প্রতিষ্ঠার পর এত বড় সংকটে পড়েনি শিবির

আজ ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষে শিবির কিছু কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। সেই কর্মসূচি আদৌ বাস্তবায়ন করতে পারবে কি না তা শিবিরও জানে না। ক্রসফায়ারে নিহত, পঙ্গু, মামলা-জেল তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। অতীতে এত বড় সংকটে আর পড়েনি শিবির।

সরকার মনে করে তার বিরুদ্ধে যত আন্দোলন হচ্ছে তার মূলে শিবির। সে কারণেই সংগঠনটির ওপর সরকার খড়গহস্ত। প্রায় দিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ‘কথিত’ বন্ধুকযুদ্ধে নিহত হচ্ছেন শিবিরের কোনো না কোনো নেতা। বাসা-বাড়ি থেকে ধরে এনে একাধিক মামালায় দিয়ে পাঠানো হচ্ছে জেলে, কর্মীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। বিশেষ করে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মীদের অবস্থা খুবই করুণ। এরা ঘরছাড়া। সংসার ছাড়া। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া। পরিচিত মুখগুলো যেতে পাড়ছে না ক্যাম্পাসে। ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছে না। পরীক্ষা থেকে গ্রেফতার করারও নজির রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে শিবিরের নেতা-কর্মীদের শিক্ষাজীবনও আজকে হুমকির মুখে। ভবিষ্যত কী হবে তা নিয়ে সবাই চিন্তিত।

জানা গেছে, প্রসাশনের পক্ষ থেকে শিবির নেতা-কর্মীদের পরিবারেও চাপ দেয়া হচ্ছে। বাবা-মা, ভাই-বোনদের রাখা হচ্ছে হুমকিতে। পরিবারের সবাই আছেন আতঙ্কে। ছেলে কখন ধরা পড়ে। কখন কারাগারে যায়। কখন গুম হয়্। কখন ক্রসফায়ার পড়ে। এই উদ্বেগ তাদের নিত্যসঙ্গী।

অনেক অভিভাবক অভিযোগ করছেন, মিথ্যা, বানোয়াট নাশকতার অভিযোগ এনে অভিযানের নাম করে পরিকল্পিতভাবে সন্তানদের হত্যা করা হচ্ছে।

নিহত চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিটি কলেজ শাখার সভাপতি তুহিনের বাবা এনামুল হক ও মা কমেলা বেগম বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আমাদের সন্তান নিরাপদে আছে। আমাদের জানা মতে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে হত্যা নয় বরং অভিযুক্তকে আইনের হাতে তুলে দেয়। কিন্তু র্যাব যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, তাতে আমরা বাকরুদ্ধ।’

শিবিরের এইসব সমস্যা নিয়ে চিন্তিত দলের নেতারা। তাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে যোগাযোগ করে পাওয়াটাও একটি কঠিন ব্যাপার। প্রতি মুহূর্তে তারা মোবাইলের সিম বদলান। ধরা পড়ার ভয়ে। থাকারও নির্দিষ্ট জায়গা নেই। এরপরও ধরা পড়েছেন দলের অনেক নেতা। পুলিশ তাদের ধরেছে। তারা যেখানেই অবস্থান নেন সেখান থেকেই।

এসব প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে সংগঠনটির রিক্রুটমেন্ট কমে গেছে। এই শিবির পরিচয়টি ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে কম তরুণরা শিবিরে যোগ দিচ্ছে। বিরোধী শক্তি সাধারণ মানুষের কাছে শিবিরকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করছে। সঙ্গে সঙ্গে মূল ধারার অনেক মিডিয়াও শিবিরকে নেতিবাচক হিসেবে প্রচার করছে। এর কারণে সবজায়গায় গ্রহণযোগ্যতা আদায় করতে পারছে না সংগঠনটি।

কিন্তু যখনই জামায়াতের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের কথা আসে, গত কয়েক বছরে তাদের আন্দোলন যত না ছিল সরকারবিরোধী; তার চেয়ে বেশি ছিল আটক নেতাদের মুক্তির জন্য। কিন্তু এসব নেতা অভিযুক্ত হয়েছেন যুদ্ধাপরাধের অপরাধে। মিডিয়া আজকে এমন একটা পর্যায়ে এই যুদ্ধাপরাধ বিষয়টি নিয়ে যেতে পেরেছে যে, জামায়াত নেতাদের মুক্তির পক্ষে কথা বলা মানেই হলো স্বাধীনতার বিরোধিতা করা। এই হিসাব-নিকাশে শিবিরও যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের শক্তি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। যদিও শিবিরের নেতা-কর্মীদের সবার জন্মে একাত্তরের পর। সবশেষ গণজাগরণ মঞ্চ মিডিয়ার মাধ্যমে শিবিরকে অনেকটাই কোণঠাসা করতে পেরেছে। গণজাগরণ মঞ্চ তরুণদের মধ্যে একটি বিষয় অন্তত ছড়িয়ে দিতে পেরেছে যে, জামায়াত-শিবির এরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধী।

শিবির আরো একটি সংকটে রয়েছে। ক্যাডারভিত্তিক সংগঠন হওয়ার কারণে আনুগত্যের বিষয়টি প্রশ্নাতীত। প্রশ্ন তুললেই, দ্বিমত পোষণ করলেই এই সংগঠনে কারো জায়গা হয় না। বের করে দেয়া হয়। এ কারণে শিবিরের অনেক মেধাবী তরুণ সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন অথবা নিজে নিজেই চলে গেছেন। এদের অনেকেই এখন ইউরোপ- আমেরিকায় বসবাস করছেন। ফলে শিবিরে মেধাবী তরুণদের সঙ্কট এখন প্রকট। মাঝারি মানের মুসাহেব স্বভাবের লোকজনই এখন শিবিরের নেতৃত্বে আছেন। যাদের প্রায় সবাই বয়স্ক।

শিবির নেতাকর্মীরা আশা করছেন, চলমান আন্দোলনে সরকার বদলাবে। সমস্যা-সঙ্কট কাটবে। নেতারা বেরিয়ে আসবেন। তাহলে পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। আবার স্বমহিমায় ফিরে আসবে।

শিবির সভাপতি আবদুল জব্বার বলেছেন, “ছাত্রশিবিরকে তার যাত্রা পথে এ পর্যন্ত হাজারো বাধা পেড়িয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হয়েছে। ছাত্রশিবিরের চলার পথে নানামুখী ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র, যুলম নির্যাতন ও অপপ্রচার অন্যতম। দেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্টানগুলোতে আদর্শিক জনপ্রিয় ছাত্রসংগঠনে হিসেবে স্বীকৃত লাভ করে চলছিল ঠিক তখনই আদর্শিক লড়াইয়ে পরাজিতরা ঘৃণ্য পথে শিবিরের নেতা কর্মীদের উপর নানামুখী নির্যাতন চালিয়ে তাদের আওয়াজকে স্তিমিত করতে চেয়েছে। শিবিরকে বলা হয়েছে- চেতনায় রাজাকার, রগকাটা, মৌলবাদী, অআধুনিক ও স্বাধীনতা বিরোধী। সন্ত্রাসী,নশকতাকারী! ইত্যাদি। এসবেও যখন কাজ হচ্ছে না তখন শুরু করছে খুন,গুম ও নির্যাতন।”

তিনি বলেন, “এসব কাজে প্রশাসনকে সবচেয়ে বেশী অপব্যবহার করেছে সরকার ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। ছাত্রশিবিরের দুর্দমনীয় উত্থানে ভীত হয়ে ছাত্রশিবিরের নিরপরাধ নেতা কর্মীদেরকে নাশকতার অভিযোগে অহরহ গ্রেপ্তার করে বোমা নাটক, অস্ত্র উদ্ধার নাটক সাজানো হয়েছে, যা ইতিহাসের এক জঘন্যতম মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়।”



মন্তব্য চালু নেই