প্রেমিকার সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর জঙ্গিবাদের পথে নিব্রাস !

রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাকারীদের অন্যতম নিব্রাস ইসলাম। ২০১৪ সালের শেষ ভাগ পর্যন্ত পরিচিতদের কাছে গড়পড়তা সাধারণ একজন ছাত্র হিসেবেই পরিচিত ছিল তার।

নিব্রাস ছিল কৌতুকপ্রিয়, ফুটবল খেলতে ভালবাসত। মেয়েদের চোখে সে ছিল হ্যান্ডসাম এক তরুণ। এমন একটি তরুণ কখন কিভাবে আত্মঘাতী তরুণ হয়ে গেল?

নিব্রাসকে যারা চিনত, তারা বলছে, নিব্রাসের একজন প্রেমিকা ছিল। তার সঙ্গে ২০১৪ সালে ছাড়াছাড়ি হয় তার। এরপর গত বছরের কোন এক সময় নিখোঁজ হয়ে যায় সে। নিখোঁজ অবস্থা থেকে ফিরে শুক্রবার রাতে গুলশানে হামলা চালিয়ে নিজেও মারা যায় সে।

মনাশ ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের একটি ফেসবুক পাতায় ২০১৪ সালের ১১ই অক্টোবর একজন অজ্ঞাত অনুরাগী লিখেছেন, “নিব্রাস ইসলাম!! তুমি এত্ত কিউট। কিন্তু তোমাকে খুঁজে পাই না। বলো, কখন তোমাকে দেখব। তোমার হাসি দেখলে আমার দিনটাই ভাল হয়ে যায়”।

কিন্তু শুক্রবার রাতে গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্তোঁরায় সতের জন বিদেশীসহ কুড়ি জন নিরীহ মানুষকে হত্যার জন্য যে ছ’জনকে সন্দেহ করছে পুলিশ তাদের একজন এই নিব্রাস।

মালয়েশিয়ার পুলিশের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, হামলাকারী জঙ্গিদের অন্তত দু’জন অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত মনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের কুয়ালালামপুর ক্যাম্পাসের ছাত্র ছিল।

তদন্তকারীরা এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য পাচ্ছে, তাতে হামলাকারীদের এমন এক প্রোফাইল ফুটে উঠছে যেখানে তারা ধণাঢ্য পরিবারের শিক্ষিত একদল তরুণ, যারা অতি সম্প্রতি কট্টর ইসলামপন্থা বেছে নিয়েছে।

তবে এটা স্পষ্ট না কোথায়, কখন এবং কিভাবে এরা কট্টরপন্থীতে পরিণত হল।

তবে মালয়েশিয়া যাবার আগে ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত থাকাকালে নিব্রাসের যারা বন্ধু ও পরিচিত ছিলেন তারা বলছেন, নিব্রাস বদলে যেতে শুরু করেছিল, তার কিছু লক্ষণও প্রকাশ পাচ্ছিল।

ঢাকার ব্যয়বহুল একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে নিব্রাসকে চিনত এমন একজন বলছিল, এক জানুয়ারি মাসে একটি ক্যাফেতে নিব্রাসের সাথে দেখা হলে সে তাকে সংক্ষিপ্ত সালামের বদলে দীর্ঘ বাক্যের এক সালাম দেয় (আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ)।

সেদিন তার আচরণ একটু অন্যরকম লেগেছিল। সেতো এমনটি নয়! বলছিল নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ছাত্রটি।

মনাশ বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে নিব্রাস পড়ত, সেখানকার স্নাতক কোর্সের খরচ ৯ হাজার ডলারের কাছাকাছি। বাংলাদেশের বার্ষিক গড় আয়ের ছয় গুণ বেশী এই খরচ।

মনাশ বিশ্ববিদ্যালয় নিব্রাসকে যারা চিনত, তারা বলছে, নিব্রাসের একজন প্রেমিকাও ছিল। তার সাথে ২০১৪ সালেই ছাড়াছাড়ি হয় তার। তারপর গত বছরের কোন এক সময় নিব্রাস কুয়ালালামপুরের মনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়।

সেখানকার পরিচিতরা ভেবেছিল, সে হয়তো দেশে ফিরে গেছে। এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে বিচরণ কমিয়ে দেয় নিব্রাস। স্ন্যাপচ্যাট ও ফেসবুকে পোস্ট করা বন্ধ করে দেয়। তবে তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টটি এখনও সচল আছে।

২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর নিব্রাস তিনটি টুইট করে। ইংরেজিতে লেখা টুইটগুলোতে সে বলে, ‘আমাকে তোমার আর প্রয়োজন নেই। সুখে থেকো ওর সঙ্গে। সবাই আমার চেয়ে অনেক ভালো। আমাকে কোথায় পাবে জানো তুমি।’

‘আমি চিরদিন তোমার অপেক্ষায় থাকবো। যখনই আমাকে তোমার চাই। আমি শুধু একটা ফোন কল দূরত্বে আছি। কিন্তু, মনে হচ্ছে তুমি আমার স্থানটা আর কাউকে দিয়ে ফেলেছো। তোমাকে দ্বিধাগ্রস্ত দেখতে আমি চাই না।’

‘কিন্তু, তোমার কাছ থেকে অন্তত কিছু দিন দূরে থাকাই ভালো হবে। তাহলে তুমি হয়তো বুঝতে পারবে, আসলেই তুমি কী চাও। আমি একটা ফোন কল দূরত্বে আছি শুধু। আমি আছি।’

নিবরাসের সর্বশেষ টুইট ছিল-‘সকল প্রশংসা আল্লাহর। প্রিয় মানুষগুলোর সঙ্গই প্রকৃত সুখ। আর ওসব বন্ধুদের সঙ্গও, যাদের কথা সারাক্ষণ মনে পড়ে।’

নিব্রাস মোটে দশটি টুইটার অ্যাকাউন্ট অনুসরণ করতো। এর একটি হলো শামিউইটনেস বলে একটি অ্যাকাউন্ট। গত বছর ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে আটক হওয়া আইএসের প্রোপাগাণ্ডাবিদ মেহদি মাসরুর বিশ্বাস এই অ্যাকাউন্টটি পরিচালনা করত।

ব্রিটেনের নামকরা ইসলাম ধর্মের প্রচারক আনজেম চৌধুরীর এমন একটি টুইট সে পছন্দ (লাইক) করেছিল, যেটিতে ২০১৫ সালে ফ্রান্সের শার্লি হেবদো পত্রিকা কার্যালয়ে জঙ্গি হামলার পরবর্তী সময়ে ফ্রান্স এবং তার সহযোগী দেশগুলোকে সমালোচনা করা হয়েছিল।

এর ঠিক দু’মাস পর সে টুইটারে লিখেছিল ‘চির বিদায়’।

মনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক ছাত্র আন্দালিব আহমেদ সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না।

মালয়েশিয়ার পুলিশের একটি সূত্র বলছে, আন্দালিব ২০১২ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত মালয়েশিয়াতে ছিল। পরে সে ইস্তানবুল যায়।

যারা সিরিয়া ও ইরাকে কথিত ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠিতে যোগ দিতে চায় তারা প্রায়ই ট্রানজিট হিসেবে তুরস্ককে ব্যবহার করে।

আরেকজন হামলাকারী হচ্ছে রোহান ইমতিয়াজ, সে ঢাকার একজন আওয়ামী লীগ নেতা ইমতিয়াজ খান বাবুলের ছেলে।

রোহান যে বাড়িতে থাকত, ওই বাড়ির দারোয়ানের বর্ণনায় রোহান ছিল খুবই শান্ত এবং ঠান্ডা প্রকৃতির ছেলে। কলেজ থেকে ফিরে সে মসজিদে যেত নামাজ পড়তে।

রোহানের বাবা ইমতিয়াজ খানও বলেছেন, ছোটবেলা থেকেই নামাজ পড়ে রোহান।

যদিও সে ঢাকার নামকরা স্কলাসটিকা স্কুলে ও লেভেলে অত্যন্ত ভাল ফল করবার পর বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল। কয়েক মাস ধরেই সে ছিল নিখোঁজ। -যুগান্তর



মন্তব্য চালু নেই