পৃথিবীর প্রথম যত কিছু!

প্রথমের দিকে একটা আকর্ষণ মানুষের সেই প্রাচীন কাল থেকেই। আমরা কোথা থেকে এসেছি? কে ছিল আমাদের ভেতরে প্রথম? এই যে আশপাশে আমাদের সাথে হাজার হাজার বছর ধরে সঙ্গ দিয়ে চলেছে পৃথিবীকে নানারকম গাছ, পাখি আর প্রাণী। তাদের শুরুটাই বা কোথা থেকে? সময় এগিয়ে গিয়েছে। আর সময়ের সাথে সাথে মানুষের প্রশ্ন আর জানতে চাওয়ার পরিধিও বেড়ে গিয়েছে অনেকটা। আসুন জেনে আসি এখন পর্যন্ত মানুষের আবিষ্কারের সেই প্রথম জিনিসগুলোরই একাংশ।

১. প্রথম মানুষ

মানুষের উত্পত্তি খুঁজতে গিয়ে অনেকটা দূর যেতে পারবেন আপনি, মাড়িয়ে যেতে পারবেন অনেক অনেক ইতিহাস। কিন্তু সর্বপ্রথম মানুষ? কে ছিল সেটা তা সম্পর্কে কি আন্দাজ করতে পারেন? ১৯৬৭ সালে ইথিওপিয়ায় হোমো ১ এবং ২ নামের ১৯৫,০০০ বছর আগের মানুষের মাথার খুলি খুঁজে পাওয়া যায়। আর সেখান থেকেই ধারণা করেন বিজ্ঞানীরা যে, মানুষের উত্পত্তি এই পৃথিবীতে হয়েছিল মাত্র ২.৩ মিলিয়ন বছর আগে ( ন্যাশনাল জিওগ্রাফি )। আর তাদেরই একজন ছিল এই খুলির মালিক। সুতরাং, এখনো অব্দি হোমো নামের মানুষদেরকেই পৃথিবীর প্রথম মানুষ বলে মনে করা হচ্ছে।

২. প্রথম পাখি- প্রোটোয়াভিস

বর্তমানে আমরা জানি যে পাখিরা ডাইনোসর থেকে এসেছিল এবং মূলতঃ অনেক ডাইনোসরের গায়ে পালকও দেখা যায় অতীতে। যাদের বিবর্তিত রূপ হচ্ছে আজকের আকাশে উড়তে থাকা পাখি। আর তাই প্রথম পাখির কথা জানতে চাইলেই একটা উত্তর চলে আসে। সেটা হচ্ছে, ঠিক কোন সময়টা পর্যন্ত ডাইনোসরকে ডাইনোসর বলবেন আপনি? যে সময় পর্যন্ত ডাইনোসরকে ডাইনোসর বলে অভিহিত করবেন, সে সময় পর্যন্ত পাখি জিনিসটা পৃথিবীর জন্যে না আসা কোন একটা জিনিসই থাকবে। অনেক দিন ধরেই পাখি বিশেষজ্ঞরা আর্কাইয়োপট্রিক্স এবং কনফিউসিউসোরনিস নামক দুটি প্রাণীর কথা বলে এসেছেন। যারা চলতে এবং উড়তে পারত। যাদের গায়ে ছিল পালক। এবং সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি হচ্ছে যাদের ছিল সত্যিকারের ঠোঁট! তবে এদেরকে টেক্কা দিয়ে ২২০ মিলিয়ন বছর আগে যে পাখিটি প্রথম স্থান অধিকার করে নিয়েছে সবশেষে সেটি হচ্ছে প্রোটোয়াভিস ( লিস্টভার্স )। টেক্সাসের পাখি বিশেষজ্ঞবিদ শঙ্কর চ্যাটার্জী প্রথম এর কথা তুলে ধরেন যা কিনা পুরো পাখি বিশারদদের চিন্তা-ভাবনাই পাল্টে দিয়েছে। কোইলুরোসাউরিয়ান ডাইনোসরদেরকে বর্তমান পাখি প্রজাতির প্রথম কেউ বলে মনে করা হলেও এর আগেও প্রোটোয়াভিসের অবস্থান পাল্টে দিয়েছে পুরো বিষয়টা। আর তাই প্রথম পাখি হিসেবে বর্তমানে প্রোটোয়াভিসকেই উল্লেখ করা হয়।

৩. প্রথম গাছ- ওয়াটিয়েজা

পৃথিবীর শুরু থেকে এখন অব্দি এর জলবায়ু ও পরিবেশ তৈরিতে প্রচন্ড রকমের ভূমিকা রেখেছে গাছেরা। তাদের কার্বন ডাইঅক্সাইড নিয়ে অক্সিজেন ছাড়বার ক্ষমতা না থাকলে কোন প্রাণিরই হযতো পৃথিবীতে প্রথম পা রাখার সুযোগ হতো না। সুতরাং এটা ধরে নেওয়াই যায় যে এই গাছেরাই ছির পৃথিবীর প্রতম বাসিন্দা। তবে কোন গাছটা? সম্প্রতি ওয়াটেজিয়া নামক প্রায় ৩৯৭ মিলিয়ন বছর পুরোন একটি গাছের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে যেটা বর্তমান গাছগুলোর সাথে অনেকটাই সাদৃশ্যপূর্ণ। এদের সর্বোচ্চ বেড়ে ওঠার ক্ষমতা ছিল ১০ মিটার অব্দি। পৃথিবীতে এসেই নিজের বংশকে সবখানে ছড়িয়ে দিতে শুরু করেছিল এরা। বর্তমানে বিলুপ্ত হলেও ২০০৪ সালে নিউ ইয়র্কে ১৮০ কিলোগ্রামের ফসিল খুঁজে পাওয়া যায় ওয়াটিজাদের ( লাইভ সাইন্স )।

৪. প্রথম প্রাণ- ব্যাকটেরিয়া

মানুষ, পাখি, ফুল, প্রজাতি- এসব কিছুর আগে যে জিনিসটি আসে সেটা হচ্ছে প্রাণ। পৃথিবীতে প্রথম প্রাণ কবে এসেছিল? কোন বেশে এসেছিল? অষ্ট্রেলিয়ার পিলবারার কাছে একটি পাথরের ওপর গোলাপী রঙএর, সগরে বাসকরা খুব ছোট্ট এক ধরনের মাইক্রোবিয়াল গোষ্ঠী খুঁজে পাওয়া যায়। যার বয়স প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন বছর! একই ধরনের ব্যাপার ঘটে দক্ষিণ আফ্রিকাতেও যখন ৩.৪ বিলিয়ন বছর আগের একটি ছোট্ট ব্যাকটেরিয়ার খোঁজ পাওয়া যায়। মনে করা হয় অগ্ন্যুত্পাতের ফলে জন্ম হয়েছে এদের। এছাড়াও আলো তেকে শক্তি তৈরি করে বেঁচে তাকা স্ট্রেলি নামের ৩.৪৩ বিলিয়ন বছর আগের একটি প্রাণের অস্তিত্বও পাওয়া গিয়েছে ( লিস্টভার্স )। আর পৃথিবীতে প্রথম প্রাণের অস্তিত্ব হিসেবে ব্যাকটেরিয়াকেই চিহ্নিত করা হয়।



মন্তব্য চালু নেই