প্রলয় হলে দেবালয়ও রক্ষা পায় না

এইতো ক’দিন আগে বাঙালী জাতির কপালে লেপন হলো এক নতুন কলঙ্ক। বর্ষবরণের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের টিএসসি চত্বরে বেশ কিছুসংখ্যক যুবক প্রকাশ্য দিবালোকে নারীর ‘শ্লীলতাহানি’ করলো। এতে টান দিয়ে কারও কারও শাড়ি খুলে নিলো, আবার কারও স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিলো, কয়েকজনকে প্রায় বিবস্ত্রও করে অন্যায় আবদার পূরণের চেষ্টাও করলো। একই দিনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রীকে বিবস্ত্র করা হলো এবং চাঁনখারপুলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে ছাত্রীদের উত্যক্ত-অপমান করা হলো। এতে রাষ্ট্র, সরকার ও সমাজ নির্বিকার!

ঘটে যাওয়া এসব ঘটনার পর আমরা কী দেখলাম। এক পক্ষ ঘটনার সাথে জড়িতদের যথাযথ শাস্তির দাবি জানালো, আরেক পক্ষ বিশেষ করে এই শাস্তি বাস্তবায়নের দায়িত্ব যাদের উপর তারা বরাবরের মতো নির্লিপ্ত থাকলো। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দাবি আদায়ের দাবিকে অতিরঞ্জন বলতেও দ্বিধা করা হলো না। এর সর্বশেষ সংযোজন জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে না পারার প্রতিবাদে ঢাকা পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশের হামলা। ছাত্র ইউনিয়নের একজন নারীকর্মীর উপর যে কায়দায় হামলা করা হয়েছে তার হয়তো আইনি ব্যাখ্যা আছে যেমনটা ব্যাখ্যা আমরা পেয়েছিলাম বর্ষবরণের ঘটনায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণে। তারা দাবি করেছে কিছুই হয়নি। পুলিশ প্রধান তো বলেই ফেললেন ‘এটা দু-চারটা ছেলের দুষ্টুমী ছাড়া আর কিছুই নয়।’

যখন কিছুই হয়নি তখন এ নিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীদের অহেতুক ঝামেলা সৃষ্টিকে লাঠি থেরাপির মাধ্যমে দমন অবশ্যই ন্যায়সঙ্গত! সরকারও এ ব্যাপারে নিশ্চুপ থাকলো। এর দু’টি কারণ থাকতে পারে এক- অনেকে বলছে এর সাথে জড়িতরা ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। দুই- সরকার যে কোনো প্রকার আন্দোলনের বিপক্ষে, কারণ এই আন্দোলনের সুযোগে সরকারবিরোধী আন্দোলন না আবার মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। তাই সরকারের লোকজন এ ব্যাপারে যতটা পারা যায় চুপ থাকাটাই শ্রেয় মনে করেছে। আসলে কী এ ব্যাপারে সরকার কিংবা রাষ্ট্রের এতটা নির্বিকার থাকার কথা!

যারা আন্দোলন করছে বা অতীতে যারা এই আন্দোলনে ছিল অথবা এই ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধনে অংশ নিয়েছে কেউ কিন্তু ওইদিন যে আমার মা-বোনেরা হয়রানির শিকার হয়েছেন তাদের চেনে না। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটে এজন্যই এই ধরনের কর্মকাণ্ডে তাদের অংশগ্রহণ। এখানে যেমন নিজে অথবা নিজের স্বজনদের এই ধরনের ঘটনার শিকারের ভয় আছে তেমনি ভবিষ্যতে নারীর জন্য সুন্দর এক বাংলাদেশের স্বপ্নও আছে। কিন্তু এই মানুষগুলোকে নির্মম বাক্যবাণে জর্জরিত হতে হচ্ছে অথবা নির্মম লাঠির আঘাত সহ্য করতে হচ্ছে। ব্যাপারটা এমন- আপনার তো কিছুই হয়নি। চুপ করে থাকেন। যাদের ক্ষতি হয়েছে তারা তো কোনো অভিযোগ দিচ্ছে না। তাহলে আপনারা এতো মাতামাতি-লাফালাফি করছেন কেনো?

শ্রদ্ধেয় আরেফিন স্যার, আপনি তো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তির সাথে আপনার ভাবমূর্তি জড়িত। এই ঘটনা প্রমাণিত হলে আপনার ব্যর্থতার তালিকা বড় হয়ে যাবে। তাই আপনি চান না এই ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি হোক কিংবা আরো বৃহৎ পরিসরে আলোচনায় আসুক। কিন্তু কোনদিন যে আপনার মেয়ে বা আপনার ভালোবাসার কেউ এই ধরনের ঘটনার শিকার হবে না এই গ্যারান্টি আপনাকে কে দেবে? হয়তো মনে মনে এই ভেবে সন্তুষ্ট হচ্ছেন আমার মেয়ে তো দেশের বাইরে থাকে। তবে অভিজিৎ দেশের বাইরে থাকলেও কয়েক দিনের জন্য দেশে এসে কিন্তু হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। কেননা, অপরাধীরা ওঁৎ পেতে থাকে শিকারের অপেক্ষায়। তবে এতটা চুপ থাকার কি সুযোগ আছে?

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাহেব। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ত্রুটি জনসম্মুখে এলে আপনার সমালোচনা হবে। অনেকে আপনার পদত্যাগ দাবি করবে। তাই চাচ্ছেন থাক কি হয়েছে, যা হয়েছে বেমালুম অস্বীকার করে যাবো। আপনার স্বীকারোক্তি এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা থেকে আপনার প্রতিষ্ঠানকে, আপনার সমাজকে, আপনার দেশকে রক্ষা করতে পারত। কিন্তু আপনার ইমেজ চলে যাবে তাই বিবেক কে দমিয়ে রেখেছেন। একদিন আপনি হয়তো বিবেকের দংশনের শিকার হবেন যখন আপনার কেউ যৌন হয়রানির শিকার হবে।

এইতো ক’দিন হলো অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট মুক্তমনা লেখক অনন্তকে হত্যা করা হলো। এর আগেও বিজ্ঞানমনস্ক মুক্তমনা লেখক অভিজিৎ রায়, ওয়াসিকুর, মুক্তচিন্তার বিশিষ্ট লেখক হুমায়ুন আজাদ, মুক্তমনা শফিউল ইসলাম লিলন, ব্লগার আশরাফুল ইসলাম, আরিফ রায়হান দ্বীপ, জাফর মুন্সি, মামুন হোসেন, জগৎ জ্যোতি তালুকদার, ব্লগার জিয়াউদ্দিন জাকারিয়া বাবু, ব্লগার রাজিবসহ আরো অনেককে এভাবেই জীবন দিতে হয়েছে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের হাতে। প্রতিটি ঘটনার পরপরই ঢালাওভাবে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে দায়ী করে কয়েকদিন হৈ চৈ করে থেমে যাই আমরা। এসব ঘটনায় সরকার সংশ্লিষ্টরা যতটা পেরেছেন নিশ্চুপ থাকা কিংবা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছেন।

যদিও রাজনৈতিক কিংবা অন্য কোনো বিষয়ে মন্ত্রী-এমপি, নেতানেত্রীকে এমনটি চুপ থাকতে দেখা যায়নি। যেমনটি বলা যায়- বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদের বিষয়ে কেউ কথা বলতে বাকী থাকেননি। এমন কী রাষ্ট্রের নির্বাহী প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও কথা বলেছেন।

এদিকে ১০ জন বিশিষ্ট নাগরিককে হত্যার হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠানোর ঘটনা বৃহস্পতিবার থেকে গণমাধ্যমে বেশগুরুত্ব দিয়েই প্রচারিত হচ্ছে। ‘ইসলাম বিরোধী’ আখ্যা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং রাজনীতিবিদসহ ১০ জনকে হত্যার হুমকি দিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠির নিচে প্রেরকের নাম দেয়া আছে ‘আল-কায়েদা আনসারউল্লাহ বাংলা ১৩’।

চিঠিতে দশজনের নাম উল্লেখ করা হয়, তাতে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতার অধ্যাপক কাবেরী গায়েন, জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট অসীম সরকার, সংসদ সদস্য তারানা হালিম ও ইকবালুর রহিম ও গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার। এছাড়াও এ তালিকায় বিকাশ সাহা ও পল্টন সুতার নামের আরো দুইজন ব্যক্তি রয়েছেন।

গণমাধ্যমের কল্যাণে যতদূর জানা গেছে তাতে, ঢাকার জিপিও থেকে পোস্ট করা একই চিঠির কপি অনেকের ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে। ইংরেজিতে লেখা সেই চিঠিতে বলা হয়– ‘তোমাদের অবশ্যই মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হতে হবে’।

ঢাবির জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক অসীম সরকার জানিয়েছেন তিনি যে চিঠি পেয়েছেন তাতে উল্লেখিত দশজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। প্রত্যেকের নামের পাশে নানা ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে। অধ্যাপক অসীম সরকারের নামের পাশে লেখা আছে হিন্দু মৌলবাদী। এইচটি ইমামের নামের পাশে তাকে বর্ণনা করা হয়েছে ‘ইসলাম বিরোধী উপদেষ্টা’ হিসেবে। এভাবে সবার নামের পাশেই একটি করে বর্ণনা দেয়া আছে।

এ ধরনের চিঠি পেয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সবাই। অধ্যাপক অসীম সরকার বলেছেন, ‘আমি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাস করি। কখনো কারও ক্ষতি করি নাই। আমার শত্রু থাকতে পারে এটা আমার বিশ্বাস হয় না।’ নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন এই অধ্যাপক শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।

এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়ায় ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘নিজেকে নিয়ে আমি মোটেও ভীত নই, মুক্তমনা ব্লগারদের নিয়ে বিচলিত। হত্যার হুমকি আমার জন্য নতুন কিছু না, অসংখ্যবার হত্যার হুমকির চিঠি পেয়েছি। অনেকবার এ রকম হয়েছে, আমার স্ত্রীকেও বলিনি। তবে আশা করছি এ তালিকায় অনেক বড় মানুষ থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় হয়ে হুমকিদাতাদের খুঁজে বের করবে।’

‘এখানে যাদের নাম দিয়েছে তারা সবাই সমাজে প্রতিষ্ঠিত মানুষ। তাদের ঝুঁকি নাই। কারণ তারা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পায়। আমারও গত সাতদিন ধরে পুলিশ পাহারা রয়েছে। এরা রাস্তার মোড়ে চাপাতি দিয়ে মারতে পারবে- এই আশঙ্কা আমি দেখি না।’ নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কায় থাকা ব্লগারদের বিষয়ে নজর দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সম্প্রতি একের পর এক ব্লগার হত্যার প্রেক্ষাপটে এই ধরনের চিঠি অনেকের মাঝেই উদ্বেগ তৈরি করেছে। এরই মধ্যে বলা হচ্ছে যে ৮৪ জন ব্লগারকে ‘নাস্তিক বা ইসলাম বিরোধী’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে তাদের মধ্যে চারজন এরই মধ্যে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের জন্য পুলিশ আনসারউল্লাহ বাংলা টিম নামের একটি উগ্রপন্থি সংগঠনকে সন্দেহ করছে। এই একই গোষ্ঠী ১০ জনকে হত্যার হুমকি দিয়ে চিঠি দিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা করছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, বুধবার সকালে তার অফিসের ঠিকানায় একই চিঠি এসেছে। এ ঘটনায় লক্ষ্য করা যাচ্ছে সরকার ও সংশ্লিষ্টরা বেশ নড়েচড়ে উঠেছে। সরকারের পক্ষ থেকেও সংশ্লিষ্টদের নিরাপত্তা জোরদারের কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। সরকারপন্থি তথা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের দাবিদার বুদ্ধিজীবীরাও উদ্বেগ করছেন।

কিন্তু ইতোপূর্বে ব্লগারদের হত্যার হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠানোর ঘটনায় তাদের এমন উদ্বিগ্ন হতে দেখা যায়নি। এমন কী ধারাবাহিক ব্লগার হত্যার বিষয়েও তাদেরকে বেশ সতর্কতার সাথে উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

এছাড়া বিশিষ্ট লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে যখন একজন সাংসদ চাবুক মারার হুমকি দিলেন, তার বিরুদ্ধে মিছিল-সমাবেশে গালিগালাজ এবং তাকে সিআইএ’র গুপ্তচর সাব্যস্ত করা হলো, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মিজান উদ্দিনকে যখন থাপ্পর মারা হলো তখন কিন্তু এই সব সরকারপন্থি তথা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের দাবিদার বুদ্ধিজীবীদেরকে তেমন নড়াচড়া করতে দেখা যায়নি। সবাই খুবই সতর্কতার সাথে কথা বলেছেন যাতে সরকার রুষ্ট না হয়।

অন্যদিকে, এরআগে অভিজিৎ হত্যার পর আনসার বাংলা ৭ নামে এক জঙ্গি সংগঠন তাদের টুইটে একই দায় স্বীকার করেছিল। ব্লগার অনন্ত হত্যাকাণ্ডের কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানেই এর দায় স্বীকার করে জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদা ভারতীয় শাখা ও আনসার বাংলা ৮। কিন্তু এসব ঘটনায় অপরাধী চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ। শুধু সন্দেহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। এমন কী অভিজিৎ হত্যার তদন্তে বাংলাদেশ পুলিশের পাশাপাশি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এগিয়ে এলেও এ পর্যন্ত কার্যত কোনো অগ্রগতি নেই।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জোর দিয়েই দাবি করেন- বাংলাদেশে আল-কায়দা কিংবা এ জাতীয় কোনো জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্ব নেই। তাদের এই দাবি যদি সত্য হয়ে থাকে তবে আজকে আল-কায়েদা নামে কিংবা আনসার বাংলা ৭, ৮, ৯, ১৩… নামে যেসব জঙ্গি সংগঠন একের পর এক হত্যা হুমকি এবং ধারাবাহিক হত্যার দায় স্বীকার করে চলেছে এগুলো কী একেবারেই ভুয়া? স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভাষ্য অনুসারে ধরেই নিলাম আল-কায়েদা কিংবা আনসার বাংলা নামে কোনো জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্ব আমাদের দেশে নেই। তবে এই হত্যা আর হুমকি কে বা কারা ঘটিয়েছে এটা বের করার দায়িত্ব কার? অবশ্যই তা সরকার ও প্রশাসনের। ফলে নিগঢ়ে গিয়ে তা খতিয়ে দেখা উচিৎ।

সাথে মনে প্রশ্ন জাগে, প্রকাশ্যে দিবালোকে মানুষ খুন হয়, সমাজের বিশিষ্টজনদের হুমকি দেয়, এসময় আমাদের এতো দক্ষ পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা কোথায় থাকেন? আর এতো ক্ষমতাধর সরকারের রাষ্ট্রযন্ত্র বা কী করে!

আমরা কিছু মুষ্টিমেয় মানুষ অনেক আগে থেকেই উচ্চারণ করে আসছি, জাতির অশনি সংকেতের কথা, জাতির মধ্যে যে পচন রোগ দেখা দিয়েছে। এটা দ্রুতই সাড়াতে হবে। কেননা, এটা ছড়িয়ে পড়লে সবাইকে এর দুর্ভোগ পোহাতে হবে। কিন্তু আমাদের কথায় অনেকেই সাড়া দেননি সরকার অসন্তুষ্ট হবে বলে আমাদের এই দাবিকে বাঁকা চোখে দেখেছেন। কিন্তু আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-ভিসি থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাকে হুমকি দেয়া হয়েছে। ফলে এটা রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য কতটা হুমকি হয়ে দাঁড়িয়ে তা সহজেই অনুমেয়। তাই এবার সেই বহু পুরানো প্রবাদের ভাষায় বলতে হয়- প্রলয় হলে দেবালয়ও রক্ষা পায় না। অর্থাৎ অন্ধ হলে যেমন প্রলয় বন্ধ থাকে না; তেমনি প্রলয় হলে দেবালয়ও রক্ষা পায় না। সন্ত্রাস ও অস্ত্রকে অবলম্বন করে প্রলয় ও আগুনের লেলিহান শিখায় প্রলম্বিত করা হলে সেটাই তাদেকেও একদিন গ্রাস করবে। মানুষকে বিপদে ফেলে যারা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চায়, কোনপক্ষ রুষ্ট হবে বলে মুখবুজে অন্যায়কে নীরবে সহ্য করে, তারাই সবচেয়ে আগে বিপদের সম্মুখীন হবে। এটাই ইতিহাসের প্রমাণিত শিক্ষা।

লেখক: শিক্ষা ও সমাজবিষয়ক গবেষক।
ই-মেইল:[email protected]



মন্তব্য চালু নেই