প্রধানমন্ত্রীর বিমান ৩৭ মিনিট আকাশে, ৩ তদন্ত কমিটি

ধাতব টুকরা পড়ে থাকতে দেখে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে আকস্মিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর এ কারণে গত মঙ্গলবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটিকে ঢাকার আকাশে উড়তে হয়েছে বাড়তি ৩৭ মিনিট।

স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) সদস্যরা রানওয়ে পরিষ্কার করার পর প্রধানমন্ত্রী বহনকারী বিমানটি অবতরণ করে। এ ঘটনায় বাংলাদেশ বিমান, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বুধবার পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি করেছে।

বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে এয়ারট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের অপারেটর কামরুলকে ক্লোজ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, সৌদি আরব সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমানটি অবতরণের আধা ঘণ্টা আগে নিয়মানুযায়ী এসএসএফের সদস্যরা রানওয়ে পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা রানওয়েতে কিছু ধাতব টুকরা পড়ে থাকতে দেখে সঙ্গে সঙ্গে এয়ারট্রাফিক কন্ট্রোল রুমে জানান এবং রানওয়ে পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেন। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটি ঢাকার আকাশে প্রবেশ করে। সেট পরিচালনা করছিলেন বিমানের ফ্লাইট পরিচালনা শাখার পরিচালক ক্যাপ্টেন ফরহাত হাসান জামিল ও ক্যাপ্টেন ইশতিয়াক হোসেন। সন্ধ্যা ৭টা ১৩ মিনিটে অবতরণের জন্য কন্ট্রোল রুমের অনুমতি চান ক্যাপ্টেন।

কিন্তু কন্ট্রোল রুম থেকে একেকবার একেক দিকে যেতে বলা হয়। এভাবে কিছুক্ষণ যাওয়ার পর বারবার বৈমানিকেরা প্রকৃত কারণ জানতে চান। অনেক পীড়াপীড়ির পর কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয় যে রানওয়ে সাময়িক বন্ধ আছে। রানওয়ে পরিষ্কার করা হচ্ছে। পরে ৭টা ৫০ মিনিটের দিকে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটি নিরাপদে অবতরণ করে।

বিমানবন্দরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইট আসার পৌনে দুই ঘণ্টা আগে সৌদি আরবের দাম্মামগামী বিমানের একটি বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ উড্ডয়ন করছিল। রানওয়েতে চলা অবস্থায় সেটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে এবং উড্ডয়ন বাতিল করা হয়। এ সময় বিমানটির ইঞ্জিনের বিভিন্ন ধাতব টুকরা ভেঙে রানওয়েতে গিয়ে পড়ে।

বেবিচকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, নিয়ম হচ্ছে এ ধরনের কোনো উড্ডয়ন বাতিল হলে রানওয়ে পরিদর্শন করা। কারণ, উচ্চগতিতে থাকা বিমান থামাতে গেলে অনেক সময় চাকা বা অন্য কোনো উপাদান ছিটকে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু মঙ্গলবার রানওয়ে পরিদর্শনের এই নিয়ম মানা হয়নি। এ ছাড়া বাংলাদেশ বিমানের নতুন কেনা বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজের ইঞ্জিন এভাবে বিকল হওয়া বা ইঞ্জিনের ভেতর থেকে ধাতব টুকরা ছিটকে পড়াটাও অস্বাভাবিক বলে মনে করেন বিমানের কর্মকর্তারা।

এ নিয়ে গতকাল বেবিচক কার্যালয়ে দিনভর বৈঠক হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনটি তদন্ত কমিটি করা হয়। এর একটি বিমানবন্দরের পরিচালকের নেতৃত্বে, একটি বেবিচকের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে এবং তৃতীয় কমিটি বাংলাদেশ বিমানের চিফ অব টেকনিক্যালের নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন জাকির হাসান বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তিনটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে আর কিছু বলতে রাজি হননি।



মন্তব্য চালু নেই