সবোর্চ্চ বেতান ৭৫ হাজার

পে-কমিশন সুপারিশ চূড়ান্ত

সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার এবং সর্বনিম্ন ১১ হাজার টাকা নির্ধারণ করে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন বেতন স্কেলের সুপারিশ করতে যাচ্ছে পে-কমিশন। কমিশনের সুপারিশে এবার ২০টি গ্রেডের পরিবর্তে ১৭টি গ্রেড থাকতে পারে। পাশাপাশি পেনশন ও আনুতোষিকের হারও বাড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, বেশ কিছু বৈঠকের পর সরকার গঠিত ‘পে এ্যান্ড সার্ভিসেস কমিশন’ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের নতুন বেতন স্কেলের সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে। আগামী ডিসেম্বরে তা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে জমা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা কাজ করছে। বিদ্যমান বেতন স্কেলের ২০টি গ্রেড থেকে কমিয়ে এবার ১৭টি গ্রেড করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যমান স্কেলের ৮ নং গ্রেড(১২০০০ টাকার স্কেল) এবং ৯ নং গ্রেড (১১০০০ টাকার) মিলে একটি গ্রেড করা হচ্ছে। এই গ্রেডের মূল বেতন ২৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। এছাড়া বিদ্যমান স্কেলের ১১ নং গ্রেড(৬৪০০ টাকার স্কেল) এবং ১২ নং গ্রেড (৫৯০০ টাকার স্কেল) যুক্ত হয়ে একটি গ্রেডে পরিণত হতে পারে। সূত্র জানায়, পে-কমিশনের সুপারিশে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন ও আনুতোষিকের হারও বাড়তে যাচ্ছে। বিদ্যমান স্কেল অনুযায়ী চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর বা তার বেশি হলে পেনশন সুবিধা প্রতি এক টাকায় ২৩০ টাকা করে প্রদান করা হয় এবং আনুতোষিক ৮০ শতাংশ রয়েছে। ইতোপূর্বে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পেনশনসুবিধা প্রতি এক টাকায় ৩০০ টাকা এবং আনুতোষিক ৮০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০০ শতাংশ করার প্রস্তাব দেয়া হয়। এ বিষয়েও পে-কমিশন সুপারিশ করবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

গত বছরের নবেম্বরে জাতীয় বেতন স্কেলভুক্ত সরকারী চাকরিজীবীদের জন্য পে এ্যান্ড সার্ভিসেস কমিশন ঘোষণা করে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ছয় মাস মেয়াদী ১৭ সদস্যের পে এ্যান্ড সার্ভিসেস কমিশন গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এ কমিশনের স্থায়ী পে-কমিশনের রূপরেখা চূড়ান্ত করার কথা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. ফরাস উদ্দীনকে কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ১৭ সদস্যের পে-কমিশনে চেয়ারম্যান ছাড়াও রয়েছেন একজন সদস্য সচিব, ৩ জন স্থায়ী সদস্য ও ১২ জন অস্থায়ী সদস্য। এছাড়া কমিশনে যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন সদস্য সচিবের কাজ করবেন। পরে এই কমিশনের ধারাবাহিকতা রক্ষায় কমিশনের মেয়াদ বাড়ানো হয়।

বর্তমানে দেশে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ। তাদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ক্যাডার ও বিভাগের বেতন বৈষম্যের বিষয়গুলো চিহ্নিত করে সমাধানের সুপারিশ করবে এই কমিশন। এর আগে গত বছরের ৬ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ২০ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতার ঘোষণা দেন। পরদিন এর গ্যাজেট জারি করে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই মহার্ঘ্য ভাতা চলতি বছরের ১ জুলাই থেকেই কার্যকর হবে।

এছাড়া একটি স্থায়ী পে-কমিশন গঠনের পরিকল্পনার কথা ওই সময়ই জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সপ্তম পে-কমিশন গঠন করা হয়। এরপর ২০০৯ সালের ১ জুলাই সর্বশেষ সরকারী চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়। ২০০৭ সালে সপ্তম পে-কমিশন গঠন করার পর ২০০৯ সালে এসে তা কার্যকর হয়।

এদিকে গত ২৩ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই মাস থেকে সরকারী চাকরিজীবীদের জন্য নতুন বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করা হবে। তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বরে পে-কমিশনের রিপোর্ট পাব। এ রিপোর্টের সুপারিশ যদি সহজে বাস্তবায়নযোগ্য হয় তাহলে কার্যকর করতে বেশি সময় লাগবে না। আর যদি রিপোর্ট সংস্কার করতে হয় তাহলে কিছুটা সময় লাগবে। তবে যখনই আমরা এটা বাস্তবায়ন করি তা আগামী বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।

আগামী জানুয়ারি মাস থেকে বেতন কমিশন বাস্তবায়নের কথা শোনা গিয়েছিল সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, রিপোর্ট যদি সাদামাটা হয় তাহলে বাস্তবায়নে বেশি দেরি হবে না, কিন্তু যদি সংস্কার করতে হয় তাহলে কিছুটা সময় লাগবে। সে ক্ষেত্রে চলতি অর্থবছরে এটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে কিনা, সেটা বলা যাচ্ছে না। তবে ডিসেম্বর মাসে প্রতিবেদন পাওয়ার পর কাজ শুরু হবে।



মন্তব্য চালু নেই