প্রেগন্যান্সি ছাড়াও পিরিয়ড দেরিতে বা মিস হওয়ার অন্যতম ১০ টি কারণ

পিরিওড যখন হবার কথা তার থেকে কি দেরি হচ্ছে বা মিস হয়েছে? তুমি কি জন্ম নিয়ন্ত্রণ সম্মন্ধিত আমাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য না জেনে অসুরক্ষিত যৌন সংগম করেছো? তাহলে প্রথম যে সম্ভাবনার কথা মাথায় আসে তা হল প্রেগন্যান্সি। কারণ এটা সর্বজনবিদিত যে গর্ভবতী হয়ে গেলে পিরিওড বন্ধ হয়ে যায। যদিও অসুরক্ষিত যৌন সংগমের পর পিরিওড দেরি বা মিস হওয়া প্রেগন্যান্সির প্রধান লক্ষণ, তথাপি আরও কয়েকটি কারণে পিরিয়ড দেরি বা মিস হতে পারে। আমরা সেগুলো সম্মন্ধে এখানে আলোচনা করছি। কাজেই পিরিওড মিস হলেই প্রেগন্যান্সির দুঃশ্চিন্তায় অস্থির না হয়ে দুটি কাজ কর – প্রথমত এই পোস্টটি পড় এবং দ্বিতীয়ত ঘরে বসে প্রেগন্যান্সি কিট দিয়ে মূত্র পরীক্ষা কর।

পিরিওড দেরি বা মিস হওয়ার কারণ সমূহ

১. খুব বেশি ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস এবং অতিরিক্ত এক্সারসাইজঃ কথায় বলে কোন কিছুই অতিরিক্ত করা উচিৎ নয়। অতিরিক্ত অনুশীলন (এক্সারসাইজ) এবং খুব বেশি ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস পেলে শরীরে হরমোন ক্ষরণের মাত্রার তারতম্য ঘটে, যার ফলে পিরিওড দেরি বা মিস হতে পারে। এটা এক ধরনের প্রাকৃতিক সুরক্ষা কবচ। কারণ খুব বেশি ওজন বৃদ্ধি পেলে বা কমে গেলে বা অতিরিক্ত এক্সারসাইজ করলে সেটা গর্ভধারণের জন্য সঠিক অবস্থা নয় – তাতে গর্ভস্থ ভ্রূণ এবং গর্ভবতী দুজনেরই ক্ষতি হতে পারে। তাই শরীর নিজে থেকেই গর্ভধারনের সম্ভাবনা বাদ দেওয়ার জন্য ওভিউলেশন (ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নির্গমন) বন্ধ করে দেয় যার ফলে পিরিওড দেরি বা মিস হয়। দৌড়বিদ, সাতারু প্রমূখের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই একই কারণে পিরিওড দেরি বা মিস হয়।

২. মানসিক চাপঃ মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস অঞ্চল পিরিওডের জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু অতিরিক্ত মানসিক চাপে হাইপোথ্যালামাসের এই কাজ বাধাপ্রাপ্ত হয়, যার ফলে পিরিয়ড দেরি বা মিস হয়। অতএব সম্প্রতি যদি তোমার জীবনে এমন কোন ঘটনা ঘটে থাকে যেমন, কারও মৃত্যু, ব্রেক-আপ, চাকরী না পাওয়া, কাজের চাপ ইত্যাদি তবে পিরিওড দেরি বা মিস হতে পারে।

৩. পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (Polycystic ovary syndrome – PCOS)– মেয়েদের শরীরে হরমোনের ভারসাম্য ঠিক না থাকার কারণে যে লক্ষণসমূহ প্রকাশ পায় তাদেরকেই একত্রে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম বলে। এই রোগের অন্যতম লক্ষণ হল অনিয়মিত পিরিওড। এমনকি পিরিয়ড পুরো বন্ধ হয়েও যেতে পারে। এছাড়াও PCOS এর অন্যান্য লক্ষণসমূহ হল মুখে এবং গায়ে অতিরিক্ত লোম, ব্রন, তলপেট ব্যাথা, গর্ভধারণে সমস্যা, ওজন কমাতে সমস্যা। আবার খুব বেশি রজস্রাবও হতে পারে। অনেকের আবার ওভারিতে সিস্ট (ছোট্ট তরল ভর্তি থলে) হয়। PCOS -এর কারণ সঠিক জানা যায় নি, তবে গবেষকদের অনুমান এটা অনেকটাই জেনেটিক ব্যাপার। PCOS -এর ফলেও পিরিওড দেরি বা মিস হতে পারে।

৪. থাইরয়েডের সমস্যাঃ থাইরয়েড হল গলাতে অবস্থিত একটি অন্তক্ষরা গ্রন্তি যেখান থেকে থাইরয়েড হরমোন ক্ষরিত হয়। এই গ্রন্থির কোন সমস্যা হলে থাইরয়েড হরমোন ক্ষরণ বৃদ্ধি বা হ্রাস পেতে পারে। এমতাবস্থায় পিরিওড দেরি বা মিস হওয়া সম্ভব। থাইরয়েড সমস্যার আরও কয়েকটি লক্ষণ হল অবসাদ, অতিরিক্ত চুল ওঠা, ওজন বৃদ্ধি এবং সবসময় ঠান্ডা লাগছে মনে হওয়া।

৫. দৈনিক জীবনযাত্রায় পরিবর্তনঃ ভ্রমণ, কাজের সময়ের পরিবর্তন ইত্যাদির মাধ্যমে যদি দৈনিক জীবনযাত্রায় পরিবর্তন ঘটে তাহলেও পিরিয়ড দেরি বা মিস হতে পারে। তবে এটা স্বল্পস্থায়ী ব্যাপার যাতে কোন ক্ষতি হয় না। এছাড়া নতুন কোন ঔষধ খেতে শুরু করলেও পিরিওড দেরি বা মিস হতে পারে।

৬. জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিঃ কিছু কিছু জন্মনিয়ন্ত্রক পদ্ধতি যেমন পিল, IUD ইত্যাদির প্রভাবেও পিরিওড দেরি বা মিস হতে পারে। আবার হঠাৎ করে ওইসব জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার বন্ধ করলেও স্বাভাবিক পিরিয়ড ফিরে আসতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। তবে জন্ম নিয়ন্ত্রক পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে যদি পিরিয়ড দেরি বা মিস হয় তবে সেটা চিন্তার কোন কারণ নয়।

৭. অসুস্থতাঃ হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পরলে বা দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার জন্যেও অনেক সময় পিরিওড অনিয়মিত হতে পারে।

৮. স্তন্যপান করানোঃ সদ্যজাত শিশুকে স্তন্যপান করানোর সময় প্রোল্যাকটিন হরমোনের প্রভাবে পিরিওড বন্ধ থাকে। কিন্তু এই ঘটনা এমনিতেই অনেকের ক্ষেত্রে হতে পারে এবং তার ফলে পিরিয়ড দেরি বা মিস হয়। যদি প্রোল্যাকটিন হরমোনের প্রভাবে পিরিয়ডে সমস্যা হয় তবে স্তন থেকে দুধের মত পদার্থ নির্গত হবে।

৯. গত পিরিওড কবে হয়েছিল সেটা ভুলে যাওয়াঃ অনেকেই আছে যারা সঠিকভাবে পিরিয়ডের তারিখ লিখে রাখে না। স্বাভাবিকভাবেই তাদের মনে থাকেনা ঠিক কবে পিরিয়ড হওয়া উচিৎ। ফলে ভুল দিন গুনে চিন্তা হয়। উল্লেখ্য যে যদিও স্বাভাবিক পিরিওড ২৮ দিনের, কিন্তু পিরিয়ডের দৈর্ঘ্য এর থেক বেশি বা কম দুটোই হতে পারে।

১০. মেনোপজঃ মেনোপজ হবার আগে অনেকের পিরিয়ড অনিয়মিত হয়ে যায়। যদিও মেনোপজ মোটামুটি ৪০ বছরের পরেই হয়, কিছু মহিলার মেনোপজ তার আগেও হতে পারে। কাজেই এটাও পিরিয়ড দেরি বা মিস হবার একটি কারণ।

উপরের কারণ ছাড়াও পিরিওড দেরি বা মিস হবার আরও কিছু কারণ রয়েছে, যেমন, ড্রাগ সেবন করা, পর্যাপ্ত পৌষ্টিক দ্রব্যের অভাব, ডিম্বাশয় বা মস্তিষ্কে টিউমার ইত্যাদি। তবে পূর্বেই উল্লেখ করেছি অসুরক্ষিত যৌন সঙ্গমের পরে পিরিওড মিস হওয়ার সবথেকে সম্ভাব্য কারণ গর্ভধারণ। কাজেই প্রেগন্যান্সি টেস্ট করানো অবশ্য কর্তব্য। তার জন্য “হোম প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট” ব্যবহার করা সবথেকে সহজ। এই কিটের মাধ্যমে মূত্রে hCG হরমোনের উপস্থিতি মেপে প্রেগন্যান্সি নির্ধারণ করা হয়। যদি একবার টেস্টে প্রেগন্যান্সি ধরা না পরে তবে তিন দিনে পরে পুনরায় পরীক্ষা করে নাও। তবুও যদি প্রেগন্যান্সি ধরা না পরে এবং পিরিওড না হয় তবে ডাক্তারের শরণাপন্ন হও।



মন্তব্য চালু নেই