প্লাস্টিকের বোতলে তৈরি বাড়ি!

প্লাস্টিকের বোতলের পাহাড় সমান স্তূপ। পাশেই নির্মাণাধীন বাড়ি, যার দেয়াল তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে এসব বোতল। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুরের নওদাবাস গ্রামের এক দম্পতী ঢাকার চারতলা বাড়ি বিক্রি করে গ্রামে ফিয়ে বানিয়েছেন এই প্লাস্টিক বোতলের বাড়ি।

রাশেদুল আলম ও আছমা বেগম গ্রামের ছোট ছোট দোকান থেকে সংগ্রহ করেছেন নানা ধরনের প্লাস্টিকের বোতল। আর সেই বোতলের তৈরি হচ্ছে বাড়ি।

এই দম্পতীর স্বপ্ন ছিল পরিবেশবান্ধব একটি বাড়ি তৈরি করা। আসমা বেগম বলেন, প্রত্যন্ত গ্রামের চারদিকে সবুজ বনানী আর ফসলের মাঠ। এমন দৃশ্য শহরের কোথায় পাওয়া যেত না। আমার জন্ম, শৈশব, কৈশোর-বড় হওয়া সব কিছু শহরে। গ্রামের কোলাহল মুক্ত চারদিকের পরিবেশ, সবুজ মাঠ আমাকে শিশুকাল থেকে টানছে।

প্রথমে এটাকে পাগলামি বলে উড়িয়ে দিয়েছেন অনেকে। ভাইয়েরা, আত্মীয়-স্বজনরা সবাই এর বিরোধিতা করেছেন। কিন্তু রাশেদুলকে দমাতে পারেনি। ভাংগারির দোকানে দোকানে গিয়ে রাশেদুল সংগ্রহ করেন তার প্রয়োজন মতো ৪০ মণের বেশি প্লাস্টিকের বোতল।

প্লান পরিকল্পনা অনুযায়ী বাড়ির ফাউন্ডেশন, ভিত্তিস্থাপন, নিলটন পুরো কাজেই সহযোগিতা করছে স্থানীয় শ্রমজীবী ও রাজমিস্ত্রিরা। মহিলা, পুরুষ শ্রমিকরা বোতলে বালি ভরাটের কাজ করেছে। স্থানীয় রাজমিস্ত্রি বালি ভর্তি বোতল দিয়ে দেয়াল তৈরি করছে।

বোতলের বাড়ি সম্পর্কে আসমা জানান, ফেলে দেয়া প্লাস্টিক বোতল খুব সহজে সংগ্রহ করা যায়। একটি মাঝারি বোতল সাধারণত ১০ ইঞ্চি, এর ব্যাস সাড়ে ৩ ইঞ্চি। অর্থাৎ একটি ইটের সমান। একটি ইটের দাম পড়ে ১০ টাকা। আর একটি বোতল ক্রয়, বালু ভরা সব মিলে ৩ টাকার ঊর্ধ্বে নয়। ইটে আর বোতলে সিমেন্ট ব্যবহার প্রায় সমান। এতে ব্যয় সাশ্রয় অর্ধেকের বেশি। বোতলের বাড়ি ৮ মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয়। এছাড়া নির্মাণের প্রচলিত উপাদানের তুলনায় প্লাস্টিকের বোতলের দাম অনেক কম। তাই একটি বাড়ির ৬টি রুম করতে খরচ হচ্ছে মাত্র ৪ লক্ষ টাকা।

রাশেদুল জানান, তিন মাস আগে শুরু করেছেন বোতলের বাড়ির কাজ। তখন এলাকার সবাই বলেছেন অনেক কিছু। তবে এখন সবাই দেখতে আসে। এমনকি অনেকেই বাড়ি তৈরি করতে আগ্রহী হচ্ছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী পারভেজ নেওয়াজ খান বলেন, প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে তৈরি বাড়ি পরিবেশবান্ধব হলেও এটি ব্যবহারের আগে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন হওয়া উচিত। দরিদ্র মানুষদের কাছে এ ধরনের বাড়ি মডেল হিসেবে কাজ করবে। বোতল হাউজের সঙ্গে প্রকৌশলগত দিক সমন্বয় করলে এটি আরও নিরাপদ ও টেকসই হবে বলে তিনি জানান।-মানবজমিন



মন্তব্য চালু নেই