‘পুলিশকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে’

থানা পুলিশের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও গ্রেফতার বাণিজ্য নিয়ে অনেক কথা হয়েছে, পত্র-পত্রিকায় লেখালেখিও হয়েছে বিস্তর। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই অভিযোগটিই এবার আমলে নিল সরকার। থানা পুলিশের অনিয়ম, দুর্নীতি আর ওপেন সিক্রেট ঘুষ-গ্রেফতার বাণিজ্যের এবার বুঝি অবসান হতে চলল। সরকার থানাপুলিশ প্রশাসনকে ঢেলে সাজাতে যেসব ইতিবাচক পদক্ষেপ নিচ্ছে এটি হচ্ছে সবচেয়ে বড় উদ্যোগ। এরই অংশ হিসেবে প্রথমে মামলার তদন্ত থেকে থানা পুলিশকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে পুলিশের নবগঠিত বিশেষায়িত তদন্ত ইউনিট ‘পুলিশ ব্যুারো অব ইনভেস্টিগেশন’ বা পিবিআই।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, সারা দেশের বিভিন্ন থানা পুলিশ ডিবি এবং সিআইডি কর্মকর্তাদের কাঁধে জমে আছে পাহাড়সম মামলার তদন্তকাজ। রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং দৈনন্দিন কাজের চাপে থানার তদন্ত কর্মকর্তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে মামলাগুলোর তদন্তকাজ শেষ করতে পারছেন না। এমনি অবস্থায় থানা পুলিশের ওপর মামলার তদন্তের চাপ কমাতে শীঘ্রই আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করতে যাচ্ছে পিবিআই। এটি একটি স্বতন্ত্র স্বয়ংসম্পূর্ণ আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর তদন্ত সংস্থা হিসেবে কাজ করবে। তদন্তের জন্য পাওয়া মামলার দ্রুত গ্রহণযোগ্যতা এবং বস্তুনিষ্ঠ তদন্ত নিশ্চিত করবে পিবিআই।

ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা লাভের জন্য তারা এরই মধ্যে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের বিভিন্ন থানায় জেলা পুলিশের পাশাপাশি পিবিআই মামলা তদন্ত শুরু করেছে। এই ইউনিট মূলত খুন, ডাকাতি, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়, চোরাচালান ও কালোবাজারি, মানব পাচার, সাইবার ক্রাইম, ধর্ষণ, অস্ত্র এবং বিস্ফোরক দ্রব্য সংক্রান্ত মামলাগুলো তদন্ত করবে। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, পিবিআই এর প্রস্তাবিত বিধিমালা প্রাথমিকভাবে সরকারের অনুমোদন হয়েছে। অপেক্ষায় রয়েছে চূড়ান্ত অনুমোদনের। বর্তমানে আবদুল গণি রোডে রেল ভবনের পাশে ডিএমপি কন্ট্রোল রুমের দোতলায় সদর দফতরের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ঢাকা আঞ্চলিক কার্যালয় করা হয়েছে উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের ১৪ নম্বর রোডের ৩৫ নম্বর বাড়িতে। সদর দফতরের জন্য ভবন খোঁজা হচ্ছে।

পিবিআইর জন্য এ পর্যন্ত জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৮৫৩ জন। একজন উপ মহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) হচ্ছেন পিবিআইর প্রধান। এ ছাড়াও থাকছেন দুজন অতিরিক্ত উপ মহাপুলিশ পরিদর্শক (এডিশনাল ডিআইজি), ছয়জন পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ৭০ জন। এরই মধ্যে ৬১ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার যোগ দিয়েছেন পিবিআইতে। দেশের প্রতিটি জেলায় একজন করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে পিবিআই-এর টিম কাজ করবে। তারাই মামলাগুলোর তদন্ত কাজ পর্যবেক্ষণ করবেন। প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু হচ্ছে ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, ফরিদপুর, রংপুর, বরিশাল, খুলনা ও রাজশাহীতে। ২০১১ সালের ২ অক্টোবর পৃথক তদন্ত ইউনিট পিবিআই গঠনের জন্য পুলিশ সদর দফতর থেকে এক হাজার ৩৫৪টি পদ সৃষ্টির প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

২০১২ সালের ২২ ডিসেম্বর পিবিআই গঠনের অনুমোদন পাওয়া যায়। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, তদন্ত একটি বিশেষায়িত ও টেকনিক্যাল পুলিশি কাজ। পুলিশের মধ্যে একটি পৃথক ও কার্যকরী তদন্ত ইউনিট গঠনের প্রয়োজনীয়তা এখন সময়ের দাবি। বর্তমানে সিআইডি তফসিলভুক্ত অপরাধসমূহের তদন্ত আইজিপির লিখিত নির্দেশে পরিচালনাসহ মামলা তদন্ত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বস্তুগত সাক্ষ্য যেমন হস্তরেখা, পদচিহ্ন, ব্যালেস্টিক, রক্তের দাগ রাসায়নিক পরীক্ষা প্রভৃতি বিষয়ে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞ মতামত দিয়ে থাকে। বর্তমানে থানা পুলিশেই মূলত মামলা তদন্ত করে থাকে। কিন্তু থানায় পর্যাপ্ত জনবল প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা চাহিদা অনুযায়ী না থাকায় এবং নানা ধরনের কাজে সবসময় ব্যস্ত থাকায় যথাযথ মনোযোগ ও একনিষ্ঠতায় তদন্ত কার্যক্রমের প্রত্যাশিত মান অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না।

তাই কার্যকর তদন্তের জন্য প্রয়োজন আধুনিক প্রযুক্তি ও পদ্ধতি গ্রহণে সক্ষম প্রশিক্ষিত বিশেষায়িত পৃথক তদন্ত ইউনিট। আমরা মনে করি বিশেষায়িত তদন্ত ইউনিট গঠন করা গেলে তদন্তের মান বৃদ্ধি পাবে এবং মামলায় সাজার হার অনেক বেড়ে যাবে। যা অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে সমাজে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। (সূত্র – বাংলাদেশ প্রতিদিন)



মন্তব্য চালু নেই