প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনের বিনও চুরি

খাদ্যপণ্যের খোসা, পানি বা পানীয়ের বোতল বা মোড়ক অথবা ছোটখাটো শুকনো আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলবে না নগরবাসী-এই চিন্তা থেকে সড়কের ধারে দৃষ্টিনন্দন কিছু বিন স্থাপন করেছিল দুই সিটি করপোরেশন। কিন্তু চোরের দল হাওয়া করে দিয়েছে প্রতি ১০টির নয়টি বিন। ২৪ ঘণ্টা কঠোর নিরাপত্তার মাঝে থাকা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উল্টোপাশের বিনটিও খুলে নিয়েছে তারা।

যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলে পরিবেশ দূষণ রোধে গত বছরের এপ্রিলে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় মোট ১০ হাজার বিন স্থাপন করে নগর কর্তৃপক্ষ। সে সময় এই উদ্যোগের প্রশংসাও হয়েছিল। কিন্তু বিনগুলো অরক্ষিত থাকার বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছিল তখনই। তবে নগর কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করেছিল চুরি হবে না এগুলো। তবে স্থাপনের পরে থেকেই একের পর এক হাওয়া হয়ে যেতে থাকে সেগুলো। প্রথমে বিন এবং এরপর বিন রাখার লোহার স্ট্যান্ডগুলোও খুলে নেয় চোরের দল।

চোরের দলের সাহস আছে বটে! অলি-গলি আর আনাচে কানাচের বিনগুলো তো বটেই খোয়া গেছে খোদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রধান ফটকের ঠিক উল্টো পাশের বিনটিও।

সরকারপ্রধানের কার্যালয় বলে কথা। আশেপাশে সার্বক্ষণিক কড়া পুলিশি পাহারা। কাউকে দাঁড়াতে দেয় না পুলিশ। সিসি ক্যামেরায়ও চলে নজরদারি। এত নিরাপত্তার মাঝেও কীভাবে বিনটি চুরি হলো?

কার্যালয়ের পাশে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ আবেদীন সাত্তার বলেন, ‘আমরা এখানে সকাল থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করি। সারাদিন তো আমাদের চোখে এটা খুলে নেয়ার চিত্র তো চোখে পড়েনি। হয়তো বা কেউ হয়তো রাতে খুলে নিয়ে গেছে।’

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পাশে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন পুলিশ সদস্য মো. সাজিদ বলেন, ‘আমরা এখানে শিফ্ট ওয়াইজ দায়িত্ব পালন করি। আমাদের এখানে চারটি শিফট ভাগ করে দেয়া আছে। তবে আমাদের চোখে কাউকেই এই বিনটি চুরি করতে দেখিনি। এইখানে চুরি করা অসম্ভব। হয়তো সিটি করপোরেশনের লোকজন কোনো কারণে এটি খুলে নিয়ে গিয়েছে। আবার যথা সময়ে এটি লাগিয়ে দিয়ে যাবে।’

এই পুলিশ সদস্য বলেন, ‘কার্যালয়ের আশে পাশে অনেক ক্যামেরা স্থাপন করা আছে। যে কেউ এটি চুরি করে থাকলে অবশ্যই ক্যামেরায় ধরা পড়বে। তবে আমার মনে হচ্ছে না এটি চুরি করা হয়েছে।’

তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কর্ণেল আবদুর রাজ্জাক নিশ্চিত করেছেন তারা বিনটি খুলে নেননি। এটি চুরি হয়েছে বলেই মনে করছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ঢাকা সেনানিবাসের জাহাঙ্গীর গেট পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে বসানো হয়েছিল আরও বেশ কিছু বিন। একটির থেকে অন্যদির দূরত্ব ৫০ মিটার। এর একটিও চুরি হয়নি। স্ব স্ব স্থানে সবগুলো ঠিকঠাক রয়েছে। রাস্তার ধারের সবগুলো বিন ঠিকঠাক রয়েছে।

জাহাঙ্গীর গেইটে দায়িত্বরত সেনাবাহিনীর সদস্য আজাদ আহমেদ বলেন, ‘আমরা এখানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত টানা সময় দায়িত্বে থাকি। এখানে কোনো চোরের সাধ্য নেই এখান থেকে বিন চুরি করে নিয়ে যাবে। আমাদের যেখানে দায়িত্বে থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়, সেখানেই আমাদের দায়িত্বে থাকতে হয়। আমাদের নজরদারির কারণে চোরেরা এখান থেকে কিছুই চুরি করতে পারে না। আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে চুরি করা একেবারেই অসম্ভব।’

চুরি ১০ হাজারের প্রায় নয় হাজার

ঢাকার দুই সিটিতে স্থাপন করা ১০ হাজার বিনের মধ্যে কতগুলো টিকে আছে? এ বিষয়ে ধারণা করতে সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন পাঁচটি এলাকায় জরিপ কাজ চালায়।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক জানান, একটি অঞ্চলের এক হাজার বিনের মধ্যে ৮৭৪টি চুরি হয়ে গিয়েছে। বাকিগুলোর অবস্থাও ভালো না।

লোহার স্ট্যান্ডে বসানো বিনগুলো শুরু থেকেই চোরের দলের আগ্রহের কারণ ছিল এগুলো ধাতব উপাদানে তৈরি। এগুলো খুলে নিয়ে ভেঙে ভাঙারির দোকানে সহজেই বিক্রি করে ফেলা সম্ভব।

সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘আগামীতে আমরা ধাতব পদার্থের বদলে প্লাস্টিক দিয়ে বিন তৈরি করবো যেন এটি ব্যবহারের পর মূল্যহীন হয়ে পড়ে। তবে সব কথার শেষ কথা হল মানুষকে বিন ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে।-ঢাকাটাইমস



মন্তব্য চালু নেই