পুলিশের ঈদ: মা সারাদিন না খেয়ে আছে, বউ করেছে অভিমান

সন্ধ্যা ৭টা। রাজধানীর একটি পুলিশ চেকপোস্ট। মলিন চেহারায় ডিউটি করছেন বেশ কয়েক জন পুলিশ সদস্য। সন্দেহভাজন কিছু দেখলেই সিগন্যাল দিচ্ছেন। তল্লাশি করে আবারও আগের জায়গায় দাঁড়াচ্ছেন। মাঝে মাঝে নিজেদের মধ্যে কিছু কথা বলছেন। কিন্তু কি বলছেন সেটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।

দৃশ্যটি শ্যামলী লিংক রোডের হক সাহেবের গ্যারেজের সামনের। সেখানে ডিউটি করছেন আদাবর থানা পুলিশের একটি টিম। কাছে গিয়ে পরিচয় হলে জানা গেলো এসআই কবির হোসেনের নেতৃত্বে টিমটি রাজধানীবাসীর নিরাপত্তার জন্য কাজ করছে। ৩৩তম ব্যাচের আউটসাইড ক্যাডেট কবির হোসেন। চাকরিতে যোগদান করেছেন ২০১২ সালে।

চেহারা মলিন, কোনো সমস্যা কি না জানতেই চাইলে এসআই কবির বলেন, ‘বাড়িতে বৃদ্ধ মা-বাবা। আশা করে থাকে, বছরের একটা দিন অন্তত সন্তানদের কাছে পাবে। কিন্তু সেটাও হয় না। মানুষের নিরাপত্তার কথা ভেবেও সারাবছর যেমন বাড়ি যাওয়া হয় না, তেমনই ঈদেও হয় না।’

‘মা সারাদিন না খেয়ে শুয়ে আছে। দু’বার ফোনে কথা বলেছি। কিন্তু কিছুতেই শুনছে না। তার একই কথা তুই বাড়ি চলে আয়। কিন্তু কীভাবে যাবো বলেন? দেশের যে অবস্থা। গুলশানের ঘটনা শেষ না হতেই ঈদের দিন আবার শোলাকিয়ায় পুলিশের ওপর হামলা।’

কথাগুলো বলতে বলতে গলাটা একটু ভারি হয়ে এলো তার। খানিকটা কেশে নিলেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। বললেন, ‘মায়ের সাথে কথা বললেই মনটা ভীষণ খারাপ হয়। আর থাকতে ইচ্ছে করে না। মন চায় সব ফেলে মায়ের কাছে ছুটে চলে যাই।’

‘আবার এখানেও যে পরিবারকে সময় দেবো, সেটাও হয় না। বউ-বাচ্চা কান্নাকাটি শুরু করেছে, ঘরে থাকতে চায় না। কিন্তু কীভাবে যাবো? ডিউটি শুরু করেছি সকাল ৮টায়, শেষ হবে পরদিন সকাল ৮টায়। অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টা।’ বলেন এসআই কবির।

সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা নেই। তারপরও কিছুটা সমবেদনা জানিয়ে আলাপ শুরু হলো। জানা গেলো, চাকরিতে ঢুকে নতুন বিয়ে করেছেন তিনি। ঘর আলো করে এসেছে একটি ছেলে সন্তান। নাম মুস্তাভি এলাহী মুন্না। বয়স ১৪ মাস। বাসায় বউ একা একা সারাদিন বাচ্চা সামলাতে পাগল হয়ে যায়। বিকেলে সেও খুব করে বায়না ধরেছিল বাইরে ঘুরতে যাওয়ার। কিন্তু সেটাও হয়নি। এসব মিলেই মনটা ভীষণ খারাপ। তবে এমনটা শুধু এসআই কবিরের বেলাতেই নয়, ঈদের ছুটিতে রাজধানীর নিরাপত্তায় থাকা দশ হাজার পুলিশ সদস্যের।-বাংলামেইল



মন্তব্য চালু নেই