প্রধান বিরোধী দলের তকমাও অনিশ্চিত কংগ্রেসের

দিলীপ মজুমদার (কলকাতা): সরকার তো গেছেই, এবার লোকসভায় প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা পাওয়ার ব্যাপারেও অনিশ্চিত হয়ে পড়ল সনিয়ার দল৷ ঘটনা হল, কংগ্রেসকে তীব্র অস্বস্তিতে ফেলতে মল্লিকার্জুন খাড়গেকে লোকসভার বিরোধী দলনেতার মর্যাদা দিতে চাইছে না মোদী সরকার৷ নিয়ম অনুযায়ী, লোকসভার বিরোধী দলনেতার পদ পেতে গেলে মোট সদস্যসংখ্যার দশ শতাংশ (অর্থাত্‍ ৫৫ জন) সাংসদ থাকতে হবে৷ কিন্ত্ত এ বার কংগ্রেসের সাংসদ সংখ্যা মাত্র ৪৪৷ এর পরেও সরকার রাজি থাকলে তাদের বিরোধী দলনেতার পদ দেওয়া যেতে পারে৷ কিন্ত্ত সেখানেই বেঁকে বসেছে মোদী সরকার৷

ফলে এবার লোকসভার বিরোধী দলনেতার মর্যাদা কেউ নাও পেতে পারেন৷ বরং চারটি গুরুত্বপূর্ণ পদ বিভিন্ন বিরোধী দলকে ভাগ করে দিতে চায় সরকার৷ ডেপুটি স্পিকারের পদ এআইএডিএমকে-কে দেওয়া হচ্ছে এবং থাম্বিদুরাই সম্ভবত পরবর্তী ডেপুটি স্পিকার হচ্ছেন৷ পিএসি-র চেয়ারম্যানের পদ বিজু জনতা দলকে দিতে চায় সরকার৷ বাকি দুটি পদ, অর্থ মন্ত্রক সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ও কমিটি অফ পাবলিক আন্ডারটেকিং কংগ্রেস ও তৃণমূলকে দেওয়া হতে পারে৷ কংগ্রেস অবশ্য লিখিত ভাবে স্পিকারের কাছে বিরোধী দলনেতার পদ দাবি করছে৷ তাদের যুক্তি, কংগ্রেসই সবথেকে বড় বিরোধী দল৷ তাছাড়া ইউপিএ হল ভোটের আগের জোট৷ এই জোটের সাংসদ সংখ্যা হল ৫৭৷ কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিংভি বলেছেন, ‘লোকসভার বিরোধী নেতার পদ নিয়ে স্পিকারই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন৷ তিনি এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেননি৷’

লোকসভার বিরোধী দলনেতার পদের গুরুত্ব হল, লোকপাল, সিবিআই ডিরেক্টর, সিভিসি, মানবাধিকার কমিশনের প্রধানের পদে নিয়োগের প্যানেলে লোকসভার বিরোধী নেতা থাকেন৷ এখন কেউ যদি বিরোধী নেতা না হন, তা হলে তো লোকপাল-সহ অন্য পদে নিয়োগের নিয়ম বদলাতে হবে৷ বিজেপিতে একটা মত হল, রাজ্যসভার বিরোধী নেতাকে প্যানেলে নেওয়া যেতে পারে৷ তা হলেও কিন্ত্ত সংশ্লিষ্ট আইন পাল্টাতে হবে৷ কংগ্রেসের বক্তব্য, যদি মোদী সরকার লোকসভার বিরোধী দলনেতার মর্যাদা খাড়গেকে না দেয়, তা হলে এই সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের কাছে ব্যুমেরাং হয়ে দেখা দেবে৷ তখন কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে পুরোদস্ত্তর আক্রমণে নামবে৷

কংগ্রেসের দাবি, আসলে মোদী সরকারের ভয় অন্য জায়গায়৷ কংগ্রেসকে বিরোধী দলনেতার পদ দিলে তাদের প্রধান বিরোধী দল বলেও স্বীকার করে নিতে হবে৷ তখন কংগ্রেসকেই পিএসি-র চেয়ারম্যানের জায়গাটা দিতে হবে৷ এই পদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ ক্যাগের সব রিপোর্ট পিএসি খতিয়ে দেখে৷ সেখানে সরকার বিরোধিতার বিষয় থাকে৷ কংগ্রেসি চেয়ারম্যান হলে এই বিরোধিতা ‘বেশি মাত্রায়’ হতে পারে৷ সে জন্যই সনিয়া-রাহুলের দলকে বিরোধী দলনেতার পদ দিতে দোনামোনা করছেন মোদী৷ কেন্দ্রীয় সরকারের পাল্টা যুক্তি, অতীতে দীর্ঘসময় বিরোধী দলনেতার পদ ছিল না৷ তখন তো কোনও অসুবিধা হয়নি৷ তবে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা, সরকার চার বিরোধী দলের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলি দিয়ে দেখাতে চায়, কংগ্রেস কতখানি শক্তিশূন্য ও গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে৷ আর এ ভাবেই সনিয়া ও রাহুলের কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দেওয়ার কৌশল বেছে নিয়েছে বিজেপি৷



মন্তব্য চালু নেই