প্রকৃতির রূপসীকন্যা রাঙামাটির ‘লংগদু’

সবুজ প্রকৃতি আর চারপাশে হ্রদের নীল জলরাশি। লেকের অংশজুড়ে মাছ ধরার সারি সারি নৌকা। ছোট ছোট দ্বীপ আর দূর পাহাড়ের সারি। দ্বীপগুলোর ঠিক উপরে ছোট ছোট ঘর । প্রত্যেক ঘরের ঘাটে বেঁধে রেখেছে একটি করে নৌকাও। এ দৃর্শ্যটি রাঙামাটির সদর থেকে লঞ্চ করে ‘লংগদু’ উপজেলায় যাওয়ার পথেই । যাওয়ার পথের এ দৃশ্যই মনে করিয়ে দেয় আরও কত সৌন্দয্য নিয়ে বসে আছে প্রকৃতির রুপসীকন্যা এ ‘লংগদু’।

আপনিও যেতে পারেন রাঙামাটি থেকে লংগদুর এ প্রকৃতির রুপসী কন্যায়। চট্টগ্রাম থেকে রাঙামাটির পার্বত্য অঞ্চলে যেতে প্রায় ৮৭ কিলোমিটার পাড়ি দিতে হয়। রাঙামাটির সদর থেকে লংগদু উপজেলায় যেতে আরও ৭৬ কিলোমিটার দিতে হবে পাড়ি। রাঙ্গামাটি বিআইডাব্লিউটিএ’র ঘাট থেকে প্রতিদিন মাত্র একবার লংগদুর উদ্দেশে ছেড়ে যায় একটি ইঞ্জিন বোট। যদিও ওই এলাকা এটিকে লঞ্চ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে!

মূূলত বড় ধরনের এ ইঞ্জিন বোটে চেপে বসতে পারে প্রায় দেড়শ’ মানুষ। লংগদু পর্যন্ত প্রতি যাত্রীর টিকিট মূল্য ১৪০ টাকা গুনতে হয়। বিআইডাব্লিউটিএ ঘাট ছেড়ে প্রথম স্টপেজ শুভলং বাজার, যেখানে উপজাতীয়দের সমাগম হয় প্রতিনিয়ত। শুভলং ঝর্ণার পর পরই সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি বিনোদন স্পটও তৈরি করা হয়েছে পর্যটকদের জন্য। মিনিট পাঁচেক অবস্থানের পর উপজাতীয়দের আরেকটি বাজার কাট্টলী। এখানে মদ গাঁজা আফিমসহ সব কিছুই অবাধে বিক্রি হয়।

2015_10_25_18_33_52_K4U7HySjLLPNRQlSpCNuJ9CBGNmceP_original

কাট্টলী বাজার ছেড়ে যেতে হয় খাগড়াছড়ি বাজার, যেখানে বাঙালিদের হাট বসে প্রতিনিয়ত। গরু ছাগল থেকে শুরু করে শাক সবজিসহ প্রায় সব রকমের জিনিসপত্র পাওয়া যায় খুব অল্প মূল্যে। সেখানকার বাসিন্দাদের নৌকাই একমাত্র বাহন। ডিঙ্গি নৌকা, জিরি নৌকা, সাম্পান এমনকি বড় ধরনের ইঞ্জিন বোটও রয়েছে। এ এলাকার জনজীবন পাহাড়ের চূড়াকেন্দ্রিক। বর্ষায় লেকের পানি বেড়ে গেলে প্রতিটি পাহাড়ের চূড়া দূর থেকে মনে হয় একেক একটি দ্বীপ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।

বিআইডাব্লিউটিএ ঘাট থেকে যাওয়া যায় বরকল, মাইনী মুখ, বৈরাগী বাজার, আমতলী, দুধছড়ি, সিঝুক, হরিণা, বিলাইছড়ি, বাঘাইছড়ি ও মারিষ্যার মতো পাহাড়কেন্দ্রিক জনজীবনে। শুভলং পার হলেই লেকটির প্রসারতা এতই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, নদী নয়, সাগরের মতোই কূলবিহীন প্রায় দূরে পাহাড়ের চূড়ায় যেন মেঘ ঘরে ঠেকেছে। পড়ন্ত বিকেলে রংধনুর সে কি দৃশ্য! রংধনু দেখে মনে হবে লেকের পানি থেকেই যেন এর উৎপত্তি। আবার সেটি পানিতেই বিলীন!

লংগদু থেকে কাট্টলির দূরত্ব প্রায় দুই ঘণ্টার মতো। নিঃশব্দের জলাভূমি আর নীল আকাশের নিচে আছে কাট্টলি বিলের অনেকগুলো দ্বীপ। কাপ্তাই লেকের বিস্তৃত জলরাশির ঠিক মধ্যখানে এই দ্বীপগুলোতে গড়ে উঠেছে মানুষের বসতি। মৎস্য শিকার কেন্দ্র করে দ্বীপের বুকেই গড়ে উঠেছে বাজা। শুধুমাত্র রাঙামাটি আর কাপ্তাই লেক ঘিরে রয়েছে হাজারো মানুষের জীবনযাত্রা। এখানকার মানুষের প্রধান উপার্জন হল মাছ শিকার। যেটা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা পালন করছে। এমনকি তারা তাদের প্রয়োজন মিটিয়ে এ মাছ দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানিও করছে।

2015_10_25_18_34_39_TScHLA9L88BbfRLso5nhJLLvZzWIt9_original

এদিকে সবেমাত্র শীত শুরু হওয়াই ঘটেছে অতিথি পাখির আগমন। ঝাঁকে ঝাঁকে এ পাখি এসে বসছে কাট্টলী বিলে তাদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠছে বিলজুড়ে। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে নিরাপদ স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে এ বিলটি। পানকৌড়ি আর নানা জাতের পাখির ঝাঁক বিলের চারপাশে। যারা আসেন তারা মূলত শীতের পাখি দেখতেই কাট্টলি বিলেই আসেন। মাছের প্রাচুর্যের কারণে কাট্টলি বিল পাখিদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এখন। ছোট সরালি, টিকি হাঁস, বড় সরালি, মাথা মোটা টিটি, গাঙচিল, গাঙ কবুতর, চ্যাগা, চখাচখিসহ নানান প্রজাতির পাখির ঝাঁকে মুখরিত থাকে এ বিল ।

৩৮৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ লংগদু উপজেলার মানুষের প্রধান অর্থনীতি কৃষি ফসলাদি ধান, তামাক, তরমুজ, হলুদ, আদা, শাকসবজি। প্রধান ফল-ফলাদি কাঁঠাল, আম, লিচু, কলা, লেবু, নারিকেল, আখ, আনারস। প্রধান রপ্তানি দ্রব্য তরমুজ, কলা, কাঁঠাল,হলুদ, আদা, মাছ। এছাড়াও লংগদু উপজেলার কাট্টলী বিলে প্রচুর পরিমাণে মিঠাপানির মাছ পাওয়া যায়। এখানে সবকিছুর দাম একেবার সস্তা। কমলা যেখানে চট্টগ্রাম শহরে ডজন প্রতি গুনতে হয় ১৫০-১৬০ টাকা সেখানে এখানে পাওয়া যায় মাত্র ৫০ টাকায়।

প্রয়োজনীয় তথ্য : লেকে বেড়াতে গেলে সাঁতার জানা আবশ্যক। না জানলে পানিতে না নামাই উত্তম। কেননা হৃদে পানি বেশ গভীর। নিজেকে নিরাপদ রাখতে সঙে রাখতে পারেন লাইফ জ্যাকেটও।বাংলামেইল



মন্তব্য চালু নেই