প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর খালেদার লন্ডনযাত্রা

সব ঠিক থাকলে আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে লন্ডন সফরে যেতে পারেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এই সফরের উদ্দেশ্য চিকিৎসা হলেও দলের নীতিনির্ধারণী অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিন্ধান্ত হতে পারে, থাকতে পারে আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়টিও।

এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে লন্ডন যাওয়ার কথা থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর কর্মসূচি থাকায় পিছিয়ে যায় খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা। কারণ, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে বিএনপিতে এক ধরনের হিসাব চলছে।

সেই হিসাবের মূলে রয়েছে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষর হতে যাওয়া প্রতিরক্ষাবিষয়ক এমইউ চুক্তি। চুক্তিটি স্বাক্ষর হলে বিএনপি তাদের রাজনৈতিক কৌশলে আনতে পারে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। এসব বিষয় সামনে রেখেই চেয়ারপারসনের লন্ডনযাত্রার দিনক্ষণ ঠিক করা হচ্ছে।

বিএনপি নেতাদের ভাষায়, বাংলাদেশ-ভারত চুক্তির ভয়ানক পরিণতির বিষয়ে দেশব্যাপী জনমত গড়ে তুলতে মাঠে নামবে দলটি। ভারত সফরের আগে বা পরে দলের মহাসচিবের নেতৃত্বে ওই চুক্তি নিয়ে ‘হাই প্রোফাইল’ সংবাদ সম্মেলন করবে দলটি। এমন চিন্তা থেকেই প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফরের দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখছে বিএনপি।

সূত্র জানায়, লন্ডন যাওয়ার আগে দল পুনর্গঠনের বাকি কাজ সারতে তোড়জোড় শুরু করেছেন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। চলতি সপ্তাহে প্রায় ১০টি জেলা, ঢাকা মহানগরী কমিটি, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দলসহ অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ কমিটি ঘোষণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া খালেদা জিয়া লন্ডন অবস্থানকালে তার ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে পরামর্শ করে দলের ভবিষ্যৎ করণীয়ও ঠিক করবেন।

সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার লন্ডনে যাওয়ার প্রস্তুতি প্রায় গুছিয়ে আনা হয়েছে। পরিকল্পনা ছিল মাসের শুরুর দিকে লন্ডন যাওয়ার। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে বিএনপিতে এক ধরনের হিসাব চলছে। সেই হিসাবের মূলে রয়েছে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষর হতে যাওয়া প্রতিরক্ষাবিষয়ক এমইউ নিয়ে চুক্তি। চুক্তিটি স্বাক্ষর হলে বিএনপি তাদের রাজনৈতিক কৌশলে কিছুটা পরিবর্তনও আনতে পারে।

সূত্র আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী চলতি মাসের ৭ তারিখে ভারত সফরে যাবেন। চার দিনের এ সফর শেষ করে ১১ এপ্রিল দেশে ফেরার কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ফেরার সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই লন্ডন সফরে যাবেন খালেদা জিয়া। চেয়ারপারসনের সফরসঙ্গী হিসেবে গুলশানের অফিসের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়ালের যাওয়ার ব্যাপারে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এ ছাড়া সফরে আরো বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাও যোগ দিতে পারেন। আরব আমিরাতের দুবাই থেকে বেশ কয়েকজন প্রবাসী নেতারও যোগ দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দুবাই থেকে প্রবাসী নেতাদের যোগ দেয়ার বিষয়ে এখনো মতামত দেননি খালেদা জিয়া। দেশের এবং প্রবাসের বেশ কয়েকজন নেতা সফরসঙ্গী হতে চেষ্টা করছেন।

এদিকে লন্ডন যাওয়ার আগে আগে বিএনপির তৃণমূল পুনর্গঠনের কাজ মোটাদাগে শেষ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন খালেদা জিয়া। প্রায় বছরব্যাপী বিএনপির তৃণমূল গঠনের কাজ চললেও এখনো বাকি অনেকগুলো জেলা ও মহানগর কমিটি। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরী বিএনপি, স্বেচ্ছাসেবক দলের ঢাকা মহানগর কমিটি, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ অনেক জেলা কমিটি।

সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির ৭২টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪০টির মতো জেলার কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় সেই কাজ শেষ করার তাগিদ আসে হাইকমান্ড থেকে। এ ছাড়া এক নেতার এক পদ রেখে ১৮ জন নেতাকে পছন্দমতো একটি পদ রেখে বাকি পদ ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে।

সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া লন্ডন যাওয়ার আগে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে ৮-১০টি জেলার কমিটি ঘোষণা হবে। এ ছাড়া ঘোষণায় বাকি অন্য জেলা বা মহানগর কমিটি এপ্রিল মাসের মধ্যেই শেষ করতে চান দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

ঢাকা মহানগরী কমিটির সবকিছু চূড়ান্ত হলেও দলের সিনিয়র নেতাদের পছন্দ বা অপছন্দের কারণে আটকে যায়। বলা হচ্ছে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের পরই সেই কমিটিও ঘোষণা করা হবে। ঢাকা মহানগরী বিএনপির দুই ভাগের কমিটির মধ্যে উত্তরে কাইয়ুম ও কমিশনার হাসানকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে চূড়ান্ত করা থাকলেও হাসানের পদে আসা নিয়ে দেখা দেয় অনিশ্চয়তা।

সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দেশের বাইরের অবস্থানকে বিবেচনায় নিয়ে বিএনপি নেতা আঞ্জু অথবা তেজগাঁয়ের কমিশনার আনোয়ারুজ্জামানকে সাধারণ সম্পাদক করা হচ্ছে বলে শোনা যায়। এমন গুঞ্জনের মধ্যে কমিশনার হাসান দেশেই থাকবেন বলে জানান এবং শেওয়াপাড়ার নিজ বাড়ির দুটি ফ্লোর মহানগরী বিএনপিকে ব্যবহার করতে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

এমন প্রতিশ্রুতি পেয়ে মহানগরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাও ফ্লোর দুটিকে বিএনপির নামে লিখে দেয়ার প্রস্তাব দেন। দলের এমন প্রস্তাবেও কমিশনার হাসান রাজি বলে শোনা যায়। এ বিষয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে মহানগর দক্ষিণের কমিটি নিয়ে জটিলতা ক্রমেই বাড়ছে। এখানে সভাপতি পদে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সালাউদ্দিনের নাম চূড়ান্ত করা হলেও সভাপতি হতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী সোহেল। সালাউদ্দিনের অধীনে তিনি সাধারণ সম্পাদক হতে আপত্তি জানিয়েছেন।

এমন অবস্থায় দক্ষিণের কমিটি নিয়ে জটিলতা কাটিয়ে উঠতে পারছেন না দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এখন দলের চেয়ারপারসন বিষয়টি সমাধান করলেই পর্দা উঠতে পারে মহানগরী কমিটির। কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটিও গঠনের কাজ চলছে জোরেশোরে। দুই দুবার দলটির কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ করেও হয়নি সম্মেলন। এখন পাঁচ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি চূড়ান্ত করে আনছেন বিএনপির হাইকমান্ড।

সূত্র জানায়, সম্মেলনের দিনই ঘোষণা করা হবে সেই কমিটিও। এর বাইরে স্বেচ্ছাসেবক দলের ঢাকা মহানগর কমিটি গঠনের কাজও শেষ করে আনা হয়েছে। সূত্র জানায়, মহানগর বিএনপির পরই ঘোষণা হবে স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি। মহানগরকে ছাত্র দলের মতো করে চার ভাগে ভাগ করে প্রস্তাব করা হয়েছে। চার ভাগে যাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে তারা হলেন, হারুন-অর রশিদ, জামির হোসেন, এমদাদ, রবিন, সাইদুর, ফিরোজসহ কয়েকজন যুগ্ম আহ্বায়কের নাম।

দলের চেয়ারপারসনের লল্ডন সফর নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, চেয়ারপারসনের লন্ডন যাওয়ার বিষয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে তেমন কিছু জানি না। যতটুকু জেনেছি পত্রিকার মাধ্যমে। কবে যাবেন বা না যাবেন এ বিষয়ে কথা বলতে পারব না।



মন্তব্য চালু নেই