পৃথিবীর আছে ১৬ হাজার পারমাণবিক বোমা

পারমাণবিক বোমা হামলার একমাত্র জীবন্ত উদাহরণ ‘হিরোশিমা’ এবং ‘নাগাসাকি’। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র জাপানের উপর প্রতিশোধ নিতে মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে দুটি পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে জাপানের দুই প্রসিদ্ধ শহরে। এতগুলো বছর পরেও এখনও পরমাণু বোমার সেই বিভীষিকা থেকে মুক্ত হতে পারেনি জাপানের জনগণ।

এখনও অনেক শিশু বিকলাঙ্গ কিংবা শারীরিকভাবে ত্রুটিযুক্ত হয়ে জন্মায় পারমাণবিক বোমার তেজস্ক্রিয়তার কারণে। মাত্র দুটি বোমায় যদি এই অবস্থা হয় তাহলে পৃথিবীর কাছে থাকা মোট ১৬ হাজার বোমা ফাটলে কি অবস্থা হবে তা মোটামুটি ভাবনার অতীত। কিন্তু পৃথিবীর কোন কোন রাষ্ট্রের কাছে আছে এই ১৬হাজার পারমাণবিক বোমা?

পরমাণু বিজ্ঞানীদের দেয়া বুলেটিনে জানা যায়, পৃথিবীতে এখন মোট ১৬ হাজার ৩০০টি পারমাণবিক বোমা মজুদ আছে। কিন্তু ফেডারেশন অব আমেরিকান বিজ্ঞানীদের মতে, এই বোমার সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার ৬৫০টি। মোট ১৪ টি দেশ তাদের ৯৮টি স্থানে এই বোমা মজুদ করে রাখা হয়েছে।

মোট বোমার মধ্যে প্রায় দশ হাজার বোমাই সরাসরি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। এছাড়াও এক হাজার ৮০০ পারমাণবিক বোমা সম্পূর্ণ সক্রিয় অবস্থায় রাখা হয়েছে, যাতে মাত্র কয়েক মিনিটের নোটিশে এই বোমাগুলো শত্রুপক্ষের উপর নিক্ষেপ করা যায়। আর এই সক্রিয় বোমাগুলোর ৯৩ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মজুদ করা।

তবে সম্প্রতি আরেক বুলেটিনে জানানো হয় যে, যুক্তরাষ্ট্র তার কাছে ৭১০০টি পারমাণবিক বোমা রয়েছে। যাদের মধ্যে দুই হাজার ৮০টি শত্রুসেনার দিকে মোতায়েন করা আছে। দুই হাজার ৬৮০টি নিরাপদ স্থানে মজুদ আছে এবং দুই হাজার ৩৪০টি বোমাকে ত্রুটি সারানোর অপেক্ষায় রাখা হয়েছে। পাশাপাশি রাশিয়ার কাছে আছে প্রায় আট হাজার পারমাণবিক বোমা।

যুক্তরাজ্যের কাছে আছে মাত্র ২১৫টি পারমাণবিক বোমা। দেশটির কাছে থাকা চারটি নিউক্লিয়ার সাবমেরিন প্রত্যেকটি ১৬টি পারমাণবিক বোমা বহন করে এবং সার্বক্ষণিক মহড়ার ভেতর থাকে এই জাহাজগুলো। ফ্রান্সের কাছে আছে ৩০০টি পারমাণবিক বোমা। ফ্রান্সের দেয়া তথ্য মতে, তাদের কাছে থাকা কোনো পারমাণবিক বোমাই কার্যত উৎক্ষেপনের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়নি। যদিও যুক্তরাজ্যের মতো তারাও একটি সাবমেরিনকে সর্বদা প্রস্তুত রাখে। এশিয়ার মধ্যে চীনের কাছে আছে ২৫০টি বোমা। ধারণা করা হচ্ছে, চীন ক্রমশ পরমাণু শক্তি বৃদ্ধির দিকে আগাচ্ছে।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ইসরায়েলের কাছে আছে ৮০টি পরমাণু বোমা। যদিও পরমাণু বোমা থাকার কোনো ঘোষণা ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এখনও দেয়া হয়নি। পাকিস্তানের কাছে ১০০-১২০টি এবং ভারতের কাছে ৯০-১১০টি, উত্তর কোরিয়ার কাছে ১০টি বোমা রয়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন টু অ্যাবোলিশ নিউক্লিয়ার ওয়েপনস(আইসিএএন) এর দেয়া তথ্যানুসারে, আরও প্রায় ৪০টি দেশ ক্রমাগত পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেই অনুযায়ী তারা অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং পরমাণু শক্তিধর দেশগুলোর সঙ্গে বাহাস চালিয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তানের সহায়তায় লিবিয়া যদিও মধ্যিখানে পারমাণবিক বোমা তৈরির চেষ্টা করেছিল কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের চাপে শেষমেষ সেই আশা ত্যাগ করতে বাধ্য হয় দেশটি।

ফোর্বেসের মতে, সিরিয়া ২০০৭ সালের আগে উত্তর কোরিয়ার সহায়তায় পারমাণবিক স্থাপনা তৈরির চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ইসরায়েলি বোমারু বিমান সিরিয়ায় হামলা চালিয়ে সেই স্থাপনা ধ্বংস করে দেয়। উন্নত দেশগুলো প্রতিবছর রাষ্ট্রীয় বাজেটের একটি নির্দিষ্ট অংশ ক্রমাগত বরাদ্দ দিয়ে যাচ্ছে পারমাণবিক সক্ষমতার পেছনে।

যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশগুলো এখনও নতুন নতুন পারমাণবিক বোমা বানাচ্ছে এবং অন্য যেসব রাষ্ট্র এই বোমা বানানোর চেষ্টা করছে তাদের নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। কিন্তু কতদিন এভাবে এই পৃথিবীকে ১৬ হাজার পরমাণু বোমার হাত থেকে রক্ষা করা যাবে।



মন্তব্য চালু নেই