পৃথিবীর ৯৯.৯৯% জীবজন্তু সম্পর্কে জানেই না মানুষ!

মানুষকে বলা হয় সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষের সেরা হওয়ার যতগুলো কারণ আছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে, মানুষই সর্বপ্রথম পৃথিবীর অন্য প্রাজাতির প্রাণিদের অনুসন্ধান করতে শুরু করে। সেই অনুসন্ধান এখনো চলছে। মানুষ গহীন অরণ্যে, পর্বতে, গুহায়, সমুদ্রের তলদেশে যেমন খুঁজছে প্রাণের সন্ধান, তেমনি খুঁজছে মহাশূন্যে। কিন্তু পৃথিবীতে ঠিক কত প্রজাতির প্রাণি রয়েছে সেই বিষয়ে মানুষের জ্ঞান যে অতি ক্ষুদ্র সেটা বেরিয়ে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়। পৃথিবীর ৯৯.৯৯ শতাংশ প্রাণি প্রজাতিই এখনো অনাবিষ্কৃত!

ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পৃথিবীতে আরও এক ট্রিলিয়ন (এক হাজার কোটি) প্রজাতির প্রাণি রয়েছে যার কথা বিজ্ঞানীরা এখনো পর্যন্ত জানে না। অর্থাৎ ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ এখনো আমাদের অজানা। এই গবেষণা যদি সত্যি হয় তাহলে মোট প্রাণি প্রজাতির মাত্র ১ শতাংশ আমরা এখন পর্যন্ত আবিষ্কার করতে পেরেছি।
2016_05_06_12_34_45_y3d1u1Wm3RXaeqJK5VEr56ABh7kJKk_original
এই গবেষণার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে দেয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গবেষকরা বলেছেন, প্রাণি প্রজাতির সংখ্যা নির্ণয়ের এই পরীক্ষা চালানো হয়েছে জেনেটিক সিকুয়েন্সিং টুল বা জিনের মানচিত্র নির্ণায়ক যন্ত্র দিয়ে। এই যন্ত্রের মাধ্যমে একটি সম্প্রদায়ের সামগ্রিক প্রজাতি সংখ্যা নির্ণয় করা যায়।

গবেষণার লেখক এবং ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী জে লেনন এবং কেন লোসে অনু-পরমাণু পর্যায়ের ফানজাই (ছত্রাক) থেকে শুরু করে বড় আকৃতির স্তন্যপায়ী প্রাণিদের একটি তালিকা তৈরি করেছেন। ঐ তালিকার মিশ্রণ থেকে স্কেলিং ল’ বা পরিমাপ আইন ব্যবহার তারা প্রাণি ও উদ্ভিদের মোট প্রজাতির সংখ্যা বের করেছেন।
2016_05_06_12_33_41_5kEiBZNM0ff9RwjoNgtPqsxVtVbd5t_original
লেনন বলেছেন, ‘অনুজীবদের মধ্যে যে কি পরিমাণ বৈচিত্র্য রয়েছে সেটা আমাদের কল্পনাতেও ছিল না।’ লেনন এবং লোসে আবিষ্কার করেছেন, এই পর্যন্ত যত অনুজীব আবিষ্কৃত হয়েছে তার এক লাখ গুণ বেশি অনুজীব এখনো অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে। আরও ১০০ মিলিয়ন (১০ কোটি) অনুজীব নিয়ে গবেষণা করতে হবে।

জনপ্রিয় বিজ্ঞানভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘আইএফএল সাইয়েন্স’কে বিজ্ঞানী লোসে বলেছেন, এই অনাবিষ্কৃত মাইক্রোঅর্গানিজম বা অনুজীবদের নিয়ে গবেষণা করাটা মোটেই হেলাফেলার বিষয় নয়। কারণ এই গবেষণাই আমাদের নিজেদের উৎপত্তির কারণ খুঁজে বের করতে সাহায্য করবে।

লোসে বলেন, এটা অনেকটা মহাশূন্যের গ্যালাক্সি কিংবা আমাদের মিল্কিওয়ে বা আকাশ গঙ্গা ছায়াপথ পর্যবেক্ষণ করার মতো। মহাবিশ্বের বিশালত্ব নিয়ে অতি বৃহৎ গবেষণা আর অনুজীবের অতি ক্ষুদ্রতা নিয়ে গবেষণার একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। কিন্তু মিলটা হচ্ছে দুটোই অসীম বৈচিত্র্যময়। পৃথিবীতে আমাদের আবির্ভাবের কারণ খুঁজতে হলে এই দুই গবেষণাই জরুরি।

2016_05_06_12_32_42_C8b98aIpxuTAXIZySoxd1ojLE5UyoE_original



মন্তব্য চালু নেই