প্রয়োজনের ১৬ ভাগের ১ ভাগ পানি তিস্তায়

নানা উদ্যোগ ও আশ্বাসে বছরের পর বছর পার হলেও আটকে আছে ভারত-বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু ‘তিস্তা চুক্তি’।

প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ ভারত সফরে এ চুক্তি নিয়ে ব্যাপক আশা-আকাঙ্ক্ষা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি। তবে দ্রুতই এ ইস্যুর সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

সম্প্রতি তিস্তা নিয়ে একটি প্রতিবেদনে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বলছে, তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়ে একটি সমাধানে আসার চেষ্টা রয়েছে দুই পক্ষের (ভারত ও বাংলাদেশের)।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ ও ভারতের কৃষকদের চাষাবাদের জন্য যে পরিমাণ পানির প্রয়োজন হয় বর্তমানে তিস্তায় তার ১৬ ভাগের মাত্র ১ ভাগ পানি রয়েছে।

শুষ্ক মৌসুম বলতে এখানে ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসের কথা বলা হয়েছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এ প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার দেশটির জ্বালানি বিষয়ক সংসদীয় কমিটিকে সিকিম পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিস্তায় যে আটটি বাঁধ রয়েছে সেগুলো ওই নদীর পানিপ্রবাহে কোনোভাবে বাধার সৃষ্টি করছে কি না কমিটির সদস্যরা তা খতিয়ে দেখবেন।

যে কমিটি প্রতিবেদনটি তৈরি করে দিয়েছে সে কমিটি গঠন করেছে মমতা ব্যানার্জি সরকার। মূলত মমতার আপত্তিতেই আটকে আছে তিস্তা চুক্তি। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য চাইলে রাজ্য সরকারকে এড়িয়ে যেকোনো আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্পাদন করতে পারে। তবে তিস্তা চুক্তি এভাবে সম্পাদিত হলে তা টেকসই না হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়।

মমতা সরকারের বিশেষজ্ঞ কমিটির করা এই প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, ফেব্রুয়ারি থেকে মে সময়কালে তিস্তাতে মাত্র ১০০ কিউমেক (প্রতি সেকেন্ডে ঘনমিটার) পানি থাকে। কিন্তু এ সময়ে দুই পাড়ের কৃষকদের বিশেষ করে বোরো ধান আবাদের জন্য অন্তত ১৬০০ কিউমেক পানি প্রয়োজন হয়।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, এটি একেবারেই প্রাথমিক একটা হিসাব হলেও তিস্তায় পানিপ্রবাহ এখন এতটাই অপর্যাপ্ত যে, বাংলাদেশকে যদি এই নদীর পানির ৫০ শতাংশও দেয়া হয় তবু তা বাংলাদেশের উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ হবে। একইসঙ্গে উত্তর বাংলায় খরা দেখা দিতে পারে।

রাজ্য সচিবালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, সরকার বাংলাদেশকে পানি দিতে অনাগ্রহী নয়। কিন্তু মমতা তিস্তার পানি ভাগের বিরোধী। কেননা তিস্তায় একেবারেই পানি নেই। ভারতের আরও ৫৪টি নদী রয়েছে যেগুলো পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশে গিয়েছে। রাজ্য সরকার ওইসব নদীর পানি বণ্টনে রাজি আছে।

শেখ হাসিনার ভারত সফরেও মমতা ব্যানার্জির কাছে থেকে এ প্রস্তাব এসেছে।

প্রতিবেদনের একটি অংশে বলা হয়েছে, তিস্তার পাড়ে দুই দেশের অন্তত ১৬ লাখ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ অংশে ৯.২ লাখ হেক্টর ও বাংলাদেশ অংশে ৮.৮ লাখ হেক্টর জমি রয়েছে। সে অনুযায়ী তিস্তার পানি বণ্টন করা হলে ভারত পাবে ৯২০ কিউমেক ও বাংলাদেশ পাবে ৮২০ কিউমেক পানি। কিন্তু তিস্তার পানি কম থাকায় পশ্চিমবঙ্গ মাত্র ৫২০০ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করছে।

ফলে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে কোনোভাবেই সন্তুষ্ট করা সম্ভব নয় বলে জানাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার।



মন্তব্য চালু নেই