প্রতি মুহূর্তে গোরস্থানের পরিসর বাড়ছে : খালেদা জিয়া

চট্টগ্রামে পুলিশ সুপারের স্ত্রী ও নাটোরে এক খ্রিস্টান ব্যবসায়ীকে খুনের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘এ হত্যাকাণ্ড বর্বর, কাপুরুষোচিত ও অমানবিক পশুপ্রবৃত্তির শামিল।’

‘সিরিয়াল কিলিং’ শুরু হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘দেশে যেন প্রতি মুহূর্তে গোরস্থানের পরিসরই বিস্তৃত হচ্ছে। দেশবাসী যেন এক নিরাপত্তাহীন অন্ধকার গুহায় বসবাস করছে।’

সোমবার (৬ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বার্তায় ওই কথাগুলো বলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

‘চারিদিকে ভয়, শঙ্কা আর আতঙ্ক নিয়েই দেশের মানুষ এখন অনিশ্চিত জীবনযাপন করছে। ভ্রুক্ষেপহীন সরকার বন্য প্রতিহিংসার আক্রোশে জঙ্গিদের তৎপরতা দমন করার পরিবর্তে বিরোধী দলের ওপর দায় চাপিয়েই দায়িত্বের সমাপ্তি ঘটালেও নিজেরা নিষ্কলঙ্ক হতে পারছে না’, বলেন খালেদা।

সরকার দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তারের পরিবর্তে ‘বিভ্রান্তমূলক’ কথাবার্তা ছড়াচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আর এই সুযোগে জঙ্গিরা আরও বেশি শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। জঙ্গিরা প্রকাশ্য দিবালোকে নির্ভয়ে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করছে, অথচ ক্ষমতাবিলাসী সরকার নিশ্চিন্তে এগুলোকে আমলেই নিচ্ছে না।’

দুঃখ প্রকাশ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘বিদেশি হত্যা থেকে শুরু করে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজন ও তাদের ধর্মগুরু, মসজিদের ইমাম, শিয়া মুসলমান, পীর ও পীরের শিষ্য কেউই ঘাতকদের প্রকাশ্য অস্ত্রের আঘাত থেকে রেহাই পায়নি। জনপদের পর জনপদে এখন শোকের মাতম উঠেছে। এই রক্তনদী আর কতদূর বইবে তা কেউ জানে না।’

তিনি বলেন, ‘দেশে একদলীয় দুঃশাসনের নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার একটি হচ্ছে এই জঙ্গি তৎপরতা। ভোটারবিহীন সরকারের রাজনৈতিক আচরণ ও জঙ্গিদের আচরণের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এই দুই পক্ষই বিরোধী চিন্তা ও মত সহ্য করে না।’

মানুষের অধিকারহীন এই দেশ যেন এখন মৃত্যুনগরীতে পরিণত হয়েছে, বলেন তিনি। আর এই পরিস্থিতি উত্তরণে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতে না পারলে জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে বলে হুঁশিয়ার দেন দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসন।

খালেদা জিয়া অবিলম্বে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার এবং খ্রিস্টান মুদি দোকানি সুনীল গোমেজের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানান।

রোববার (৫ জুন) সকালে চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড়ে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাত ও গুলি করে পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুকে খুন করে দুর্বৃত্তরা। দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট স্কুলে যাওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে।

পিবিআই চট্টগ্রাম প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বশির আহমেদ খান জানান, সকাল ৬টা ৩৫ মিনিটের দিকে বাসা থেকে ১০০ গজ দূরে ছেলেকে নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট স্কুলে যাওয়ার পথে তিন মোটরসাইকেল আরোহী তাকে ধাক্কা দেন। এরপর তারা ছুরিকাঘাত করে পরপর তিন রাউন্ড গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়।

এ হত্যাকাণ্ডের জন্য প্রাথমিকভাবে জঙ্গি গোষ্ঠীকে দায়ী করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল পুলিশ জব্দ করলেও এখনও খুনিদের ধরতে পারেনি তারা।

একই দিন বাংলাদেশে উত্তরাঞ্চলের নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া পৌর এলাকার খ্রিস্টানপাড়ায় নিজের দোকানে খুন হন সুনীল গোমেজ (৬০)।

সুনীল খ্রিস্টানপাড়ায় স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন। বাসার পাশেই তার দোকান। তার ভাই প্রশান্ত গোমেজ দিনাজপুরে একটি চার্চের ফাদার, যে জেলাটিতে সম্প্রতি এক খ্রিস্টান পাদ্রি আক্রান্ত হয়েছিলেন।

সকালে সুনীলের লাশ পাওয়ার পর বিকেলে সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের ওয়েবসেইটে এই হত্যাকাণ্ডে আইএসের দায় স্বীকারের খবর আসে। এর আগে বিভিন্ন খুনের পর আইএস দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিলেও সরকার তা নাকচ করে দেয়।



মন্তব্য চালু নেই