‘পৃথিবীতে আমরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি’

ভারতের সঙ্গে স্থল সীমানা চুক্তি বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, পৃথিবীর কোনো দেশ শান্তিপূর্ণভাবে এভাবে ভূমি বিনিময় করতে পারেনি। তিনি বলেন, এবার টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা-এসডিজি পূরণ করে আরেকটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চায় বাংলাদেশ।

দুপুরে বিসিএস প্রশাসন একাডেমিতে চলমান আইন ও প্রশাসক কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

দেশবাসীর আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের নেতা নানা প্রকল্পের বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যাবে সরকার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে, এসডিজি (জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) আমাদেরকে বাস্তবায়ন করতে হবে। এই লক্ষ্য নিয়ে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আমরা একজন মুখ্য সমন্বয়ক নিয়োগ দিয়েছি যিনি আগে আমার প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি ছিলেন। তাকেই আমি দায়িত্ব দিয়েছি যে এসডিজি বাস্তবায়ন করে সারা বিশ্বে আমরা আরেকটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এমডিজি (জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) আমরা বাস্তবায়ন করেছি। আমরা বিশ্বাস করি এটাও আমরা পারবো।

আঞ্চলিক সহযোগিতা

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের যেহেতু ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে, দেশে পণ্যের বাজার বাড়ছে। আঞ্চলিক সহযোগিতাও সরকার বৃদ্ধি করেছি। বাংলাদেশ, ভারত নেপাল-ভুটানের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ, মিয়ানমার, চীন ও ভারত-এই চার দেশের মধ্যে করিডোর বাস্তবায়ন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে। ব্যবসা বাণিজ্য বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হচ্ছে। দেশের অর্থনীতি উন্নত হওয়া শুরু করেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য শুধু বাংলাদেশ না, এর আশেপাশের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে উন্নয়নকে তরান্বিত করা।’

শান্তিপূর্ণ ভূমি বিনিময়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের সঙ্গে স্থল সীমানা নিয়ে আমাদের সমস্যা ছিল। জাতির পিতা স্থল সীমানা চুক্তি করে আইনও করে গিয়েছিলেন ১৯৭৪ সালে। কিন্তু ৭৫ এর পর আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কোনো সরকার ভারতের সঙ্গে বিশাল সীমানা নিয়ে সমস্যার সুরাহা করেনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকারে আসার পর পর এর উদ্যোগ নেই। আমরা ম্যাপে সীমানা চিহ্নিত করি। আমরাই পৃথিবীতে একমাত্র প্রতিবেশী যারা যারা ছিটমহল বিনিময় করলাম। পৃথিবীতে কোনো দেশ এভাবে শান্তিপূর্ণভাবে পৃথিবীর কোনো দেশ ছিটমহল বিনিময় করতে পারেনি। পৃথিবীর কাছে আমরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি।’

২০১৫ সালের ৩১ জুলাই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় শুরু হয়। বাংলাদেশের ভেতর ভারতের ১১১টি এবং ভারতের ভেতর বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল বিনিময় হয়। এই ভূমি বিনিময়ে ভালবান হয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে পায় ১৭ হাজার ২৫৮ একর জমি। আর বাংলাদেশ থেকে ভারত পায় সাত হাজার ১১০ একর জমি।

সমুদ্র সীমানা নিয়ে বিরোধ মীমাংসায় সরকারের ভূমিকা আবারও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র সীমা নিয়ে সমস্যা ছিল, আমরা সেটা সমাধান করেছি। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেও আমরা আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে জয়ী হয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘বিশাল সমুদ্র সীমার সম্পদ কাজে লাগাতে হবে। এ জন্য ব্লু ইকোনমি আমরা নীতিমালা গ্রহণ করেছি।’

কর্মসংস্থানের ওপর গুরুত্বারোপ

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার উন্নয়নের একটি বড় পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমি যে পদক্ষেপগুলো নেই, আগে চিন্তা করি কর্মসংস্থানটা কোথায় বাড়বে। সে জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে শুরু করে টেলিযোগাযোগ, ব্যাংক-বিমা খাত উন্মুক্ত করে দিয়েছি। বাংলাদেশে ১০০টা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। এগুলোতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। কোন কোন এলাকায় কোন কোন কাঁচামাল উৎপাদন হয়, সেই চিন্তা করে সেই ধরনের শিল্প গড়া হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ আমাদের ঘোষণা ছিল। এ নিয়ে অনেকেই আমাদেরকে নানা ধরনের ঠাট্টা তামাশাও করেছে। আজকে এটা বাস্তব। আজকে সমগ্র বাংলাদেশে ইন্টারনেট সার্ভিস আছে। আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটও উৎক্ষেপন করছি।’

পদ্মাসেতু নিয়ে অভিযোগ প্রমাণ হয়নি

পদ্মাসেতু নিয়েও কথা বলেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘একটা সমস্যা হয়েছিল ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সাথে। তারা মনে করে দরিদ্র দেশ পেলেই তারা চাপ দিয়ে কিছু কথা স্বীকার করিয়ে নেবে। যখন দুর্নীতির প্রশ্নটা উঠলো, আমি চ্যালেঞ্জ দিলাম, বললাম, কোথায় দুর্নীতি তা আমাকে দেখাতে হবে। মুখে বললে হবে না। আমি জানতে চাই। তারা প্রমাণ করতে পারেনি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কথা ছিল আমরা নিজস্ব অর্থায়নে এই পদ্মাসেতু করবো। এখন নিজস্ব অর্থায়নে আমরা পদ্মাসেতু করছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদেরকে এক সময় বিশ্বে অবহেলা করতো। বাংলাদেশ বললেই বলতো দরিদ্র দেশ, ঘূর্ণিঝড় হয়, জ্বলোচ্ছ্বাস হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ, এ রকম কথা শুনতে হতো। আমরা এসব ক্ষেত্রে আমাদের দক্ষতার প্রমাণ দিতে সক্ষম হয়েছি। কাজেই যখন আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু বাস্তবায়ন শুরু করলাম, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্বে উজ্জ্বল করেছি। তারা এখন জানে, যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ পারে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি, কারও কাছে মাথা নওয়াবো না। আমাদের যে সম্পদ আছে, সেই সম্পদ নিয়েই আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে পারি, সে সক্ষমতা আমাদের আছে। সে বিশ্বাস আমাদের সকলের মধ্যে থাকতে হবে।’

চলতে হবে আত্মবিশ্বাস নিয়ে

নিজেদেরকে আত্মবিশ্বাসী জাতি হিসেবে উড়ে উঠার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। বলেন, ‘সব সময় আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলতে হবে, এই দেশ আমাদের, আমরা স্বাধীন করেছি, আমরা বিজয়ী জাতি, যে কোনো অবস্থা, যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করে যে কোনো উন্নয়ন আমরা করতে পারবো। আত্মবিশ্বাসই মানুষকে মানসিক শক্তি যোগায়। এবং কর্মক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন হয়। প্রতিবন্ধকতা আসবে, বাধা আসবে, সেসব বাধা অতিক্রম করার মতো আত্মবিশ্বাস আমাদের থাকতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে। গতানুগতির ধ্যান ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। বরং বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা কীভাবে চলতে পারি, এ ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা সবার মধ্যে থাকতে হবে।’



মন্তব্য চালু নেই