্যান্ড স্লাম নিয়ে স্টেফি গ্রাফ, ২৪টি গ্র্যান্ড স্লাম নিয়ে মার্গারেট কোর্ট রয়েছেন সেরেনার সামনে। ৩৩ বছরেও সেরেনার সামনে যেন নতুন এক চ্যালেঞ্জই অপেক্ষা করছে।

সর্বোচ্চ গ্র্যান্ড স্লামজয়ী
মার্গারেট কোর্ট-২৪ *
স্টেফি গ্রাফ-২২
সেরেনা উইলিয়ামস-২০*

সেরেনার ২০ যেভাবে
অস্ট্রেলিয়ান ওপেন-৬টি
ফরাসি ওপেন-৩টি
উইম্বলডন-৫ টি
যুক্তরাষ্ট্র ওপেন-৬টি



মন্তব্য চালু নেই