প্রবাসীর সামনে তাঁর স্ত্রীকে তুলে নেন এসআই!

নরসিংদীতে পুলিশের বরখাস্ত হওয়া উপপরিদর্শক (এসআই) জিয়াউর রহমান ও তাঁর কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার নরসিংদীর অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করে এই আদেশ দেন। সেই সঙ্গে আগামী ২৬ ডিসেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, আট বছর আগে রায়পুরা উপজেলার নিলক্ষা গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী এক ব্যক্তির সঙ্গে নরসিংদী শহরের পশ্চিম দত্তপাড়ার এক তরুণীর রেজিস্ট্রি করে বিয়ে হয়। এরপর তাদের দুটি ছেলে সন্তান হয়। এ নিয়ে সুখেই কাটছিল তাদের দাম্পত্য জীবন।

লোকজন জানান, রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চল নিলক্ষায় দুই পক্ষের মধ্যে সহিংসতা শুরু হলে ওই এলাকায় পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। ওই ক্যাম্পের দায়িত্ব পান রায়পুরা থানার তৎকালীন এসআই জিয়াউর রহমান। ওই সময় প্রবাসীর একটি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পান তিনি। মামলা তদন্ত করতে গিয়ে এসআই জিয়ার নজর পড়ে ওই প্রবাসীর স্ত্রীর ওপর। তিনি পুলিশি ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বিভিন্ন প্রকার ভয়-ভীতির মাধ্যমে প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এরই ধারাবাহিকতায় এসআই জিয়া সুযোগ পেলেই নানা অজুহাতে প্রবাসীর শ্বশুরবাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন। একপর্যায়ে গত ২৮ নভেম্বর শ্বশুরবাড়িতে বেড়ানোর কথা বলে প্রবাসীর স্ত্রীকে মোটরসাইকেলে নিয়ে চলে যান এসআই জিয়া। বিষয়টি প্রবাসীর শ্বশুরবাড়ির লোকজন জানতে পেরে তাঁকে উদ্ধারের জন্য এসআই জিয়ার বাসায় যান। সেখানে দুজনের কাউকে না পেয়ে তারা বিষয়টি জিয়ার স্ত্রীকে জানান। স্ত্রীর চাপে একপর্যায়ে এসআই জিয়া প্রবাসীর স্ত্রীকে তার পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হন।

এই খবর পেয়ে পরের দিনই মালয়েশিয়া থেকে দেশে চলে আসেন ওই প্রবাসী। তিনি দুই সন্তানের কসম দিয়ে স্ত্রীকে তাঁর সংসারে ফেরার অনুরোধ জানালে স্ত্রী রাজি হন। কিন্তু পরে এসআই জিয়ার নানা ভয়-ভীতিতে আতঙ্কিত হয়ে স্বামী-সন্তানের কাছে ফিরতে পারেননি তিনি।

এই তথ্য জানিয়ে ওই প্রবাসী জানান, গত ৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় তিনি স্ত্রীকে নিয়ে নরসিংদী শহরের রেলওয়ে স্টেশন রোডের মার্কেটে গেলে এসআই জিয়ার সঙ্গে তাদের দেখা হয়। এসআই জিয়া তাঁর সামনে স্ত্রীকে জোর করে মোটরসাইকেলে বসিয়ে তুলে নিয়ে যান। এরপর মিথ্যা মামলা-মোকদ্দমায় জড়ানোসহ বিভিন্ন প্রকার ভয়-ভীতি দেখিয়ে এ নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে হুমকি দেন এসআই জিয়া। তিনি পরে নরসিংদীর পুলিশ সুপার আমেনা বেগমের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। স্ত্রীকে ফেরত না পেয়ে নরসিংদীর অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে একটি মামলা করেন তিনি। আদালতের নির্দেশে নরসিংদী সদর মডেল থানা পুলিশ গতকাল সোমবার এসআই জিয়াউর রহমান ও ওই প্রবাসীর স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে।

মামলার বাদী বলেন, ‘আমাদের নিলক্ষা গ্রামে দুই পক্ষের টেঁটা ও বন্দুকযুদ্ধে সব কিছু ধ্বংস প্রায়। আর এর মধ্যে পুলিশ রক্ষক হয়ে ভক্ষকের কাজ করে আমাদের সাজানো সংসারটি তছনছ করে দিয়েছে। এসআই জিয়ার কারণে আজ আমার দুই সন্তান মা হারা হয়েছে। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তাদের কঠিন বিচার দাবি করছি।’

এর আগে এসআই জিয়াকে রায়পুরা থানা থেকে প্রত্যাহার করে নরসিংদী পুলিশ লাইনে নেওয়া হয়। সোমবার সকালে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

গ্রেপ্তারের পর এসআই জিয়াউর রহমান প্রবাসীর স্ত্রীকে অপহরণ করার অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আইন মোতাবেক আমার দ্বিতীয় স্ত্রী তাঁর আগের স্বামীকে তালাক দিয়েছে। এরপর আমি তাকে বিয়ে করেছি। আর মামলায় অপহরণের যে তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে সেদিন আমি নিলক্ষায় সহিংসতার ঘটনার দায়িত্ব পালন করেছি।’

এদিকে এসআই জিয়া প্রবাসীর স্ত্রীকে বিয়ে করার দাবি করলেও আজ আদালতে তিনি বিয়ে বা কাবিনের কোনো কাগজপত্র এবং দ্বিতীয় বিয়ের জন্য প্রথম স্ত্রীর অনুমতিপত্রও দেখাতে পারেননি বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ও কথিত বিয়ের ঘটনায় নরসিংদী মহিলা পরিষদ, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ নেটওয়ার্ক (এনএনপিএন) ও স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থা এমডিএস তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে এসআই জিয়াউর রহমানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।



মন্তব্য চালু নেই