পৌর নির্বাচন: তৃতীয় লিঙ্গের দিথীকে ঘিরে কলারোয়ায় ভিন্নমাত্রার উৎসাহ-কৌতূহল

সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভা নির্বাচনে মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী দিথী খাতুন প্রচার প্রচারণায় এগিয়ে কেবলমাত্র তাঁর নিজ এলাকায় নন, তাঁর প্রচার ছড়িয়ে পড়েছে সবখানে। এই প্রার্থীকে ঘিরে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন ভোটারদের মাঝে এক ভিন্নমাত্রার উৎসাহ-উদ্দীপনা ও কৌতূহল দেখা দিয়েছে। এবারের নির্বাচনে দৃষ্টি কেড়েছে এই সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী। গণমাধ্যমের কল্যাণে কাউন্সিলর প্রার্থী দিথী এখন এক পরিচিত মুখ। আলোচিত প্রার্থীও বটে। বিবিসিসহ বিশ্ব গণমাধ্যম প্রচার করেছে দিথীকে নিয়ে। ইলেকট্রনিক মিডিয়াও তাঁর প্রচারণা চালাচ্ছে।

পৌরসভার ৭,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত সংরক্ষিত ৩নং ওয়ার্ড মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া সম্প্রদায়ের) দিথী খাতুনকে নিয়ে ইতোমধ্যে সৃষ্টি হয়েছে মানুষের নানামুখি কৌতূহল। তাঁর নির্বাচনী প্রতীক ‘চুড়ি’।
হিজড়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বকারী এই প্রার্থী এ নির্বাচনে কেমন করবেন-তা নিয়ে মানুষের রয়েছে ভীষণ আগ্রহ। এই আগ্রহ ছড়িয়ে যাচ্ছে ক্রমেই পৌরসভার সীমানা ছাড়িয়ে দেশ-দেশান্তরে।

সত্যিকার অর্থে এই সমাজে হিজড়া দেখলে অনেকে এড়িয়ে যান বা অনেকে তাদের অবজ্ঞা করেন। কিন্তু অনেকে ভুলে যান তারাও মানুষ এবং তারা সমাজের মূল ধারায় চলে আসতে চাইছেন। তারা নাগরিকত্বসহ ভোটাধিকার লাভ করেছেন। এমনকি দিথী বেগমের মতো নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করছেন। সমাজের মূল ধারার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে তারাও সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখতে প্রতিশ্রুতিশীল।

দিতিশনিবার রাতে দিথী বেগমের প্রচারণা সরেজমিনে প্রত্যক্ষকালে দেখা গছে, তিনি তাঁর ভোটারদের কাছে অতি পরিচিত। সবাই তাঁকে সাদরে গ্রহণ করছেন ও তাঁর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছেন। প্রচার-প্রচারণায়ও তিনি এগিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের চেয়ে।

শনিবার মুরারীকাটি গ্রামের নির্বাচনী ক্যাম্পে পৌষের দুর্দান্ত শীতে রাত ১০টার সময়ও অনেক কর্মী-সমর্থক বসে থাকতে দেখা যায়। ঠিক এসময় সেখানে উপস্থিত হন ঢাকা থেকে আগত ‘চ্যানেল আই’র ওবায়দুল কবির, ‘চ্যানেল আই’র সাতক্ষীরা প্রতিনিধি ও সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি এড. আবুল কালাম আজাদ, সাংবাদিক ইয়ারব হোসেনসহ কলারোয়া প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ। ‘চ্যানেল আই’র ক্যামেরা দিথী খাতুনের নির্বাচনী প্রচারণা ও হিজড়া সম্প্রদায়ের উপর ডকুমেন্টরী তৈরির জন্য এসেছে বলে জানা যায়।

ভোটারদের সাথে সেখানে মতবিনিময়কালে দিথী বেগম জানান, সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়াতে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন। নারী উন্নয়ন, নারীর অধিকার সমুন্নত ও নারী শিক্ষা বিস্তারে তিনি কাজ করতে চান। কোনো শিশু যেনো তাঁর এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়-সেজন্য তিনি দীর্ঘদিন কাজ করে আসছেন। শিশুদের শিক্ষা উপকরণ, পোশাক, ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণসহ শিক্ষা বিস্তারে তিনি কাজ করে চলেছেন নিরন্তর।
Kalaroa- Hijra Ditiতাছাড়া দু:স্থ মানুষের চিকিৎসার জন্য ওষুধ কিনে দেওয়া, দরিদ্র ছেলে-মেয়েদের পরীক্ষার ফিস দেওয়া, কন্যার বিয়েতে পিতাকে সহায়তা করা, বিয়ের সার্বিক আয়োজনে সহায়তা করা, যেকোনো বিপদে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানো-এমন সেবামূলক কাজেই প্রতিটি দিন তিনি কাটান বলে জানান।

দিথী বেগম আরও বলেন, হিজড়া বলে এলাকার কোনো মানুষ তাকে কখনো অবজ্ঞা করেননি। সকলের সাথে সাথে সদ্ভাব রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, নির্বাচনে গণসংযোগকালে অনেক বাড়ির লোকজন তাকে জোর করে খেতে পর্যন্ত দেন। তাকে সম্মান করেন। নির্বাচনী ক্যাম্পে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দিথী বলেন, আমার এ পথচলা একলা শুরু করেছিলাম। এখন চলতে চলতে এগিয়ে গেছি কিছুদূর। আরও দূরে যেতে চাই। চাই মানুষকে সাথে নিয়ে মানুষ হিসেবে সমাজে বেঁচে থাকতে। চাই সমাজের উন্নয়নে সকলের সাথে এগিয়ে যেতে। আমার এই পথচলার একটি পাথেয় হতে চলেছে এ নির্বাচন। এই নির্বাচনে ভোটার সমর্থন আমাকে এগিয়ে নিতে পারে অনেকদূর।



মন্তব্য চালু নেই