‘প্রয়োজনে আরো খুন করব’

কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক আব্দুস শুক্কুর (৬২) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। খুনি মন্টু মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে সে।

জবানবন্দিতে মন্টু মিয়া জানায়, চাঁদা না পেয়ে তার নেতৃত্বে আরো কয়েকজন ১৭ এপ্রিল মুগদা থানার মানিকনগরের মান্ডায় নির্মাণাধীন বাসার সামনে আব্দুস শুক্কুরের ওপর হামলা করে।

মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত আব্দুস শুক্কুর ১৯ এপ্রিল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

পুলিশ জানায়, ঘটনার পর পুলিশের শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্দেশ আসে, খুনিকে দ্রুত ধরতে হবে। এরপরই মুগদা থানার ওসির (তদন্ত) নেতৃত্বে তদন্ত শুরু হয়। পরে ভুক্তভোগী পরিবার এবং স্থানীয়দের কাছ থেকে তথ্য আদায় করা হয়। এরপরই বেরিয়ে আসে মন্টু মিয়ার সংশ্লিষ্টতার কথা। আব্দুস শুক্কুর যেদিন মারা যান, সেদিন মান্ডায় মন্টু মিয়ার বাসাসহ আশপাশের এলাকায় সাদা এবং পোশাক পরিহিত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মুগদা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এনামুল হক বলেন, ‘তাকে ধরতে চার রাত রাস্তায় থাকতে হয়েছে। সে দুর্ধর্ষ খুনি। এলাকার অন্যতম ভূমিদস্যুও সে। ঘটনার পুরোটাই সে স্বীকার করেছে। শুক্কুর হত্যা মামলার একমাত্র আসামি মন্টু মিয়া। তবে মন্টু আরো কয়েকজনের নাম বলেছে। তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে তাদের নাম বলা যাচ্ছে না।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ১৯ এপ্রিল মন্টুকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন সে জামিন নেয়। এরপরই ভুক্তভোগী পরিবারের অন্য সদস্যদের হুমকি দিতে থাকে- ‘একটি খুন করেছি। প্রয়োজনে আরো করব।’ ২৩ এপ্রিল মন্টুকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে বিস্তারিত জানায়। ২৫ এপ্রিল ম্যাজিস্ট্রেটের খাস কামড়ায় স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয় মন্টু। এ সময় সে চাঁদা দাবি ও খুনের দায় স্বীকার করে। শুক্কুরকে সে রড, হাতুড়ি দিয়ে জখম করার কথাও স্বীকার করে। মন্টু এখন কারাগারে আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৭ এপ্রিল মান্ডায় রাস্তার সামনে নির্মাণাধীন বাড়িতে কাজ করতে যান শুক্কুর ও তার পরিবারের সদস্যরা। এ সময় স্থানীয় সন্ত্রাসী মন্টুসহ ১০-১৫ জন এসে হামলা করে। পরদিন শুক্কুর নিজেই বাদী হয়ে মামলা করেন। এর পরদিন মাথায় প্রচ- ব্যথা অনুভব হলে শুক্কুরকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একদিন পর তিনি মারা যান।

মামলার এজাহার থেকে গেছে, মন্টু মিয়া বিভিন্ন সময় আব্দুস শুক্কুরের কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিল। ২৫ লাখ টাকা চাঁদা না দিলে বাড়ি বানাতে দেব না বলে হুমকি দেয়। এর প্রতিবাদ করলে সন্ত্রাসীরা হুমকি অব্যাহত রাখে। চাঁদা না পেয়ে সন্ত্রাসীরা রড, হাতুড়ি, লাঠিসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শুক্কুরের ওপর হামলা করে। এর প্রতিবাদ করতে গেলে সন্ত্রাসীরা তার স্ত্রী সেলিনা হোসেনের ওপরও হামলা করে।

স্থানীয়রা বলছেন, মন্টু ওই এলাকার পেশাদার চাঁদাবাজ। এই এলাকার দোকানপাট ও ফুটপাতে এবং কেউ বাড়ি করতে গেলে চাঁদা দাবি করে সে। তার সন্ত্রাসী বাহিনীও আছে। ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

বুধবার নিহতের স্ত্রী সেলিনা হোসেন বলেন, ‘শুক্কুর অত্যন্ত সৎ ছিলেন। অবসরের পর পেনশনের যে টাকা পেয়েছিলেন, তা দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করছিলেন তিনি। কিন্তু তার পরিণাম তাকে এভাবে বরণ করতে হলো। আগে জানলে এ বাড়ি করতে বাধা দিতাম। আমার যে ক্ষতি হয়েছে তা পুরণ হওয়ার নয়। আমার স্বামীকে যারা হত্যা করেছে তাদের ফাঁসি দাবি করছি।’

বুধবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মান্ডা এলাকার মাঝামাঝি নির্মাণাধীন বাড়িটির অবস্থান। এখন সব ধরনের কাজ বন্ধ রয়েছে। নির্মাণসামগ্রী পড়ে আছে। আর নিহতের স্বজনরা কান্নাকাটি করছিলেন। রাইজিংবিডি



মন্তব্য চালু নেই