‘প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ঔষধ খান, ভাতের উপর চাপ কমান!’

ছবিটি একজন ‘রোগী’কে দেওয়া চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র। এতে রোগ নিরাময়ে ১৫ ধরনের ঔষধের নাম লেখা আছে। যার মধ্যে আটটি ট্যাবলেট, পাঁচটি ইনজেকশন ও দুইটি ক্যাপসুল। ঔষধগুলো নিয়মিত সেবনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে এবং পনের দিন পর আবার দেখা করতে বলেছেন ‘চিকিৎসক’।

রোগীর রোগ নিরাময়ে চিকিৎসকের দেওয়া এ ব্যবস্থাপত্রের ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়া গেছে। আর এ নিয়ে ফেসবুকে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই বলছেন, ‘এই ব্যবস্থাপত্র মতে কেউ ঔষধ সেবন করলে ভাতের উপর থেকে চাপ কমবে!’ কেউ কেউ আবার মৃত্যুর আশঙ্কাও করেছেন।

গত শনিবার গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওই চিকিৎসকের নাম ডা. মো. আল মামুন। শিক্ষাগত যোগ্যতা লেখা রয়েছে, বিএ অনার্স, এমএ। সঙ্গে প্রভাষক শব্দটিও জুড়ে দেওয়া আছে। ‘এলএমএএফ’ তার চিকিৎসক পরিচিতি। ব্যবস্থাপত্রটি এবছরের ২৭ আগস্টের। সেখানে রোগীর নাম লেখা হয়েছে আলতাফ খান। ব্যবস্থাপ্রত্র দিয়ে তাকে আবার ১৫দিন পরে দেখা করতে বলা হয়েছে।

তবে এ সম্পর্কে জানতে ব্যবস্থাপত্রে থাকা মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ‘চিকিৎসক’ মামুন বা কাউকে পাওয়া যায়নি।

ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করার পর থেকেই তা নিয়ে ফেসবুকে বইছে আলোচনার ঝড়।

ছবিটি পোস্ট করে ইমরান এইচ সরকার নিজেই লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে বিএ, এমএ পাশ করেই ডাক্তারি করা গেলে প্রশ্ন ফাঁস আর তেমন কি অপরাধ? বিএ, এমএ পাশ ডাক্তার সাব আবার রোগীদের ঔষধ দিতে কার্পণ্য করেন না! প্রশ্ন ফাঁসের ডাক্তাররাও করবেন না ইনশাআল্লাহ!’

ইমরানের পোস্ট করা ওই ছবির প্রত্রিকিয়ায় জান্নাতুল ফেরদৌসি ইভা নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘এই প্রেসকিপশন অনুযায়ী ঔষধ সেবন করলে অন্তত ভাতের উপর চাপ কমবে।’ তার সাথে সহমত পোষণ করেন শাহরিয়ার সানি। ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বেশি করে ঔষধ খান ভাতের উপর চাপ কমান।’

এমন ‘ডাক্তার’ রোগী মারার কারিগর হতে পারে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন আজিমুল হায়দার নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী। তিনি লিখেছেন, ‘রোগী মারা ডাক্তার। অসুখে মরবে না, ঔষধ খেয়ে মরে যাবে!’

BiUjnyW

তবে ভিন্ন কথা বলেছেন মাহফুজুর রহমান জনি। ওই ছবির প্রতিক্রিয়ায় তার বক্তব্য, ‘এটা কি প্রেসকিপশন নাকি ১ মাসের বাজারের লিষ্ট…’ আর শামীম আল আমীন লিখেছেন, ‘আমি নিশ্চিত উনার প্রেসক্রিপশনটা শেষ হয়ে যাওয়াতে আর লিখতে পারে নাই, নাহয় আরও কিছু লিখত।’

প্রায় একই ধরনের বক্তব্য নাজিম উদ্দিনের। তিনি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এভাবে, ‘এইটা কি ডাক্তারি প্রেসক্রিপশন, নাকি গরুর রচনা?’ এভারগ্রিন হৃদয় নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘আমি দুই পায়ে রাজি আছি। যখনই আত্নহত্যা’র প্রয়োজন দেখা দিবে তখনই এইসব মহাডাক্তারের কাছে চলে যাব।’

ওই রোগী মারা গেছে না বেঁচে আছেন এমন সংশয় প্রকাশ করে দুর্লভ ক্রান্তি দিপ ফেসবুকে প্রতিক্রিয়ার লিখেছেন, ‘জাতি জানতে চায়, ১৫ দিন পর কি রোগী আবার দেখা করতে পেরেছিল? নাকি রোগীর ছেলে ১৫ দিন পর এসে ডাক্তার সাবকে চল্লিশার দাওয়াত দিয়ে গেছে?’

এ বিষয়ে বাংলাদেশে মেডিক্যাল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএসডিসি) রেজিস্ট্রার ডা. মো. জাহিদুল হক বসুনিয়ায় সাথে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘এমন কয়েক হাজার নামে-বেনামে ‘ডাক্তার’ আছেন যাদের কোনো একাডেমিক সনদ নেই। কিন্তু চেম্বার খুলে বসে আছেন। এরা সাধারণ মানুষের ব্যাপক ক্ষতি করছেন।’

বিএমডিসি’র তথ্যমতে, চলতি বছরের আট সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ৭৩ হাজার ৯ শ’ জন নিবন্ধনপ্রাপ্ত চিকিৎসক রয়েছেন।

উল্লেখ্য, এলএমএএফ এর পূর্ণরূপ হচ্ছে লোকাল মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যান্ড ফ্যামিলি প্লানিং। এটি ছয় মাসের একটি প্রশিক্ষণ কোর্স। স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রাথমিক জ্ঞান, চিকিৎসাবিজ্ঞানের নিয়মকানুন, রোগ নির্ণয়-পদ্ধতি এবং ওষুধ সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান অর্জনে এই কোর্সের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দেওয়া ও ডাক্তারদের সহযোগী হিসেবে কাজ করতে পারেন। প্রিয়.কম



মন্তব্য চালু নেই