কারেন্ট জালে রেনু নিধন সামুদ্রিক মাছের বংশ বিস্তার হুমকিতে

প্রতি বছরে বরগুনা থেকে পাচার হচ্ছে অর্ধশত কোটি টাকার রেনু পোনা

বরগুনা প্রতিনিধি:বঙ্গোপসাগর মোহনায় বিষখালী-বুড়িশ্বর-বলেশ্বর ও পায়রা নদীতে কারেন্ট জালে অবাধে রেনু পোনা নিধন করা হচ্ছে। শুধু বরগুনা থেকে প্রতি বছর প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার রেনু পোনা অবৈধভাবে পাচার হয়ে যাচ্ছে খুলনা। নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল দিয়ে বাগদা ও গলদার পোনা ধরা হলেও এ জালে বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার রেনু পোনা মারা পড়ছে প্রতিদিন। এতে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমানের রাজস্ব ও ব্যাহত হচ্ছে সামুদ্রিক মাছের বংশ বিস্তার। এসবই হচ্ছে মৎস্য বিভাগ, পুলিশ ও সরকার দলীয় নেতা কর্মীদের ম্যানেজ করে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বরগুনা সদর, তালতলী ও পাথরঘাটা উপজেলা থেকে প্রতিবছর প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার রেনু পোনা অবৈধভাবে পাচার হয়ে যায় খুলনা। প্রতিদিন বরগুনা ও তালতলী উপজেলার রেনু পোনা বরগুনা থেকে বরিশাল হয়ে খুলনা যায় এবং পাথরঘাটা থেকে সংগ্রহীত রেনু পোনা পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া হয়ে খুলনা যায়। বরগুনা সদর, তালতলী ও পাথরঘাটা উপজেলা থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে ৪ টি ট্রাক পোনা নিয়ে খুলনা যায় বলে স্থানীয়রা জানান। এতে প্রতি ট্রাকে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার মাছ থাকে। প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার রেনু পোনা পাচার হয়। তাতে প্রতি বছর শুধু এই মৌসুমে অর্ধশত কোটি টাকার পোনা পাচার হয় বলে ধারনা করা হচ্ছে। আর এই রেনু পোনা পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে বরগুনা ও পাথরঘাটা কে বেছে নিয়েছে পাচারকারীরা।

বরগুনার তালতলী উপজেলার বগি গ্রামের ইমরান নামের এক পোনা ব্যাবসায়ী জানান, প্রতিদিন রাত ১ টার পর তালতলী উপজেলার জেলেরা ট্রলারে করে পোনা নিয়ে গোলবুনিয়া আসে। এর পর এখান থেকেই পোনা ট্রাক বোঝাই করে নিয়ে যাওয়া হয় খুলনা। সব পোনাই পাচার হয় পোনা ব্যাবসায়ীদের যৌথ সমন্বয়ের মাধ্যমে মৎস্য বিভাগ, পুলিশ এবং পথে যে চাঁদা দেওয়া হয় তা সমান ভাগে। অবৈধ পোনা ব্যবসায়ীরা কয়েকজন বলেন, পোনা নিধন করা নিষেধ জেনেও আমরা পুলিশ ও স্থানীয় সরকার দলীয় নেতা কর্মীদের ম্যানেজ করে এই ব্যবসা করি। এ ব্যবসা করতে আমাদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন অসুবিধা হয় না।

বরগুনার গোলবুনিয়ার বাগদা পোনার ব্যবসা করেন এমন এক আড়তদার নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, স্রোতের মুখে কারেন্ট জাল ভাসিয়ে রেখে জেলেরা বাগদা পোনা শিকার করেন। এসময় ওই ভাঁসা কারেন্ট জালে সাগরের সকল প্রজাতির সামদ্রিক মাছের রেনু পোনা ধরা পরে। জেলেরা আহরিত পোনা থেকে বাগদা পোনা পৃথক করে অন্যন্যা রেনু পোনা ফেলে দেয়। এতে ওই নদীর তীরেই আহরিত সকল সামদ্রিক মাছের রেনু পোনা মারা যায়।

সরেজমিনে গিয়ে, গত শুক্রবার গভীর রাতে বরগুনার মহাসড়ক এলাকায় রেনু পোনা পাচারের স্বত্ততা পাওয়া গেছে। এসময় রেনু পোনা পাচারের একটি ট্রাকে থাকা লোক জনের সাথে কথা বলে জানা গেছে প্রতিদিন বরগুনা থেকে দুইটি করে ট্রাক রেনু বোঝাই পোনা নিয়ে খুলনা যায়। প্রতি ট্রাকে প্রায় ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার রেনৃু পোনা থাকে বলে জানান তারা। এসময় তাদের কাছে পোনা অবৈধ বলে প্রশ্ন করলে তারা বলেন, পুলিশ প্রশাসন সবাই আমাদের পকেটে। কেউ আমাদের ডেকেও জিজ্ঞেস করবে না এটা অবৈধ কিনা। এসময় তারা আরো বলেন, বরগুনা পার হলে আরো ৭ থেকে ৮ জায়গায় আমরা চাঁদা দিয়ে পোনার ব্যবসা করছি। কোন সমস্যা হয় না।

জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাগর মোহনার বিষখালী-বুড়িশ্বর-বলেশ্বর ও পায়রা নদীর কমপক্ষে ৫০টি পয়েন্টে অবাধে কারেন্ট জাল দিয়ে পোনা মাছ নিধন করা হচ্ছে। এতে বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছের বংশ বিস্তার মারাত্মক ভাবে ব্যহত হচ্ছে। এ কারনে মাঝে মধ্যেই কোস্টগার্ড এর সহযোগিতা নিয়ে বিষখালী-বুড়িশ্বর-বলেশ্বর নদ থেকে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়। তবে উপকূলীয় জেলা বরগুনার মৎস্য বিভাগে জনবল ও নৌযান সংকট থাকায় এ কাজ প্রায়ই অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বঙ্কিম চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, জেলেরা যাতে অবাধে রেনু পোনা শিকার করতে না পারে সে ব্যপারে আমরা সচেতনতামুলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে আমরা ৯০ লাখ রেনু পোনা জব্দ করে নদীতে অবমুক্ত করে দিয়েছি। এছাড়াও পোনা পাচার কারিদের বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করে থাকি যার ধারাবাকিতায় বরগুনায় দুটি মামলা চলমান আছে। আমাদের নিজস্ব নৌযান ও জনবল সংকট থাকা সত্বেও কোস্টগার্ডের সহযোগীতায় বিশেষ অভিযান অব্যহত রয়েছে বলে জানান তিনি।



মন্তব্য চালু নেই