প্রসিকিউশনে দ্বন্দ্ব: পুনর্গঠন চান অ্যাটর্নি জেনারেল

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিমের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের বিষয়টি পরোক্ষভাবে স্বীকার করে পুরো টিম পুনর্গঠন দরকার বলে মন্তব্য করলেন খোদ অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

তিনি বলেছেন, ‘ট্রাইব্যুনালে তারা (প্রসিকিউটররা) যা করছেন, সেটা আপনাদের (সাংবাদিকদের উদ্দেশে) মতো আমিও শুনি। ফৌজদারি মামলা তারই করা উচিৎ, যার ফৌজদারি মামলা করার অভিজ্ঞতা আছে। যিনি ১০-৫টা বিচারে ছিলেন। এছাড়াও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিমের খুব দ্রুত পুনর্গঠন করা প্রয়োজন।’

রোববার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

এসময় প্রধান প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রধান প্রসিকিউটরও এক সময় জাঁদরেল আইনজীবী ছিলেন, এতে কোনো সন্দেহ নাই। উনার শুনানি শুনতে মানুষ রাস্তা থেকে কোর্টে এসে দাঁড়িয়ে থাকতেন। তারপরও একটা কথা হলো, উনারতো বয়স হয়েছে। বয়সতো সবাইকে কাবু করে ফেলে। তখন নিজের আত্ম-উপলব্ধি করা উচিৎ যে, আমি এখানো কাজের জন্য উপযুক্ত আছি কি না।’

অন্য প্রসিকিউটরদের প্রসঙ্গে মাহবুবে আলম বলেন, ‘এখানে অ্যাডভেঞ্চারিজমের কোনো অবকাশ নেই। তবে আমি মনে করি, এখানে প্রধান প্রসিকিউটিরের সঙ্গে অন্যদের একটা সমন্বয় থাকা উচিৎ। এটার প্রচণ্ড অভাব। এটা থাকা উচিৎ নয়। এছাড়া আইন মন্ত্রণালয় যেভাবে চালাতে চায়, সেভাবে চালানো উচিৎ। অন্যদের সেটা মানা উচিৎ। আইনমন্ত্রী নিজেও একজন বিখ্যাত ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ। উনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, জেল হত্যা মামলায় ছিলেন।’

জামায়াত নিষিদ্ধের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এখানে দুইটা প্রক্রিয়া রয়েছে: একটা হচ্ছে, তাদের কার্যক্রম সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না, দ্বিতীয়টা তাদের অপরাধের শাস্তি হবে কি না।’

বর্তমান আইনে জামায়াতের বিচার সম্ভব নয়- এ কথা বলে আইনমন্ত্রী ট্রাইব্যুনালের কাজে হস্তক্ষেপ করলেন কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আইনমন্ত্রী তাদের কাজের বিষয়ে কিছু বলেন নাই। আইনগত বিষয়ে বলেছেন। দেখা গেল, অনেক উদ্যোগ নিয়ে সেখানে যাওয়া হলো। কিন্তু দলটিকে বন্ধ বা জরিমানার আদেশ দেয়া যাচ্ছে না।’

তবে সব মিলিয়ে ট্রাইব্যুনালের দ্বন্দ্ব নিরসনে দ্রুততার সঙ্গে প্রসিকউটরদের মধ্যে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন- এমন অভিমত খুব স্পষ্ট করেই দিয়েছেন তিনি।

উল্লেখ্য, ট্রাইব্যুনাল গঠনের শুরুতেই প্রসিকিউশনে দ্বন্দ্ব, অদক্ষতা ও দুর্বলতা নিয়ে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটিসহ বিভিন্ন মহল থেকেই প্রশ্ন তোলা হয়। কিন্তু সরকার আমলে নেয়নি। দুর্বলতার কারণে খোদ ট্রাইব্যুনালও মাঝেমধ্যে তিরস্কার করেছেন প্রসিকিউটরদের। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রসিকিউটর হিসেবে ড. তুরিন আফরোজ এবং সমন্বয়ক হিসেবে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমানকে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু তাতে দ্বন্দ্ব আরো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলির কার্যালয়ে নেতৃত্ব পর্যায়েও বিরোধ দেখা দেয়।

সাম্প্রতিক দুটি ঘটনায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি ও সমন্বয়কের মধ্যে এই বিরোধ প্রকাশ্যে চলে আসে।

সম্প্রতি রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি (চিফ প্রসিকিউটর) গোলাম আরিফ টিপু দাবি করেন, সমন্বয়কের নিয়োগ অবৈধ। সমন্বয়ক ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমানের দাবি, তার নিয়োগ বৈধ। কারণ সরকার তাকে পদে নিয়োগ দিয়েছে।

এর কয়েক দিন আগে প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ সম্পর্কে আরেক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলীর বক্তব্য এবং এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিদের পারস্পরিক আস্থা ও সৌজন্যের সঙ্কটকে সামনে নিয়ে আসে।

এর আগে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর মামলায় নতুন করে যুক্তি উপস্থাপনের আরজি জানিয়ে মোহাম্মদ আলী সহকর্মীদের বিরোধিতার মুখে পড়েন। রাষ্ট্রপক্ষের এ ধরনের কাজকে অদক্ষতার পরিচায়ক বলে মন্তব্য করেন বিচারসংশ্লিষ্টরা।

রাষ্ট্রপক্ষের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গত ১০ মার্চ প্রসিকিউটর হৃষিকেশ সাহা সমন্বয়ক এম কে রহমানের নির্দেশনায় চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে প্রসিকিউটরদের একটি সভা আহ্বান করেন। ওই নোটিশ দেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে একটি জরুরি অফিস আদেশ জারি করেন চিফ প্রসিকিউটর।
এতে বলা হয়, চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ের সব প্রসিকিউটরের নিয়োগ হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন-১৯৭৩ এর ৭ ধারার অধীনে। একমাত্র চিফ প্রসিকিউটর নিজে কোনো সভা ডাকতে পারেন। তার নির্দেশ ছাড়া ডাকা সভা অবৈধ এবং বাতিলযোগ্য।



মন্তব্য চালু নেই