প্রধানমন্ত্রীর সই জাল করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিতে চিঠি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সই জাল করে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে একজনকে ভর্তির নিতে চিঠি দিতে গিয়ে ধরা পড়েছেন এক নারী। তার নাম হাছিনা বেগম। তিনি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনের বাবুর্চির একটি জাল পরিচয়পত্রও বানিয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

গত ১৫ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার মনজিলা ফারুকের সই করা একটি চিঠি আসে বিশ্ববিদ্যালয়ে। এতে বলা হয়, ভর্তি পরীক্ষায় ৩৯০৪৭ নম্বর রোলধারী ফাহিম জাহান দৃষ্টি প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার মনজিলা ফারুকের সুপরিচিত এবং নিকটাত্মীয়। দৃষ্টিকে যথেষ্ট মেধাবী এবং পরিশ্রমী উল্লেখ করে তাকে ২০১৬-১৭ সেশনের ভর্তি করাতে সুপারিশ করা হয় ওই চিঠিতে। সুপারিশকারী হিসেবে এতে ছিল জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এবং পরিকল্পনা মন্ত্রালয়ের সচিব ভূঁইয়া সফিকুল ইসলামের সই।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই ছাত্রীকে ভর্তির জন্য উদ্যোগ না নেয়ার পর একই চিঠি পরে আবারও একবার পাঠানো হয় ফ্যাক্স করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কামাল উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘চিঠির ভাষাগত দুর্বলতাও আমাদের চোখে পড়ে। এ জন্য আমাদের সন্দেহ হয়। আর আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে খোঁজ খবর নেয়ার চেষ্টা করি।’

এর মধ্যেই গত ২৩ জানুয়ারি আরও একটি ফ্যাক্স আসে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেটিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের লোগো, প্রধানমন্ত্রীর নাম ও তার হুবহু সই রয়েছে।

এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবারও বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জানায় আর তখনই নিশ্চিত হয় যে, ওই চিঠি প্রধানমন্ত্রী পাঠাননি।

এর মধ্যে রবিবার হাসিনা বেগম নামে এক নারী আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে দৃষ্টিকে ভর্তির জন্য চাপ দিতে থাকেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে আটক করে পুলিশে খবর দেয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কামাল উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, ‘এক ছাত্রীকে ভর্তি করাতে গত ৭ ডিসেম্বর প্রথম চিঠি পাঠানো হয়েছিল ফ্যাক্সের মাধ্যমে। চিঠির ভাষাগত দুর্বলতা দেখে সন্দেহ হয়েছিল। এ কারণে আমি গোপনে প্রধানমন্ত্রীর কার‌্যালয় খোঁজ-খবর নিচ্ছিলাম। ভর্তির বিষয়টি দেরি হওয়ায় ফ্যাক্সের মাধ্যমে ১২ ডিসেম্বর আরেকটি চিঠি পাঠায়।’

উপাচার্য বলেন, ‘এ চক্রটি চিঠি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ঘুরাঘুরি করেছিল। এরপর গত মাসের ২৩ তারিখ আরেকটি চিঠি পাঠায়। পরে আমরা নিশ্চিন্ত হই যে প্রধানমন্ত্রীর সই নকল করা হয়েছে। আজ আবার আসলে তাকে আটক করি আমরা।’

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ওই নারী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আটক ছিলেন। তবে বিষয়টি জানেন ওই নারী এখন আটক আছেন রাজধানীর শেরেবাংলানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জি জি বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘ওই নারীকে এখনও আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। আমাদের কাছে দিলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেবো।’

গত ডিসেম্বরেও চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রীর সই নকল করার ঘটনায় সাইফুল আলম চৌধুরী টিটো নামে একজন আটক হয়েছিলেন।

টিটো নিজেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক দাবি করে একটি পরিচয়পত্র তৈরি করেছিলে। এতে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপের সইও আছে। পরে জানা যায় সইগুলো নকল। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কোনো নেতার এই ধরনের পরিচয়পত্রই নেই।



মন্তব্য চালু নেই